ঢাকাশনিবার , ১৮ মার্চ ২০২৩
  • অন্যান্য

অবারও কেজি দরে তরমুজ ;দাম সাধারণের নাগালের বাহিরে

হাসান শাব্বীর
মার্চ ১৮, ২০২৩ ১২:৪২ অপরাহ্ণ । ২৩৪ জন
মৌসুমের শুরুতে বগুড়ার বাজার গুলোতে এবারও নিয়ম ভেঙে কেজি মাপে তরমুজ বিক্রি করেছেন খুচরা বিক্রেতারা।

মুসলিম সম্প্রদায়ের দরজায় কড়া নাড়ছে আত্মসংযমের মাস পবিত্র মাহে রমজান। গেল কয়েকবারের মতো  এবারের পুরো  রমযান  মাসে  গ্রীষ্মের   খরতাপ  চলামান থাকবে  বাংলাদেশে ।বাংলার চৈত্র আর বৈশাখ মাসের মধ্যবর্তী সময়ে এবারে আরবী মাস রমজান।  উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য  জেলার মতো  বগুড়াতেও  খরতাপ  লক্ষ্যণীয়  ।   রমজানে রোজাদারদের ইফতারে বেশি চাহিদা থাকে শরবতসহ রসালো ফলের।

এই গরম আবহাওয়ায়  রসালো  ফলগুলোর মধ্যে  চাহিদা বেশি থাকে তরমুজের। সেই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে তরমুজ বিক্রয়ে খুচরা পর্যায়ে চলে নানা কারসাজি। তার মধ্যে অন্যতম হলো কেজিতে  বিক্রয়! যাতে একটি তরমুজের দাম হয় পাইকারি থেকে খুচরায় দ্বিগুণ।

রমজানের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মৌসুমের শুরুতে  বগুড়ার  বাজার গুলোতে এবারও নিয়ম ভেঙে কেজি মাপে তরমুজ বেচাকেনা  শুরু   করেছেন খুচরা বিক্রেতারা। অথচ যে পদ্ধতিতে ক্রয় সেই নিয়মে পণ্য বিক্রির বিধান রয়েছে ভোক্তা অধিকার আইনে। কৃষক থেকে পাইকাররা পিস হিসেবে তরমুজ কেনেন। কিন্তু বেশি লাভের আশায় খুচরা বাজারে অন্যায়ভাবে সেই তরমুজ কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। ফলে সাধারণ ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে গেছে মৌসুমী এই ফলটি।

 

তরমুজ উৎপাদনখ্যাত বরিশাল অঞ্চলের কৃষক-পাইকার আর বগুড়ার   খুচরা বাজারগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৮-১০ কেজি ওজনের একটি তরমুজ বর্তমানে বগুড়া  শহরের বিভিন্ন  বাজার পয়েন্টে  বিক্রি করা হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। অথচ পাইকারি বাজারে এই সাইজের তরমুজের দাম সর্বোচ্চ ১৯০ থেকে ২১০ টাকা। উৎপাদক পর্যায়ে গেলে তা আরও কম। তরমুজ  ব্যবসায়ী  ভোলা মিয়া  জানান- “ আমরা  মোকম থেকে  কেজি দরেই  কিনি বেচিও  কজি দরে । ” যদিও  ক্রয় রশিদ  বা  মোকামের  চালান দেখাতে  পারেন নি  তারা ।

পুরো বিষয়টিকেই খুচরা বিক্রেতাদের কারসাজি বলছেন পাইকার আর ক্রেতারা। গত দুই থেকে তিন বছর ধরে ভোক্তা অধিকার আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই পদ্ধতিতে তরমুজ বিক্রি চলছে বগুড়ায় । কী করে এই সিন্ডিকেট তৈরি হলো তারও উত্তর মিলছে না। মাঝখান থেকে দেশে উৎপাদিত এই সুমিষ্ট ফলটির স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তরমুজ  কিনতে  আসা  সুজাত  আনোয়ার জানান – “  প্রতি  বছর  এমন সময়ে  কমপক্ষে  ৩০-৪০ টি  তরমুজ  পরিবারের জন্য  কেনা  হয়ে  যায় তার । কিন্তু  , এবার এটাই প্রথম তার ।  দাম বৃদ্ধি, কেজি  দরে দাম সব কিছু মিলিয়ে  এবার  কেনা  হয় নি। ”

