ঢাকাসোমবার , ২৭ মার্চ ২০২৩
  • অন্যান্য

ভর্তুকি দিতে পারছে না সরকার

অনলাইন ডেস্ক
মার্চ ২৭, ২০২৩ ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ । ১১১ জন
ছবি : সংগৃহীত

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী ভর্তুকির জোগান দিতে পারছে না সরকার। ফলে এক সংস্থার লোকসানের ভার অন্য সংস্থাকে বহন করতে হবে এবং ভর্তুকিকে ঋণে রূপান্তর করে পরিশোধ করতে হবে। এতে করে গ্রিড লক পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বাজেট থেকে এ বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব নয়। উপরন্তু ভর্তুকি খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে আগামীতে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আরও খারাপ হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয় ভর্তুকি বাবদ অতিরিক্ত ৪০ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে; পেয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাবদ অতিরিক্ত ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হলেও অর্থ বিভাগ বরাদ্দ দিয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। খাদ্য সহায়তা বাবদ অতিরিক্ত ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল খাদ্য অধিদপ্তর, কিন্তু পেয়েছে ৮১২ কোটি টাকা। এর বাইরে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানিতে অতিরিক্ত ২৪ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল। কিন্তু এসব খাতে এক টাকাও বরাদ্দ বাড়ায়নি অর্থ বিভাগ। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (টিসিবি) সরকারের অন্যান্য সংস্থা ভর্তুকি বাবদ অতিরিক্ত ৯ হাজার কোটি টাকা দাবি করলেও সাড়া দেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়।

বৈশ্বিক মহামারী করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বৈশ্বিক অনেক পণ্যের দাম ওঠানামা করছে। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আহরণ হচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা মোতাবেক বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকির চাপ

আরও বাড়বে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ বছর যে পরিমাণ ভর্তুকির চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে তা বাজেট থেকে মেটানো সম্ভব নয়। ফলে সংস্থাগুলো তাদের লোকসানকে দেশি-বিদেশি ঋণে রূপান্তর করে আগামী বছরগুলোতে পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করবে। সংস্থাগুলো নিজস্ব আয় থেকে দেনা পরিশোধ করতে না পারলে সরকারের ঋণ হিসেবে বাজেট থেকে তার দায় মেটানো হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কমতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে সরকার শিগগিরই শুরু করবে জ্বালানি তেলের অটোপ্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট কার্যক্রম। গ্যাস ও বিদ্যুতের ভর্তুকিও পর্যায়ক্রমে সমন্বয় করা হবে। এ অবস্থায় মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা ফিরলে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকির মাত্রা অনেক কমে যাবে।

অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো সরকারের অগ্রাধিকার হলেও ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে গত বছরের আগস্টে সারের দামও বাড়ায় সরকার। তবে এসব উদ্যোগের কোনোটাই ভর্তুকির চাহিদা কমাতে পারেনি; নভেম্বরের আগেই মন্ত্রণালয়গুলো বিভিন্ন খাতে অর্থ বিভাগের কাছে অতিরিক্ত ১ লাখ ১০ হাজার ১০৫ কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দের দাবি করে। ভর্তুকির চাপ মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে গত নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সেখানে বিভিন্ন সেবার মূল্য বাড়িয়ে ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত হয়।

এ ছাড়া ডলার সংকটের প্রেক্ষাপটে আইএমএফ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার শর্ত হিসেবেও গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। এ কারণে গত কয়েক মাসে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে।

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কোন খাতে কত টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ দেওয়া হবে, তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। আগামী মে মাসের প্রথম দিকে আয়োজিত সভায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে নতুন অর্থবছরে খাতভিত্তিক ভর্তুকির পরিমাণ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হবে। তবে জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি দেবে না সরকার। এ জন্য আইএমএফের পরামর্শ অনুসারে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে বলে।

ভর্তুকি খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে আগামীতে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আরও খানিকটা খারাপ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বলা হয়েছে, ভর্তুকি কমাতে হলে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও সারের দাম বৃদ্ধি করতে হবে। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৮১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

বাজেট সম্পর্কিত সম্পদ কমিটির সর্বশেষ সভায় ভর্তুকিতে অতিরিক্ত চাপের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভর্তুকি কমানোর জন্য দ্রুত বিদ্যুৎ, সার ও পানির দাম বাড়ানোর সুপারিশও করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভর্তুকির এই চাপ অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হলেও এ মুহূর্তে সারের দাম বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরই বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম। এ ছাড়া বিদ্যুতের পাশাপাশি পানির দামও বাড়ানো হবে।