টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ধারণা করা হচ্ছিল, ব্যাটিং সহায়ক হবে উইকেট। কিন্তু মিরপুর শেরেবাংলা মাঠের উইকেট বলে কথা। রহস্য তো থাকবেই, বিশেষ করে ব্যাটারদের জন্য। শুরু থেকেই টাইগার ব্যাটারদের দেখা যায় দারুণ নড়বড়ে। ইংলিশ বোলাররা ক্রমেই চেপে ধরতে শুরু করে তাদের। তামিম ইকবাল, লিটন দাস আর সাকিব আল হাসানরা সাজঘরে ফিরে যান দলের বিপদ বাড়িয়ে। এই সময়টাতে একাই লড়াই করতে থাকেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অন্য প্রান্তে বড় কোনো সহযোগিতা না পেলেও তিনি তুলে নেন ১৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। তার এই ইনিংসেই দলের মানরক্ষা হয়।
তারপরই দলের জন্য ৩১ রানের অবদান রাখেন অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এই দু’জনের বিদায়ের পর অবশ্য খুববেশি দূর যেতে পারেনি টাইগারদের ইনিংসে। শেষ দিকে পেসার তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার তাইজুল ইসলাম ২’শ রানের সীমানা পার করেন। শেষ পর্যন্ত সবকটি উইকেট হারিয়ে টাইগারদের স্কোর বোর্ডে ২০৯ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে নিজেদের সেরাটা দিতে ব্যর্থ টাইগাররা। বলার অপেক্ষা রাখে না এই স্বল্প পুঁজিতে ইংলিশ ব্যাটারদের আটকে রাখা খুব সহজ বিষয় নয়।
লিটন ৭ রানে আউট হওয়ার পর দলের হাল ধরতে আসেন শান্ত। তিন নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেন তিনি। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে ক্যাচ দিয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পান তামিম। ইংল্যান্ড পেসার ক্রিস ওকসের বলে ঠিকঠাক খেলতে না পারায় নিচু ক্যাচ দেন তামিম। তবে নিচু হওয়া বলটি হাতে নিতে পারেননি বোলার ওকস। ইংল্যান্ডের আরেক পেসার জোফরা আর্চারের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দু’টি ও চতুর্থ ওভারে ফ্রি-হিটে ১টি বাউন্ডারি মারেন তামিম। ৪ ওভারের মধ্যে তামিমের ব্যাট থেকে ৩টি চার এলেও অন্যপ্রান্তে সাবধানী ছিলেন লিটন। ১০ম বলে এসে রানের খাতা খোলেন লিটন। পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে পুল করে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন তিনি। ওকসের করা পরের ডেলিভারিতেই লেগ বিফোর আউট হন লিটন। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি টাইগার ওপেনার। দলীয় ৩৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তার বিদায়ে উইকেটে আসেন শান্ত। প্রথম ১২ বলের মধ্যে ৩টি চার মারেন তিনি। ১০ম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমণে এসেই তামিমকে সাজঘরে পাঠান ইংলিশ পেসার মার্ক উড। উডের ১৪৯ কিলোমিটার গতির বল তামিমের কনুইয়ে লেগে স্টাম্পে আঘাত হানে। ৪টি চারে ৩২ বলে ২৩ রান করে বিদায় নেন তামিম। দলীয় ৫১ রানে তামিমকে হারানোর পর জুটি বাঁধেন শান্ত ও মুশফিকুর রহীম। স্পিনার মঈন আলীর বলে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারেন মুশফিক। সেখানে বল হাতে নিলেও বাউন্ডারির লাইনে পা লেগে যায় সল্টের। ছক্কার সঙ্গে ব্যক্তিগত ৮ রানে জীবনও পান তিনি। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি। আরেক স্পিনার আদিল রশিদের চতুর্থ বলে স্লগে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে উডকে ক্যাচ দেন ৩৪ বলে ১৬ রান করা মুশফিক। শান্তর সঙ্গে ৬২ বলে ৪৪ রানের জুটি মুশফিকের।
১০৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দলকে চাপমুক্ত করতে বড় জুটির চেষ্টা করেন শান্ত ও তাকে সঙ্গ দেন ছয় নম্বরে নামা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৩১তম ওভারের পঞ্চম বলে ১৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটির দেখা পান তিনি। ৩৫তম ওভারে বাংলাদেশের রান দেড়শ পার করে দলকে খেলায় ফেরান শান্ত ও মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু পরের ওভারে রশিদের বলে লেগ সাইড দিয়ে মারতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে জেসন রয়ের দারুণ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন শান্ত। ৬টি চারে ৮২ বল খেলে ৫৮ রান করেন শান্ত। তারপর দলের বিপদ বাড়িয়ে আউট হন মাহমুদুল্লাহ। ৩টি চারে ৪৮ বলে ৩১ রান করেন তিনি।
পরপর দুই ওভারে দুই সেট ব্যাটার শান্ত ও মাহমুদুল্লাহকে হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ১৬২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় টাইগাররা। টেল-এন্ডারে বাংলাদেশের দুই ভরসা আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজও দ্রুত প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। আফিফকে ৯ রানে বিদায় দেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা অকেশনাল স্পিনার উইল জ্যাকস। মিরাজকে ৭ রানে থামান আর্চার। ১৮২ রানে অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। এতে ২শর নিচে গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে টাইগাররা। কিন্তু সেটি হতে দেননি তাসকিন আহমেদ ও তাইজুল ইসলাম। নবম উইকেটে ২৫ বলে ২৬ রানের জুটি গড়েন তারা। ২শ রান স্পর্শ করে বাংলাদেশ। ৪৭তম ওভারে তাসকিনকে ১৪ রানে থামিয়ে জুটি ভাঙেন আর্চার। ১৮ বল খেলে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন তাসকিন। পরের ওভারে মঈনের বলে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন তাইজুল। ১৩ বলে ১০ রান করেন তিনি। ৪৭ দশমিক ২ ওভারে ২০৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের আর্চার-উড-মঈন ও রশিদ ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে শিকার ওকস ও জ্যাকসের।