ঢাকাসোমবার , ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • অন্যান্য

গবেষণার দেড়শ কোটি টাকা ভাগাভাগি ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে

অনলাইন ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩ ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ । ২০৭ জন
ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার দেড়শ কোটি টাকা ভাগাভাগি

চলতি অর্থবছরে গবেষণা বাবদ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশন (ইউজিসি) এ টাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে বরাদ্দ দেয় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে গবেষণা বাবদ খরচের জন্য।

এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া সুনির্দিষ্ট গবেষণা প্রস্তাবের বিপরীতে এ টাকা খরচ করার বিধান থাকলেও এসব বিশ্ববিদ্যালয় তা মানেনি। তারা খুশি মতো খরচ করেছে এ টাকা। কোনো ধরনের গবেষণা ছাড়াই শুধুশুধু ঢালাওভাবে বেতনের সঙ্গে এ টাকা শিক্ষকদের বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা সরকারি হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পর্যালোচনায় ধরা পড়েছে। তবে এখনও সেই টাকা ফেরত আনতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশন।

ইউজিসি ও সংসদীয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সরকারি হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক সভায় দেড়শ’ কোটি টাকার গবেষণা তহবিল ‘তসরুফ’ নিয়ে আলোচনা হয়। উঠে আসে সংশ্লিষ্ট ৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জন্য বরাদ্দ টাকা খরচে অনিয়মের বিষয়টি। নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা খরচ করায় ওই টাকা ফেরত আনতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয় সংসদীয় কমিটি। নির্দেশনা মোতাবেক ওই ছয়টি বিশ^বিদ্যালয়কে গবেষণায় বরাদ্দ দেওয়া টাকা ফেরত চেয়ে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশন। কিন্তু শিক্ষকরা টাকা দিতে রাজি নন।

ইউজিসি জানিয়েছে, এ পর্যন্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনো শিক্ষক ওই টাকা ফেরত দেননি। উল্টো বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে এ টাকা ফেরত চাওয়ায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে তা বৃদ্ধি করে গত অর্থবছরে (২০২১-২০২২) ১২০ কোটি টাকা ও চলতি অর্থবছরে (২০২২-২০২৩) ১৫০ কোটি টাকা করা হয়েছে। কিন্তু সে টাকা নিয়ম না মেনে ঢালাওভাবে সব শিক্ষকের বেতনের সঙ্গে ৫ হাজার টাকা করে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য না। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণের বিষয়ে মঞ্জরি কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ইউজিসি বলছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুনির্দিষ্ট প্রস্তবনা না থাকলেও শিক্ষকদের বেতনের সঙ্গে পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছে। যা গবেষণায় বরাদ্দ অর্থ খরচের বিধানপরিপন্থী। গবেষণার বরাদ্দ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে চাচ্ছেন না শিক্ষকরা। টাকা ফেরত চেয়ে মঞ্জরি কমিশন চিঠি দেওয়ায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে। টাকা ফেরত চাওয়ার বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক দাবি করে নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

স্থায়ী কমিটির সভায় উঠে এসেছে যে, গবেষণা প্রস্তাব না থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে বেতনের সঙ্গে সব শিক্ষককে পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছে এই ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোনো ধরনের গবেষণা ছাড়াই গবেষণা বাবদ শুধু শুধুই বিলানো টাকা ফেরত নেয়ার সুপারিশ করে। এরপর এ ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়কে টাকা ফেরত দেয়ার চিঠি পাঠায় ইউজিসি। এ ছয়টির মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা শিক্ষকদের বিলিয়েছে।

ওই ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো ইউজিসির চিঠিতে বলা হয়, সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ছাড়া এভাবে বরাদ্দ দেয়ার বিধান না থাকায় সরকার ওই টাকা ফেরত চাইছে।