ঢাকাসোমবার , ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • অন্যান্য

মালয়েশিয়াতে দিন দিন

অনলাইন ডেস্ক:
এপ্রিল ২৯, ২০২৪ ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ । ১২ জন

মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ। শ্রমিক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও নানা পেশা মিলিয়ে প্রায় ১৫ লাখ প্রবাসী রয়েছে এখানে। এই বড় অংশের প্রবাসীদের টাকা পাঠানো ও টাকা আনার প্রয়োজন পড়ে প্রতিদিন। মালয়েশিয়া থেকে রেমি্যোন্স পাঠানোর পরিমাণ কম নয়।
চলতি বছরের মার্চ মাসে মালয়েশিয়া থেকে ১২ কোটি ২৩ লাখ ডলার বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। তা সত্ত্বেও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত এই বিশালসংখ্যক প্রবাসীর তুলনায় রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণকে কম বলছেন রেমিট্যান্স হাউসের কর্মকর্তারা।বৈধ পথে যেন প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠান সে উদ্দেশ্যে হাউসগুলো হাইকমিশনের যৌথ উদ্যোগে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে প্রচার-প্রচারণা সভার আয়োজন করছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য অগ্রণী ব্যাংকের হিসাবে টাকা পাঠালে সরকারঘোষিত ২ দশমিক ৫ শতাংশের অতিরিক্ত আরো ২ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ সর্বমোট ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্বের ৩০টি দেশ থেকে রেমিট্যান্স আসা দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া পঞ্চম স্থানে থাকলেও সরকারি প্রণোদনা বাড়িয়েও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাড়ানো যাচ্ছে না।সাম্প্রতিক সময়ে, ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিতের দরপতন, হুন্ডিতে আয় পাঠালে প্রতি ডলারে পাঁচ-ছয় টাকা বেশি পাওয়ায় হুন্ডির পথে ঝুঁকছেন প্রবাসীরা। এ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন রেমিট্যান্স হাউসের কর্তারা।
তারাঁ বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এ শঙ্কা থেকে উওরণের পথ খুঁজছেন তাঁরা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মালয়েশিয়াপ্রবাসী শ্রমিক বলেন, ‘আমরা কষ্ট করে টাকা আয় করি। ব্যাংকে টাকা পাঠালে আমরা কম টাকা পাই, আবার পাঠানোর জন্য আলাদা করে ফি দিতে হয়। তার ওপর ব্যাংক দূরে, অনেক ঝামেলা লাগে।হুন্ডিতে টাকা বেশি পাওয়া যায় আবার ঝামেলামুক্ত।’
মালয়েশিয়ায় অনেক শিক্ষার্থী পড়তে আসেন। তাঁরা জানান, এখানে তাঁদের টিউশন ফি দিতে হয়। দেশ থেকে তাঁদের টাকা আনতে হয়। বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকে স্টুডেন্ট ফাইল ওপেন করা বন্ধ থাকে, ফলে তাঁদের বাধ্য হয়ে হুন্ডিতে টাকা আনতে হয়। ইউনিভার্সিটিগুলো ডলারের রেটের তুলনায় লোকাল কারেন্সি রেট টাকায় কম পড়ে, যার ফলে হুন্ডিতেই সুবিধা হয়।ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশিরা অনেকেই এখানে কম্পানি খুলে ব্যবসা চালাচ্ছেন। এখানে ব্যবসার জন্য তাঁদের রিঙ্গিত প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশি বিনোয়োগের টাকা আনার তেমন সুযোগ নেই। এমনকি অনেকে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড-হোম নিচ্ছেন। যাঁরা পার্মানেন্ট রেসিডেন্ড নিচ্ছেন তাঁদের বড় অঙ্কের টাকা এখানে বিনিয়োগ করছেন, যার বেশির ভাগই আসে হুন্ডির মাধ্যমে। এখানে ম্যানপাওয়ার ব্যবসায় কলিং ভিসা করতে এজেন্টগুলোকে ফি পরিশোধ করতে হয়। লাখ লাখ শ্রমিকের বিশাল পরিমাণ টাকার অধিকাংশ আসে হুন্ডির মাধ্যমে। এ ছাড়াও মালয়েশিয়াতে অনেকে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। যাঁদের ভিসার মেয়াদ নেই তাঁরা ইচ্ছা করলেও বৈধভাবে টাকা পাঠাতে পারেন না।অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউস এসডিএনবিএইচডির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিচালক সুলতান আহমেদ বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলের সাথে হুন্ডির পার্থক্য বেশি হওয়ায় রমজান এবং ঈদের মাস হওয়া সত্ত্বেও চলতি বছরের মার্চের তুলনায় এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স কমে আসছে।

চলমান ডলারের বিপরীত রিঙ্গিতের দরপতন এবং রিঙ্গিতের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্স কমে আসছে বলে মনে করেন এনবিএল মানি ট্রান্সফার মালয়েশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলী হায়দার মর্তুজা।

তিনি বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে গত মার্চ মাসে এনবিএল মানি ট্রান্সফার থেকে দুই কোটি ১২ লাখ ডলার প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠালেও চলতি মাস (ঈদের মাস) হওয়ার পরও গত মাসের তুলনায় কম।

প্লাসিড মানি এক্সচেঞ্জের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, রেমিট্যান্স খাতে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, সেটা কাটিয়ে উঠতে প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে। তবে এই মুহূর্তে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ চ্যানেলে প্রেরিত রেমিট্যান্সের বিপরীতে আরো প্রণোদনা বাড়ানো উচিত। প্রণোদনা বাড়ালে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রবাসীরা বেশি উৎসাহ পাবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী বলেন, প্রণোদনার চেয়েও বেশি টাকা পাওয়া যায় হুন্ডির মাধ্যমে। ভিসাবাণিজ্য, আন্ডার ইনভয়েসের (প্রকৃত মূল্য কম দেখানো) মতো অবৈধ পথ আবার চালু হয়ে গেছে। এতে এখন বেড়েছে হুন্ডি।

মালয়েশিয়াপ্রবাসীরা বলছেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের সঙ্গে শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ বাড়ানো দরকার। তাদের সেবার মানও উন্নত করতে হবে। প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধার প্রতিও নজর দিতে হবে।