ঢাকামঙ্গলবার , ১৪ মার্চ ২০২৩
  • অন্যান্য

মেডিকেলে চান্স পাওয়া মেয়ের ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় নরসুন্দর বাবা

স্টাফ রিপোর্টার
মার্চ ১৪, ২০২৩ ১২:৪০ অপরাহ্ণ । ২৩৭ জন
ছবি: সংগৃহীত

নাজিরা সুলতানা নিছা ; মা-বাবা’র  দ্বিতীয়  কন্যা  সন্তান । সরকারী  মুজিবুর  রহমান  মহিলা  কলেজ  থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন । দীর্ঘপথ  পাড়ি  দিয়ে পড়াশোনা  শেষে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে আবেদন করেন  মেডিকেল  কলেজে  । ভর্তি পরীক্ষায়  অংশ নিয়ে  বগুড়ার  মেয়ে   নাদিরা   উত্তীর্ণ  হয়েছেন ।  সিলেট এম এ জি   ওসমানি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ।

শিক্ষানগরী বগুড়ায় অভিভাবকরা সন্তানদের  নিয়ে  আসেন উচ্চ শিক্ষার  পথ সুগম  করতে । অন্য  অভিভাবকদের  মতো  নাদিরার বাবা-মা  খুব বেশী শিক্ষিত নন । পেশায় তারা সমাজের  দলিত শ্রেণীর   মানুষ । নাজিরার বাবা নজরুল ইসলাম বগুড়া সদরের এরুলিয়া এলাকায় নাপিতের  কাজ করে সংসারের ভরণপোষণের পাশাপাশি সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করছেন।বড় মেয়েটি পড়ালেখা করতে করতে হঠাৎ মৃত্যুবরণ করে। দ্বিতীয় মেয়ে নাজিরা সুলতানা এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পেয়েছে সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজে। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী নাজিরা পড়ালেখা করেছে বগুড়া সদরের ছয় পুকুরিয়া স্কুলে। সেখান থেকে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন।

ছোট মেয়ে নাফিসা সুলতানা পড়াশোনা করছেন শিববাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্ত্রী, দুই মেয়েকে নিয়ে নিয়ে চার সদস্যের সংসার তার। পৈত্রিক ভিটেমাটি, একটি দোকানই তার সম্বল । বড় মেয়েটিকে ভাল একটি জায়গাতে পড়াতে চেয়েছিলেন, কিন্তু অনাকাঙ্খিত কারণে পারেননি। সেই আক্ষেপ আজও তাড়া করে বাবাকে ।

মেয়েদের পড়ালেখার জন্য শহরের শিববাটিতে ভাড়া বাসা নিয়েছেন । বড় মেয়েটি পড়ালেখা করতে করতে হঠাৎ মৃত্যুবরণ করে। দ্বিতীয় মেয়ে নাজিরা সুলতানা এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পেয়েছে সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজে। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী নাজিরা পড়ালেখা করেছে বগুড়া সদরের ছয় পুকুরিয়া স্কুলে। সেখান থেকে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন। এরপর সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে এইচএসসি পাস করেন ।

তখন থেকেই মনের মধ্যে জেদ তৈরি করেন অন্য সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন তিনি। নিজের সব কিছুর বিনিময়ে হলেও সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করবেন। মেডিকেলে চান্স পাওয়া নাজিরা বলেন, ‘মেডিকেলে ভর্তি পরিক্ষায় চান্স পেয়ে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। যে কথাটি না বললেই নয় তাহলো যার অনুপ্রেরণায় আমার এ সফলতা তিনি হলেন আমার বাবা। যিনি আমাকে পড়ালেখা করাবেন বলে সারাদিন পরিশ্রম করে রোজগার করেন। পাশাপাশি আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ডাক্তার হওয়ার। আমাদের পরিবারটি অনেক কষ্ট করে চলে কিন্তু তা বাবা আমাকে এক সেকেন্ডের জন্যও বুঝতে দেইনি। আমরা বুঝতে পারলেও বাবা কোনোভাবে বুঝতে দিতেন না। তিনি আরও বলেন, বাবার পাশাপাশি মা অনেক পরিশ্রম করেছেন ।

নাজিরা  বলেন  – ‘আমাদের মতো দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরা স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই। তবে আমি মনে করি, দারিদ্র্যতা সফলতার অন্তরায় না। স্বপ্ন আর পরিশ্রম একসঙ্গে করলে সফল হওয়া সম্ভব। আমারও পরিশ্রম সফল হয়েছে। আর ফলাফলে বাবা-মা যে খুশি হয়েছে এটাই আমার বড় স্বার্থকতা।’

সাধারণ  নিম্নবিত্ত  পরিবারের    শিক্ষার্থীদের  উদ্দ্যেশ্যে  নাজিরা গণমাধ্যমে  বলেন – আমি আমার  এক  বড় বোনের মেডিকেলে  সুযোগ  পাওয়া  দেখে  অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম ,  সর্বেোচ্চ  সাধ্যমতো চেষ্টা  করেছি  । আমার  বাবার  পেশা’েকে  সমাজে  অনেক  খাটো  চোখে  দেখা  হয় ।  ।কেজন নাপিতের  মেয়ে  হয়ে  যদি  আমি এতদূর  আসতে  পারি  তাহলে  অন্যরাও  পারবে। আমি  বিশ্বাস করি  পারিবারিক  অবস্থান  নয় ব্যক্তিচেষ্টা মানুষকে সফল করে ।

নাজিরার বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, মেয়ের পড়ালেখার জন্য টাকার অভাবে খুব বেশি প্রাইভেট দিতে পারেননি। তবুও স্বপ্ন দেখেছি সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করব। মেয়েকে কখনও অভাব বুঝতে দেয়নি। বলেছি তোমার কাজ পড়ালেখা করা । তিনি আরও বলেন, তার খুব বেশি সহায় সম্বল নেই । একটা ছোট দোকান আর ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই। তারপরও আমি অনেক খুশি। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, ডাক্তারি পড়ালেখার অনেক খরচ। আমি চেষ্টা করব আমার সাধ্যমতো খরচ দেওয়ার। তবে যদি পড়ালেখার এই দীর্ঘ সময়ে সরকার ও হৃদয়বান মানুষের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়, তাহলে আমার কষ্টটা কম হবে ।