অবৈধ বিলবোর্ডে সয়লাব বগুড়া শহর । শহরের প্রধান সড়কগুলির মাঝের রোড ডিভাইডার , দু’পাশের ভবনের দেওয়াল , বৈদ্যুতিক খুঁটি কিংবা সড়ক বিভাযকের কার্নিশ বাদ যায় নি কিছুই । নির্বাচনী ব্যানার – পোস্টার , রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ব্যানার , কোম্পানী প্রচারণা ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে শহর । কোচিং সেন্টার , শিক্ষকদের প্রাইভেট প্রচারণা কিংবা প্রাইভেট স্কুল – মাদরাসায় ভর্তি বিজ্ঞাপন কি নেই এতে !
প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার বিজ্ঞাপনদাত প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক নেতাদের ব্যানার লাগানোর প্রথম পছন্দ ! বাদ যায়নি ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্টও । সাতমাথা থেকে তিনমাথা , মাটিডালী রোড, শেরপুর রোডে আশেপাশে ডানে বামে ব্যানার পোস্টার । এসব ব্যানার ফেস্টুন সাটাতে আবার কোথাও কোথাও গাছেও পেরেক ঠোকা হয়েছে । গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বগুড়া পৌরসভা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে বকেয়া বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন ফি বাবদ ৮৭ লাখ টাকা পাবে ।
অসংখ্যবার নোটিশ করা হলেও ৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৬টি প্রতিষ্ঠান তাদের বকেয়া বিজ্ঞাপন ফি পরিশোধ করেছে । ভবন, সড়ক, ডিভাইডারে অসংখ্য ব্যানার-বিলবোর্ডসহ বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে সৌন্দর্য্য হারাতে বসেছে বড় পৌরসভা বগুড়া। প্রায় ৬৯.৫৬ বর্গ কি.মি আয়তনের পৌরএলাকার সড়কসমূহ তথা সার্বিক শহরের সৌন্দর্য্য দেখভালের গুরুদায়িত্ব বগুড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষের ।
শহরের স্টেশন রোডে সরোজমিনে দেখা যায় ভবনের দেয়ালজুড়ে বিজ্ঞাপন , সড়ক বিভাযকের মাছে লাগানো গাছে ব্যানার , বৈদ্যুতিক খুটির সাথে লাগানো রাজনৈতিক দলের ব্যানার , আজিজুল হক কলেজ গেট এলাকায় ছাত্রনেতাদরে স্তুতি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন । দৈত্যকার তোড়ণ যা কিনা প্রায়ই ঘটায় দূর্ঘটনা । শেরপুর রোড, সরকারী আজিজুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ গেট (নতুন ভবন) , চেলোপাড়া ব্রীজ সংলগ্ন বিশাল তোড়ণের কারণে প্রায়শই জানজট দীর্ঘায়িত হয় । বনানী ও মাটিডালী উভয় প্রবেশদ্বারেই রয়েছে বিশালাকার তোড়ণ । এসব ব্যানার ফেস্টুনের আড়ালে মাদক সেবী , ছিনতাইকারীরা ঘাপটি মেরে থাকে বলেও জানান পথচারী, সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় দোকানদারেরা ।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বৃহত্তর স্টেশন রোড ভিত্তিক সংগঠন সিবিও সাধারণ সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘একটি পরিচ্ছন্ন শহর ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে । আমাদের সিবিও পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিশেষত বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনের নির্বাচনের পর তাদের ফেলা দেওয়া পোস্টার, ফেস্টুন সহ অন্যান্য আবর্জনা কয়েকদিন ধরে অপসারণ করে । এছাড়া অন্যান্য ব্যানার ফেস্টুনে আমরা হাত দিতে পারি না । অমাদের পৌরসভা থেকে বলা হলে আমরা অবশ্যই অপসরণ করতে ব্যবস্থা নিবো । ”
পৌরসভা আদর্শ কর তফসীল ২০১৪ অনুযায়ী ক শ্রেণির পৌরসভায় প্রতি বর্গফুট সাধারণ সাইনবোর্ডের জন্য একশ ও দেড়শ এবং আলোকসজ্জিত প্রতিবর্গফুট সাইনবোর্ডের জন্য বিজ্ঞাপন ফি নির্ধারণ করা হয় দেড়শ থেকে দুইশ টাকা । কিন্তু বগুড়া পৌরসভায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৫০টি প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ডের অনুমোদন নিলেও ভ্যাটসহ তাদের কাছে বকেয়া ৮৭ লাখ টাকারও বেশি। এর বাইরে আছে অসংখ্য বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন।
পৌরসভার সৌন্দর্যের প্রশ্নে পৌর মেয়র গণমাধ্যমে দাবি করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে তারা জিম্মি। অনেকে প্রশাসনের দোহাই দিয়ে বিলবোর্ড, ব্যানার টানিয়ে পৌরসভার সৌন্দর্য্যহানী ঘটাচ্ছে।
পৌরসভায় অনুমোদন ছাড়া বিলবোর্ড, ফেস্টুন, ব্যানার টানানো কিংবা দেয়াল লিখন ও পোস্টার সাঁটালে- দেয়াল লিখন ও পোষ্টার নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অনাদায়ে ১৫ দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ডসহ নিজ খরচে সংশ্লিষ্ট দেয়াল লিখন বা পোস্টার অপসারণের বিধান রাখা হয়েছে। আইনের প্রয়োগ করে এ শহরের সৌন্দর্য্য রক্ষায় পৌরসভার জোড়ালো ভূমিকা সাধারেণ মানুষের প্রত্যাশা ।