ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • অন্যান্য

সুখী দাম্পত্যের পাঁচটি টিপস

অনলাইন ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩ ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ । ৩০৯ জন
দীর্ঘ সুখী বিবাহিত জীবন সবারই কাম্য। প্রতীকী ছবি

সুখী বয়স্ক দম্পতি দেখে অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে, এত বছরের সুখের দাম্পত্যের রহস্য কী? গবেষণায় দেখা যায়, যাদের বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সুখী হয়েছে তাদের মূলত ৫টি মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আপনিও যদি সঙ্গীর সঙ্গে দীর্ঘ বিবাহিত জীবন কাটাতে চান তাহলে জেনে নিন এই পাঁচ বৈশিষ্ট্যের কথা।

১. যোগাযোগ

কর্নেল ইউনিভার্সিটি প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন বিয়ে টিকে থাকার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যোগাযোগ। গবেষকরা ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রায় ৪০০ আমেরিকানদের নিয়ে জরিপ করেছেন, যারা কমপক্ষে ৩০ বছর ধরে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ বা রোমান্টিক সম্পর্কে ছিলেন।

২. অঙ্গীকার

কর্নেল ইউনিভার্সিটির ওই গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন, দীর্ঘস্থায়ী বিয়ের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা একটি মূল কারণ। জরিপে অংশ নেওয়া প্রবীণদের মধ্যে দেখা গেছে, বিয়েকে আবেগের ওপর ভিত্তি করে অংশীদারত্ব বিবেচনা করার পরিবর্তে প্রবীণরা একে একটি শৃঙ্খলা হিসেবে দেখেছেন। প্রবীণরা মনে করেন, বিয়ের পর একে অপরকে সম্মান করা উচিত। হানিমুন সময়টা শেষ হওয়ার পরেও তা অব্যাহত থাকা জরুরি।

প্রতিশ্রুতি হলো আঠার মতো একটি বিষয় যা আপনার বিয়েকে জুড়ে রাখে। সুস্থ বিয়েতে কোনো বিচার, অপরাধবোধ বা বিয়ে বিচ্ছেদের হুমকি নেই। এ ধরনের দম্পতিরা তাদের বিয়ের প্রতিশ্রুতিকে গুরুত্ব সহকারে দেখেন এবং কোনো শর্ত ছাড়াই একে অপরের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকেন।

স্থিতিশীলতার ওপর ভিত্তি করে এই অটল প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে একটি ভালো সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি হয়। কারণ প্রতিশ্রুতি স্থির ও দৃঢ় উপস্থিতি হিসেবে সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

৩. দয়া

দীর্ঘদিন বিয়ে বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুরোনো একটি প্রবাদ বেশ সঙ্গতিপূর্ণ—একটু দয়া অনেক দূরে যায়। প্রকৃতপক্ষে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৯৪ শতাংশ নির্ভুলতার সঙ্গে একটি বিয়ে কতদিন স্থায়ী হবে তা ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য সূত্র তৈরি করেছেন। আর তা হলো দয়া ও উদারতা সম্পর্কের দৈর্ঘ্য বাড়াতে প্রভাবিত করে।

বিয়ে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কের ক্ষেত্রে দয়া ও উদারতা দেখানো কিছুটা জটিল হতে পারে। তবে এটি করা উচিত। আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করেন তা বিবেচনা করুন। আপনার স্ত্রী যখন আপনার সঙ্গে কাজ করেন বা অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে কথা বলেন তখন আপনি কি সত্যিকারভাবে সেটির সঙ্গে যুক্ত হন?

এ ক্ষেত্রে কোনো বিষয়ে আপনি একমত নাও হতে পারেন। তাই এমনভাবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বা মতামতকে উপস্থাপন করুন যেন স্ত্রী তা মনোযোগ দিয়ে শোনে এবং বিষয়টি নিয়ে ভাবে। আপনার স্ত্রীর সঙ্গে প্রতিটি মিথস্ক্রিয়ায় উদারতা দেখান।

৪. গ্রহণযোগ্যতা

সুখী দাম্পত্য কাটানো মানুষ সঙ্গীর ভুল ধরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজের দোষও স্বীকার করে। তারা জানে যে, কেউই নিখুঁত নয়। তাই দোষত্রুটি মেনে নিয়েই নিজের সঙ্গীকে আঁকড়ে ধরে থাকে।

অন্যদিকে অসুখী বিয়েতে থাকা দম্পতি শুধু একজন আরেকজনের দোষ খোঁজে এবং কিছু ক্ষেত্রে তারা সঙ্গীর দোষ প্রচার করে বেড়ায়। সঙ্গীর আচরণের প্রতি ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের দোষ অস্বীকার করারও একটি প্রবণতা তৈরি হয়।

আপনার সঙ্গী কেমন বা আপনি কেমন তার চেয়ে বড় বিষয় হলো দুজনের দুজনকে গ্রহণ করা। আপনি যদি খুব জোরে নাক ডাকেন, খুব বেশি কথা বলেন, অতিরিক্ত খান বা আপনার স্ত্রীর চেয়ে আলাদা সেক্স ড্রাইভ করেন, জেনে রাখুন যে এগুলো কোনো দোষ নয়। এই ত্রুটিগুলো সত্ত্বেও আপনার সঙ্গী আপনাকে বেছে নিয়েছে এবং সে আপনার কাছ থেকে একইভাবে শর্তহীন গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার যোগ্য।

৫. প্রেম

এটা বলাই যায়, প্রেমময় দম্পতিরা সুখী দম্পতি। আবেগই সম্পর্ককে প্রাণবন্ত করে তোলে। তবে প্রেমে পড়ার চেয়ে প্রেম তৈরি হওয়া বেশি জরুরি। এর জন্য বেশ কিছুটা সময় প্রয়োজন। যোগাযোগ, প্রতিশ্রুতি, দয়া ও একে অপরকে গ্রহণ করার মাধ্যমে প্রেম তৈরি হয়। আর এই প্রেমই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যায় বহুদূর।

লেখক : মনোবিজ্ঞানী টেসা বার্নস মার্টিন