ঢাকাবুধবার , ১৯ এপ্রিল ২০২৩
  • অন্যান্য

জেনারেটরের আলোতে বেচাবিক্রি শুরু করেছে নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা

অনলাইন ডেস্ক
এপ্রিল ১৯, ২০২৩ ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ । ৫২ জন
ছবি : সংগৃহীত

বিদ্যুৎ নেই। ভেতরে অন্ধকার। ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় তলায় দোকানের পোড়া জিনিসপত্র সরানোর কাজ করছে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। ঈদের মাত্র কয়েকদিন বাকি। নিউ সুপার মার্কেটের পুরো ভবনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। ভবনের নিচতলাতে চার্জার, টর্চের আলো এবং ছোট জেনারেটরের আলোতে বেচাবিক্রি শুরু করেছে নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। ওভারব্রিজের সিঁড়ি ভাঙ্গা থাকায় ক্রেতাদের আনাগোনা একেবারেই কম। যে দু’-একজন যাচ্ছেন তাদেরকে ডেকে ডেকে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করছে ব্যবসায়ীরা। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ সুপার মার্কেট ঘুরে গতকাল এমনই চিত্র দেখা গেছে। ভবনের নিচতলার প্রবেশদ্বারের সঙ্গেই একটি ফাস্টফুডের দোকান।

 

বিদ্যুৎ না থাকায় দোকানে থাকা পিৎজ, বার্গার, নুডুলসসহ অন্যান্য খাবার নষ্ট হয়ে মাছি বসতে শুরু করেছে। একটু ভেতরেই চার্জার লাইটের আলোতে লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, টুপি, গামছার দোকান খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। ভবনের নিচতলায় ঢুকতেই চোখে পড়ে গেঞ্জি, হোসিয়ারি পণ্যের দোকান অনি মনি সেন্টারের। দোকানটির বিক্রয়কর্মী মো. শিহাব বলেন, আগুনের কারণে ভবনের উপরের অংশের দোকান পুড়লেও আমাদের পণ্যের কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু গত ৪ দিন ধরে বিক্রি বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ঈদের শেষ ১০ দিনে অর্থাৎ চাঁদরাত পর্যন্ত আমাদের প্রকৃত ব্যবসা হয়। ভবনজুড়ে বিদ্যুৎ নেই। গরম অন্ধকার সব মিলিয়ে একটি ভূতুড়ে পরিবেশ। ক্রেতাও নেই। সকালের দিকে খুলে দুপুর পর্যন্ত সামান্য বেচাবিক্রি হয়েছে। বিগত বছরে এই সময়ে প্রতিদিন আমাদের ন্যূনতম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। এখন সেখানে সারা দিনে ১ হাজার থেকে দেড় হাজারের বেশি বিক্রি করতে পারিনি। অনেক ডেকেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। যে দু’-একজন ক্রেতা আসেন অন্ধকার দেখে পণ্য না কিনেই চলে যান। যা বিক্রি হচ্ছে সেটা দিয়ে দোকান চালানোর খরচও উঠছে না। তিনি বলেন, দোকানে প্রতিদিন মেইনটেনেন্স থেকে শুরু করে খরচ হয় ৫ হাজার টাকার মতো। অথচ তার অর্ধেকও খরচ তুলতে পারিনি। আরেক ব্যবসায়ী মো. শামীম বলেন, আমাদের দোকান নিউ সুপার মার্কেটের বাইরে হওয়ায় আগুন লাগার দিন বন্ধ ছিল। দোকানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। ঈদের এই সময়ে প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার টাকা বিক্রি হলেও আগুন আতঙ্কে ক্রেতারা আসছেন না। নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার এক ব্যবসায়ী বলেন, ঈদের আগে দোকানের জন্য প্রায় ১৫ লাখ টাকার নতুন মালামাল তুলেছিলাম। কিন্তু আগুনে সব পুড়ে গেছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের সংখ্যা এখন বেড়ে ২৭০টি বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যা ১ হাজারেরও বেশি।

একটু ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেছে নিচতলায় থাকা বেডসিট, শাড়ি, সোফা, কুশান, বালিশসহ অন্যান্য দোকানের মালিকরা পণ্য গোছাতে ব্যস্ত। কেউ কেউ বিদ্যুৎ চলে আসবে বলে আস্বস্ত করছেন কর্মচারীদের। বিকালের মধ্যে একটা লাইট, একটা ফ্যানের কানেকশন আসবে। জেনারেটর চালু হবে এমনটাই বলতে শোনা যায়। মার্কেটটির নিচতলার বেশির ভাগ দোকানই খুলেছে। চলছে মালামাল আনা-নেয়া, ধোয়া- মোছা, গোছানো ও দোকান পরিচ্ছন্নতার কাজ। অন্ধকারে মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে তীব্র গরমে মালামাল সাজাচ্ছেন বিক্রেতারা। গরমে ঘেমে মার্কেটের বাইরে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে ব্যবসায়ী কর্মচারীদের। গতকাল থেকে ভবনের দোতলা খুলে দেয়ার কথা থাকলেও মার্কেটের কিছু অংশ খুলে দেয়া হয়। প্রচণ্ড গরম ও বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতারা আসছেন না বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। এদিকে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবায়ীদেরকেও পোড়া ময়লা পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, পিকআপে করে ব্যবসায়ীদের মালামাল আনতে দেখা গেছে। বিকালের মধ্যে মার্কেটে জেনারেটর চালু হওয়ার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পরিবারের সদস্যদের জন্য শপিং করতে হাজারীবাগ থেকে এসেছেন পারভীন সুলতানা। কথা হয় তার সঙ্গে। সুলতানা বলেন, কতো আশা নিয়ে ছেলে-মেয়েদের জন্য জামা-কাপড় কিনতে এসেছি। স্বামী এবং শশুর বাড়ির লোকদের জন্য নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলা থেকে শার্ট-প্যান্ট ক্রয় করতাম। দামও ছিল সাধ্যের মধ্যে। কিন্তু আগুন লাগার কারণে এখন হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছি। শেওড়াপাড়া থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এসেছেন এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কথা হয় তার সঙ্গে। এই ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের তো বসুন্ধরা কিংবা যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়ে ফিক্সড দামে ক্রয় করার সামর্থ্য নেই। নিউ মার্কেটই আমাদের একমাত্র ভরসা। স্ত্রী- মেয়ের জন্য কেনাকাটা করলেও ছেলে আর নিজের জন্য কিছু কিনতে পারিনি।