ঢাকামঙ্গলবার , ৭ মার্চ ২০২৩
  • অন্যান্য

বিসিবি’র সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবীতে এবার মাঠে নামলেন হিরো আলম

হাসান শাব্বীর
মার্চ ৭, ২০২৩ ৯:০৭ পূর্বাহ্ণ । ২২৩ জন
স্থানীয় ক্রীড়া সংস্থা এবং ক্রীড়া সংগঠকদের উপর বিরক্ত হয়ে এক সময়ের ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক ভেন্যু বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম ছেড়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

২০০৬ সালের ৩০ জানুয়ারি আইসিসি বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে ঘোষণা করে। একই বছরে স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক টেস্ট ভেন্যুর স্বীকৃতিও পায়।ওই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই ভেন্যুতে পাঁচটি ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হয়, যার চারটিতেই জয় লাভ করেছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। ২০০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এই মাঠেই টাইগাররা প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কাকে হারাতে সক্ষম হয়। একটি টেস্ট ম্যাচও গড়িয়েছিল স্টেডিয়ামটিতে যেখানে লঙ্কানদের কাছে ১০ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ।

এই মাঠে সবশেষ ইংল্যান্ড ‘এ’ দল এসে খেলে গেছে ২০০৭ সালের মার্চ মাসে (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে)। এরপর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এখানে কোনো আন্তর্জাতিক  ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি।

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে দেওয়া একটি চিঠিতে বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার অসহযোগিতার অভিযোগে মাঠ হস্তান্তরের কথা জানায় বিসিবি। একইসঙ্গে সেখানকার বিসিবির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢাকায় বদলি করেছে বিসিবি। বছরের পর বছর বিসিবিকে অসহযোগিতা করায় বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার উপর এক প্রকার বিরক্ত হয়েই মাঠ ছেড়ে যাচ্ছে দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।একদিন আগে বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ১৭ জন কর্মচারী-কর্মকর্তাদের স্টেডিয়াম ছেড়ে দিয়ে শনিবারের মধ্যেই ঢাকায় রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্টেডিয়ামে বিসিবির যেসব আসবাব-পত্র আছে সেগুলো ঢাকায় পাঠাতে বলা হয়েছে, জানিয়েছেন চান্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার মোঃ জামিলুর রহমান। ইতোমধ্যে তাদের  অনেকেকে  রংপুর  স্টেডিয়ামে সংযুক্ত করা  হয়েছে  ।

এই ঘটনার ২-৩ বছর আগেও এখানে জাতীয় ইভেন্ট ইয়ুথ ক্রিকেট লীগ হতে দেয়নি বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার লোকজন। ঢাকা থেকে খেলোয়াড় এসে প্রাকটিস করলেও পরে আর এই মাঠে খেলোয়াড়দের নামতে দেয়নি জেলা ক্রীড়া সংস্থার লোকজন, বলছে বিসিবির একটি সূত্র। সূত্র অনুযায়ী, নানা রকমের অসহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি এই অসহযোগিতার বিষয়টি বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মিলনকে চিঠিতে জানিয়েছে বিসিবি,   বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা-ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বরত কর্মকর্তা।

আগামী ৮ মার্চ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বিসিবির ইয়ুথ ক্রিকেট লীগ। সূচি অনুযায়ী সেটা বগুড়া চান্দু স্টেডিয়ামেও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা গত ১ মার্চ থেকে এই স্টেডিয়ামে শুরু করেছে বগুড়া প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ। যা শেষ হবে আগামী ২৫ মার্চ। বিষয়টি নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এবং বিসিবি কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হলে বিসিবি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলছে সূত্র।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বগুড়ায় আন্তর্জাতিক ভেন্যু বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম ছেড়ে দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছে বগুড়ার সকল  শ্রেণী পেশার  মানুষ । শহরের সাতমাথায়ে  বগুড়া বাসীর আয়োজনে  এমন ব্যনোরে  মানববদ্ধন করেছেন  জেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি, বগুড়া প্রেসক্লাবের সহসভাপতি আব্দুস সালাম বাবু সহ প্রায়  শতাধিক সাবেক বর্তমান খেলোয়াড় ও  বিভিন্ন সংগঠনের  নেতৃবৃন্দ ।

শহীদ  চান্দু স্টেডিয়ামে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় স্টেডিয়াম চত্বরে বগুড়া এ আর সি স্পোর্টিং ক্লাবের ব্যানারে স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীরা মানববন্ধন করে।গণস্বাক্ষর   অভিযানও  অব্যাহত রয়েছে বগুড়া  জেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে  ।

 