গত বছর বিশেষ করে রমজান মাসে কয়েক দফায় কেজি দরে দ্বিগুণ দামে তরমুজ বিক্রয়ের বিষয়ে  ভোক্তা অধিকার ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান।

বৃহস্পতিবার  বিকেলে বগুড়া   শহরের  রাজাবাজার , চেলোপাড়া  ব্রিজের   পূর্ব প্রান্তে,   তিনমাথা -সাতমাথা  মোড়, ফতেহআলী বাজার  গেট,  চুড়িপট্টির  সামনে,  রেললাইনের দুপার্শ্বে র  অবৈধ  বাজার   এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের সবুজ আর কালো তরমুজে সয়লাব হয়েছে। বিক্রেতারা এই তপ্ত গরমে হাঁকডাকে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছেন। কেউ আবার তরমুজের মাঝখানে চাকু দিয়ে লাল টকটকে একচিলতে ফলা উল্টিয়ে সোপিচ করে রেখেছেন ক্রেতাদের বিশ্বাস স্থাপনে। চেলোপাড়ার  ব্যীজের  ওপারে সারিকান্দি  রোডে  তরমুজ  বিক্রয়  করেন আজিজুর  রহমান । তিনিও  জানান কেজি দরেই তরমুজ  কেনেন তারা  , বেচেনও  কেজি দরে ।  সাধারণ  মানুষের অভিযোগ  মোকামে  দাম ১৫-২০  টাকা  কেজি   বগুড়ায়  এসে তা  দ্বিগুণ –  তিনগুন ।

রেল লাইনের  ওপর  চার-পাঁচ বছর যাবত   মৌসুমী  ফলের  দোকান  করেন  ভোলা  মিয়া । তার দাবী ট্রাকভর্তি   কয়েক টন  তরমুজের  মধ্য  থেকে  বাছাই করে  সেরা   ফল  কেনার  চেষ্টা  করেন  তিনি  এজন্য  তিনি কেজি দরে  বিক্রয়  করেন । ক্রেতা  অব্দুর  রহিম  পেশায়  কোম্পনী  প্রতিনিধি  ।  তিন সদস্যের  পরিবারের জন্য  মাঝারি  সাইজের তরমুজ  কিনবেন  বাজেট কম । ২.৫/৩ কেজির  তরমুজ  সবচেয়ে  ছোট  বাজারদরে  দাম  আসে   ১২০ টাকা ।  আব্দুর  রহিম  বলেন-  “  এখনই  তরমুরে  এই  অবস্থা  রমজান  আসলে  না  জানি আরোও  কত হয়  । ’’  বয়োবৃদ্ধ  আব্দুল  কালামকে  কেজি দরে তরমুুুুজ বিক্রয়ের  বিষয়ে জানতে  চাইলে বলেন – “  বাবারে, আগে  তো  তরমুজ  কিনছি  আমরা হালি  হিসাবে , তারপর  পিছ-সাইজ  অনুযায়ী আর  এখন  কেজি । আরোও  যে  কত কিছু দেখা  লাগবে ? ’’
শুধু   রাজাবাজারের  গেটের  মুখের   তরমুজ  বিক্রেতা  ভোলা  মিয়া  নয়  বগুড়ার  সব জায়গায়  একই  চিত্র  । প্রশাসনের  অন্যান্য বিষয়ে  নজরদারি  থাকলেও  কেন জানি  মৌসুমী   ফলকেন্দ্রীক  উদাসীনতা পীড়াদায়ক  বলে  মনে  করছেন  ভোক্তাসহ  সাধারণ  মানুষ  । সঠিক  নজরদারি  ও  ব্যবসায়ী মহলের  সততা দেশের  মানুষকে  অন্তত দেশীয়  ফল  স্বল্প ও  ন্যায্যমূল্যে খওেয়ার  পথ  সুগম  করতে  পারে  বলে বিশ্বাস  করছেন সকলে  । ভোক্তা  অধিদপ্তরের যে পদ্ধতিতে ক্রয় সেই নিয়মে পণ্য বিক্রির বিধান কার্যকর  হলে   শুধু  মৌসুমী  ফল  তরমুজ  নয়  অন্য  সকল  মৌসুমী  ফলের  ক্ষেত্রেও  খুচরা  বিক্রেতাদের  কারসাজি  বন্ধ  করা  সম্ভব ।