ইউক্রেনে মানবতাবিরোধী অপরাধ চালানোর দায়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে তার ভিত্তিতে পুতিনকে গ্রেপ্তার করা যাবে কি না, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক জল্পনা শুরু হয়েছে। এদিকে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যদিও এ পরোয়ানাকে অর্থহীন বলছে রাশিয়া। আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আইসিসির এ পরোয়ানাকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছেন। খবর বিবিসির।
ইউক্রেনে ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারিতে হামলা করার পর থেকেই দেশটিতে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। ইউক্রেনের শিশুদের জোরপূর্বক সেদেশ থেকে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তার দপ্তরের শিশু অধিকারবিষয়ক কমিশনার মারিয়া আলেক্সেভনা লোভা-বেলোভার বিরুদ্ধে শুক্রবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আইসিসি।
এ আদালত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলে ‘জোরপূর্বক ইউক্রেনের নাগরিকদের (শিশুদের) রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে পুতিনের বিরুদ্ধে।’
এর আগের দিন জাতিসংঘের সহযোগিতায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। আর এর পরদিনই পুতিনের বিরুদ্ধে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। এর পর থেকেই প্রেসিডেন্ট পুতিনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। মূলত গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধের বিচার করতে আইসিসি গঠন করা হয়েছিল। বিশ্বের ১২৩টি দেশ এই আদালত গঠন সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করলেও রাশিয়াসহ বহু দেশ এতে স্বাক্ষর করেনি। অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি বা পক্ষকে যখন একটি দেশের কর্তৃপক্ষ বিচারের আওতায় আনতে পারে না অথবা আনতে চায় না, তখন পশ্চিমা দেশগুলোর অনুমোদনক্রমে হস্তক্ষেপ করে আইসিসি। তবে আইসিসির হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকলেও কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার মতো ক্ষমতা বা বাহিনী এই আদালতের নেই। পশ্চিমা দেশগুলো সহযোগিতা করলেই কেবল আইসিসি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে তাকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে এই আদালতে বিচারের জন্য হাজির করতে পারে। কিন্তু আইসিসি তার বিচারিক ক্ষমতা শুধু সেসব দেশে প্রয়োগ করতে পারে, যে দেশগুলো এই আদালত গঠন করার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তিটি রোম সংবিধি নামে পরিচিত। রাশিয়া এই সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি। তাই পুতিনকে গ্রেপ্তার করে এই আদালতের হাতে সমর্পণের কোনো সুযোগই নেই। একই সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া আলেক্সেভনা লোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আইসিসি জারি করে, তা কার্যকর করার এখতিয়ারও এই আদালতের নেই।
স্বাগত জানিয়েছেন বাইডেন : এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আইসিসির এ পরোয়ানাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তার বিরুদ্ধে যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, তা ন্যায্য। শুক্রবার আইসিসির পরোয়ানার জারি পরপরই তিনি এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন।
পুতিনকে ইঙ্গিত করে সাংবাদিকদের বাইডেন বলেন, ‘তিনি স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধ করেছেন। আমার মনে হয় (গ্রেপ্তারি পরোয়ানা) ন্যায্য। কিন্তু বিষয় হচ্ছে, আমরা বা রাশিয়া কেউই ওই আদালতকে স্বীকৃতি দেইনি, তার পরও আমি মনে করি, এই পরোয়ানা একটি শক্তিশালী পয়েন্ট দাঁড় করিয়েছে।’ এ ছাড়া পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে এক প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ। এর মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক দায়িত্বের সূচনা ঘটবে।
অন্যদিকে আইসিসির এ পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্তকে আইনত অকার্যকর বলেছে ক্রেমলিন। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মস্কো নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক আদালতকে স্বীকৃতি দেয় না। পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে আরও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। টুইটারে তিনি এই পরোয়ানাকে ‘টয়লেট পেপার’ বলেন। তবে রাশিয়ার বিরোধীরা পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া অন্য অনেক দেশের মতো এই আদালতকে স্বীকৃতি দেয় না। তাই আদালতের সিদ্ধান্ত বাতিল। রাশিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সদস্য নয়। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, আইসিসির সিদ্ধান্তের কোনো অর্থই নেই রাশিয়ার কাছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে তিনি বলেন, রাশিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধির পক্ষে নয়। এর অধীন কোনো কিছু মেনে চলতে রাশিয়া বাধ্য নয়। জাখারোভা পুতিনের নাম উল্লেখ না করে বলেন, রাশিয়া আইসিসিকে সহযোগিতা করে না। আইসিসির কোনো সিদ্ধান্ত রাশিয়া আইনত অকার্যকর বলে মনে করে।