এছাড়াও 

বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে জনবল প্রত্যাহারসহ ভেন্যু বাতিলের প্রতিবাদে মাথায় কাফনের কাপড় পরে দ্বিতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন মো. রুমেল নামের একজন যুবক। তিনি বগুড়া সদর এলাকার বাসিন্দা। ইউটিউব ভিডিও বানানো এই যুবক একজন ক্রিকেটভক্ত। একই দাবিতে বগুড়া জেলা বিএনপি আজ সোমবার বিকেলে শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ভেন্যু বাতিলের প্রতিবাদে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশার সভাপতিত্বে করা প্রতিবাদ সমাবেশে দলটির সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার বলেন, স্টেডিয়াম প্রত্যাহার বগুড়াবাসীকে অপমান। শহীদ চান্দুকে অপমান। আওয়ামী লীগ বগুড়াবাসীর শত্রু।

রেজাউল করিম বাদশা বলেন, শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার তৈরি হয়েছে। অথচ এ স্টেডিয়াম থেকে জনবল ও মালামাল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এটা অবৈধ আওয়ামী সরকারের বগুড়ার প্রতি স্বৈরাচারী আচরণ।

বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার বলেন, আওয়ামী লীগ কথায় কথায় বলে খেলা হবে। কিন্তু স্টেডিয়াম বন্ধ করে দিলে খেলা হবে কোথায়? জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মাসুদুর রহমান প্রভাব খাটিয়ে ১৪ বছর ধরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের পদ আঁকড়ে ধরে বসে আছেন। চেম্বার সভাপতির পদ আঁকড়ে আছেন। তাঁর ব্যর্থতা ও অসহযোগিতার কারণে বিসিবি স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ভেন্যু প্রত্যাহার করেছে। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে স্টেডিয়ামে আবার আন্তর্জাতিক ম্যাচ হবে।

এদিকে, বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে জনবল প্রত্যাহারসহ ভেন্যু বাতিলের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে তিনি এই সংবাদ সম্মেলনের কথা জানিয়ে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন।  তাঁর মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মাকে দেখতে আজ তিনি সকালে ঢাকা থেকে বগুড়ার পথে রয়েছেন। বগুড়ায় পৌঁছার পর বেলা ১১টায় শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ভেন্যু বাতিলের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করবেন। এ বিষয়ে বগুড়াবাসীর প্রতি সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণের প্রতিবাদ জানাবেন।

হিরো আলম অভিযোগ করেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বগুড়াবাসীকে উন্নয়নের মিথ্যা ফুলঝুরি শুনিয়েছেন। তার কথায় মনে হয়েছিলো, বগুড়াকে সিঙ্গাপুর বানাবেন। কিন্তু তিনি এমপি হতে না হতেই বগুড়াবাসীর কাছ থেকে তাদের প্রাণের শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত সরকারি দলের এমপি ও নেতারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। গেলো দেড় দশকে বগুড়া উন্নয়ন বঞ্চিত। স্টেডিয়াম চলে গেলো, বিমানবন্দরও ঝুলছে। বিভাগ ও সিটি করপোরেশন হয়নি। এখন শুধু বগুড়ার মাটি নিয়ে যাওয়া বাকি আছে।

বগুড়ার মানুষ এসব বঞ্চনা সহ্য করবে না জানিয়ে হিরো আলম বলেন, স্টেডিয়ামের ভেন্যু বাতিল করে বীর শহীদ চান্দুর আত্মত্যাগের অমর্যাদা করা হয়েছে। বগুড়ার মানুষ এই বঞ্চনা মুখ বুঝে সহ্য করতে পারে না। যৌক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ভেন্যু বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনে বিসিবিকে বাধ্য করা হবে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের  মর্যাদা   হারিয়েছে অনেক  আগেই । বগুড়ার ক্রিকেটকে ধ্বংস করে বগুড়ায় কোন ম্যাচ আয়োজন বন্ধ করেছে বিসিবি অনেক আগেই; বগুড়ায় ক্রিকেটকে কফিনবন্ধ করেছে বিসিবি ।     সর্বশেষ  ভ্যেনু   প্রত্যাহার    করে সেই কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে বিসিবি ।      বগুড়ার খেলোয়াড়, দর্শক ও ক্রীড়াসংগঠকসহ সাধারণ মানুষ বিসিবির এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন । নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন প্রতিদিন মানববন্ধন করছেন। দাবী আদায়  না  হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলছে চলবে বলে  জানিয়েছে বিভিন্ন ক্রীড়া, সামাজিক, স্বেচছাসেবী সহ নানা  সংগঠন ।