ঢাকাসোমবার , ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • অন্যান্য

মুঠোফোনে তোলা ছবি থেকে পেশাদার ক্যামেরার স্বপ্নপূরণ

অনলাইন ডেস্ক:
এপ্রিল ২৯, ২০২৪ ৬:৫৫ অপরাহ্ণ । ১৩ জন

‘সনি ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪’–জয়ী ‘ইলুমিনেটেড স্যাংচুয়ারি’ ছবিটি দেখেছেন? সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব রাখের উপবাসের একটি মুহূর্তই ধারণ করা হয়েছে ক্যামেরায়। কথিত আছে যে প্রাণঘাতী রোগ থেকে বাঁচতে কার্তিক মাসে উপবাস পালন করে আশ্রম প্রাঙ্গণে প্রদীপ ও ধূপ জ্বালাতে বলেছিলেন বাবা লোকনাথ। সেই থেকে প্রিয়জনের মঙ্গল কামনায় প্রতিবছর কার্তিক মাসের শেষ ১৫ দিনের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এই উপবাস বা ‘কার্তিকব্রত’ পালন করেন লোকনাথভক্তরা। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহদিন শফিক সেই প্রজ্বলিত প্রদীপের ছবিই ফ্রেমবন্দী করে জমা দেন সনি ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডসে। এরপরই বাংলাদেশ অঞ্চলে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডজয়ী হন।
রাখের উপবাস চলাকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গিয়েছিলেন মাহদিন। উদ্দেশ্য—বারদীর শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রমে অনুষ্ঠিত উৎসবের ছবি তোলা। তবে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না।

মাহদিন শফিক জানান, রাখের উপবাস চলাকালীন জ্বালানো প্রদীপ থেকে প্রচুর ধোঁয়া হয়, যা চোখে গেলে চোখ জ্বালা করে। চোখ খুলে রাখা দায় হয়ে পড়ে। চোখ, নাক দিয়ে শুরু হয় পানি পড়া, সঙ্গে কাশি। এ সময় নাক-মুখ গামছা বা অন্য কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে নিলে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়; কিন্তু চোখ দুটো তখনো অরক্ষিতই থাকে। ধোঁয়া থেকে বাঁচতে তাই আশ্রমের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয়, তৃতীয় থেকে চতুর্থ—এভাবে এক–এক করে ওপরের তলায় উঠতে হয়েছে মাহদিনকে। চতুর্থ তলা থেকে আলো-আঁধার মাখা ছবিটি আটবারের চেষ্টায় ফ্রেমবন্দী করেন তিনি। মাহদিন জানান, দূর-দূরান্তে গিয়ে ছবি তোলা তাঁদের জন্য নতুন কিছু নয়। ইস্ট ওয়েস্ট ফটোগ্রাফি ক্লাব থেকে প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় ছবি তুলতে যান তাঁরা। রাখের উপবাসের ছবি তুলতেও সেদিন আশ্রমে গিয়েছিলেন সাত-আটজন।

সনি ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রতিবছর ১ জুন থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে যে কেউ ছবি জমা দিতে পারেন। মাহদিন সেখানে ওপেন ক্যাটাগরি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। স্থাপত্যশ্রেণিতে মোট তিনটি ছবি জমা দেন তিনি। এর মধ্যে ‘ইলুমিনেটেড স্যাংচুয়ারি’ শিরোনামের ছবিটি জাতীয় পুরস্কারজয়ী হয়। কোনো পেশাদার ক্যামেরা নয়, মুঠোফোন দিয়ে ছবিটি তোলা।
বিজয়ী হিসেবে একটি সনি ফুল-ফ্রেম মিররলেস ক্যামেরা ও উন্নত প্রযুক্তির একটি লেন্স পেয়েছেন এই শিক্ষার্থী, যার বর্তমান বাজারমূল্য সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার বেশি। পুরস্কার জয়ের পর মাহদিন শফিক বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে ফটোগ্রাফি করলেও আমার কোনো ক্যামেরা ছিল না। বন্ধুদের ক্যামেরা ধার করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেছি। সনি ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডসের মাধ্যমে আমার স্বপ্নপূরণ হয়েছে।’
পুরস্কারের আশায় নয়, স্রেফ মনের আনন্দে ছবি তোলেন মাহদিন। নিজ চোখে যা দেখেন, অন্যদের তা দেখানোও তাঁর ছবি তোলার একটা উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, ‘আমার যাত্রা মাত্র শুরু। ফটোগ্রাফিকে লালন করে অনেক দূর যেতে চাই।’