ঢাকাবুধবার , ১৭ মে ২০২৩
  • অন্যান্য

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রকল্পের ১৮৭ কোটি টাকার কাজ ফেলে পালিয়েছে ঠিকাদার

অনলাইন ডেস্ক
মে ১৭, ২০২৩ ১:০৮ অপরাহ্ণ । ১৩৪ জন
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) বিভিন্ন ওয়ার্ডের গলিপথসহ ছোট ছোট সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের ১৮৭ কোটি টাকার কাজ ফেলে পালিয়েছেন ঠিকাদার। এ প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের শতাধিক সড়ক সংস্কারের পাশাপাশি ড্রেন নির্মাণের কাজ রয়েছে। গুরুতর অভিযোগ হলো, সম্পন্ন কাজের তুলনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানভীর কনস্ট্রাকশনকে বেশি চলতি বিল পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে তানভীর কনস্ট্রাকশন কাজগুলো শেষ করতে আর নাও ফিরতে পারে।

রাসিকের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানভীর কনস্ট্রাকশনকে মোটা অঙ্কের এ প্যাকেজের কাজ দেওয়া হয়। এসব কাজ সম্পন্নের শেষ সময় ছিল ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। আরও দুবার সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ ৩০ জুন করা হয়েছে। মার্চে চিঠি দিয়ে ঠিকাদারকে ৩০ জুনের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করতে অনুরোধ করা হয়। এরপর আরও দুবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো সাড়া মেলেনি।

রাসিকের প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তারা আরও জানান, কিছুদিন ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেউ এখন তাদের ফোনও ধরছেন না। অথচ রাসিক থেকে চার দফায় ৪৬ কোটি টাকা চলতি বিল তুলে নিয়েছে তানভীর কনস্ট্রাকশন। আড়াই বছরে কাগজেকলমে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩০ ভাগ। বাস্তবে এ অগ্রগতি আরও কম বলে নগরীর সংশ্লিষ্ট এলাকার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

এদিকে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা বলছেন, কাজগুলোর সবই ওয়ার্ড পর্যায়ের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ। ২১ জুন রাসিকের নির্বাচন। তারা অনেকেই আবার প্রার্থী হয়েছেন। এখন ভোট চাইতে গেলে এলাকার মানুষ নানা কথা শোনাচ্ছেন। কাউন্সিলরদের আশঙ্কা, ঠিকাদার ৩০ জুনের মধ্যেও কাজ করতে পারবে না। বাকি ৭০ ভাগ কাজ মাত্র দেড় মাসে সম্পন্ন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এমন একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে না জেনে কাজ দেওয়া ঠিক হয়নি বলে মনে করছেন তারা।

রাসিকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপর মহলের বিশেষ অনুরোধে ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেওয়া হয়। ২৬ এপ্রিল রাসিক নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পরপরই ঠিকাদার গা ঢাকা দিয়েছেন।

রাসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র আরও জানায়, তানভীর কনস্ট্রাকশনকে কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়াই এ কাজটি দেওয়ার সময় স্থানীয় ঠিকাদাররা আপত্তি করেছিলেন। কাজ সম্পন্ন করার সুবিধার্থে এককভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি করেছিলেন অনেক কাউন্সিলরও। তারা দাবি করেছিলেন, কাজগুলো ১০-২০ জন স্থানীয় ঠিকাদারের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হোক। কিন্তু রাসিকের নীতিনির্ধারকরা তাদের কথা শোনেননি।

এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে রাসিকের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পিন্টু বলেন, আমার ওয়ার্ডে কাজের জন্য প্যাকেজে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। তিন বছরে ঠিকাদার একটু কাজও করেনি। আমি আবারও ভোট করছি। এলাকাবাসীকে কী জবাব দেব ভেবে পাচ্ছি না। কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টুকু জানান, আমার এলাকায় অনেক কাজ বাকি। মানুষের ভোগান্তিতে আমারও খারাপ লাগে। লোকজনকে আমরা কোনো জবাব দিতে পারি না।

এদিকে ঠিকাদার তানভীর কনস্ট্রাকশনের এমন অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় ভোটের আগে শঙ্কিত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনও। তিনি ১০ মে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, একটি বড় প্রতিষ্ঠানের সুপারিশে বিভ্রান্ত হয়ে তানভীর কনস্ট্রাকশনকে আমরা কাজ দিয়েছিলাম। প্রায় তিন বছর আগে দেওয়া কাজের অধিকাংশই বাকি। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও কাজগুলো শেষ না করে ফেলে রেখেছে। আমাদেরকে জনগণের মুখে ফেলে রেখে ঠিকাদার পালিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য একটা সংকট। এটা সমাধানে বহু চেষ্টা করেছি, ঠিকাদারকে বুঝিয়ে নানাভাবে বলেছি। এখন তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে কাজ দিলে তিনি মামলায় যাবেন-এ রকম আগাম হুমকিও দিয়ে রেখেছেন। নির্বাচনের পর চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে তানভীর কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব। কাজগুলো সময়মতো সম্পন্ন না হওয়ায় নগরবাসীকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে-এজন্য আমি রাসিকের মেয়র হিসাবে তাদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করছি।

এ বিষয়ে রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ ভাগ। কোভিড এবং কোভিড-পরবর্তী সময় নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ঠিকাদার কাজ করেননি। এখন তানভীরকে দিয়ে আর কাজগুলো করানো যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৩০ জুন কাজের মেয়াদ শেষের পর ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অঙ্গীকার ও চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরপর নতুন ঠিকাদার নির্বাচন করে কাজগুলো শেষ করা হবে। কাজ ফেলে পালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তানভীর কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, বিটুমিনের অভাবে সড়কগুলো কার্পেটিং করা যায়নি। বিটুমিন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। এজন্য সময়ের প্রয়োজন। এছাড়া টেন্ডার মূল্যের তুলনায় এখন নির্মাণসামগ্রীর দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে কবে নাগাদ ফেলে রাখা কাজগুলো আবার শুরু করে শেষ করতে পারবেন-এ বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট সময়ের কথা বলতে পারেননি।

 

Ad