ঢাকামঙ্গলবার , ১৬ মে ২০২৩
  • অন্যান্য

জাবি বহিষ্কৃত ২ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

অনলাইন ডেস্ক
মে ১৬, ২০২৩ ৩:১৮ অপরাহ্ণ । ৯৯ জন
ছবি : সংগৃহীত

ব্যবসায়ী ও ইউপি সদস্যকে মারধরের ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙের অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাব্বির হোসেন নাহিদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান জয়ের বিরুদ্ধে এবার চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।

সাব্বির হোসেন নাহিদ নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র। মেহেদী হাসান জয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও মওলানা ভাসানী হলের আবাসিক ছাত্র। তারা উভয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২২ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গোকুলনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে সাত দিনের গ্রাম্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়। খোলা নিলামে চার লাখ ৬৩ হাজার টাকায় এই মেলার ইজারা নেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা রনি আহমেদ। রনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের অধীনে চাকরি করেন। মেলা শুরুর আগে থেকে বিভিন্ন সময় সাব্বির ও মেহেদী রনিকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে দেখা করতে চান। তবে বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি রনি।

এদিকে দেখা না করায় গত ২১ এপ্রিল রাতে সাব্বির ও মেহেদী গোকুলনগরের স্থানীয় দুই ব্যক্তির সহযোগিতায় রনিকে তুলে নিয়ে জাবি স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে এনে মারধর করেন। মারধরের সময় তারা দেখা না করার কারণ জানতে চান। এ সময় তারা রনির কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মেহেদী আরেক দফা মারধর করেন। এ সময় তারা উভয়ই রনির কাছে থাকা নগদ ২৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া রনিকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তার ছোট ভাইকে ফোন করে বিকাশে আরও ২৫ হাজার টাকা আদায় করেন।

ভুক্তভোগী রনি আহমেদ বলেন, ঈদের আগের রাতে (২১ এপ্রিল) ছাত্রলীগের সাব্বির ও মেহেদী আমাকে মেলার গেট থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে কলেজ মাঠে ব্যাপক মারধর করে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আরও মারধর করে। এ সময় আমার কাছ থেকে মোট ৫১ হাজার টাকা আদায় করার পর ছাড়ে ও ক্যাম্পাসে আসতে নিষেধ করে। আমাকে যেহেতু কাজের জন্য ক্যাম্পাসে আসতে হবে এজন্য এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ কয়েকজন শিক্ষককে তখনই জানিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, রনি আহমেদ যেই শিক্ষকের গাড়ি চালান তিনি আমাকে কল দিয়ে বলেছিলেন যে রনির সঙ্গে এলাকায় মেলার দায়িত্ব নিয়ে ক্যাম্পাসের দুজন ছাত্রের ঝামেলা হয়েছে। ঝামেলার কারণে তারা নাকি তাকে ক্যাম্পাসে আসতে নিষেধ করেছে। পরে ছাত্রদের বলেছি তাকে ক্যাম্পাসে আসতে বাধা দিলে এটি ছাত্র শৃঙ্খলার লঙ্ঘন হবে। পরে এ বিষয়ে রনি ও ছাত্রদের সঙ্গে আর কথা হয়নি। তারাও আমাকে আর কিছু জানায়নি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাব্বির হোসেন নাহিদের কাছে জানতে চাইলে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না এবং আমি তাকে চিনিও না। যে অভিযোগ দিয়েছে সে অবশ্যই অমূলক অভিযোগ দিয়েছে। আমি কোনো টাকা-পয়সা এবং কোনো কিছুই নিইনি। এর সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

অপর অভিযুক্ত মেহেদী হাসান জয়ের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমি অবগত নই। ওরা ইতোমধ্যে সাময়িক বহিষ্কারে আছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, বিভিন্ন অভিযোগে তাদের একবার সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আবারো তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।

এর আগে গত ৫ মে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামনগর এলাকায় এক জুতার দোকানের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীকে মারধর করেন অভিযুক্ত সাব্বির ও মেহেদী। এর এক দিন পরই ৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাঙামাটি এলাকায় পাথালিয়া ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যকে মারধর করেন তারা। এ ঘটনার জেরে গত ৭ মে সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থি, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কাজে জড়িত থাকার দায়ে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

কেন্দ্র থেকে সাব্বির ও মেহেদীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলেও তারা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছেন। এখনো অবস্থান করছেন ছাত্রলীগের ব্লকে।