বগুড়া জেলা সদরের প্রধান ডাকঘর ডাকাতি কালে প্রহরী খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শফিকুল ইসলাম (৪০) নামের এক আসামি গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। ডাকাত শফিকুল ইসলামকে নওগাঁর সাপাহার থেকে গ্রেপ্তাতার করেছে। সে নওগাঁর সাপাহার উপজেলার পশ্চিম করমডাঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে। গ্রেফতারের পর শফিকুল পুলিশের কাছে চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী তার কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিং এ বিস্তারিত তুলেধরেন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী জানায়, সে দীর্ঘদিন যাবত দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দোকনপাটে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি করে আসছিলো। সেই ধারাবাহিকতায় তার পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে গত এপ্রিল মাসের ২০ তারিখে রাত অনুমানিক ১০টার দিকে শফিকুল বগুড়ায় আসে। সারারাত ঘোরাফেরা করে পরের দিন রাত আনুমানিক ২/৩ টার দিকে ডাকঘরের উত্তর পূর্ব কোনার দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে।
এরপর ডাকঘরের মসজিদ ও গ্যারেজের পিছনে লুকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। পরের দিন সকাল ৬/৭ টার দিকে গার্ড প্রসাব করতে গেলে শফিকুল চুপি সারে কেঁচিগেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে দোতলায় গিয়ে সিঁড়ি ঘরে লুকিয়ে থাকে। সেখানে বসে সে কয়েকটি সিগারেট খায়। এরপর দুপুর আনুমানিক ০১টার দিকে সুযোগ বুঝে নিচে নামার চেষ্টা করে। কিন্তু কর্তব্যরত গার্ড পোস্ট অফিসের ভিতরে থাকার কারণে নিচে নামতে না পেরে সে পুনরায় উপরে উঠে লুকিয়ে থাকে। পরবর্তীতে কর্তব্যরত গার্ড পোস্ট অফিসের মসজিদের অজু খানায় হাতমুখ ধুতে গেলে সে সেই সুযোগে ভোল্ট রুমের দিকে যায় এবং জানালার গ্রিল ভেঙ্গে ভোল্ট রুমে প্রবেশ করে।
ভোল্ট রুমে প্রবেশ করে ভোল্ট রুমের সিসি টিভি ক্যামেরার লাইন কেটে দেয়। ওই সময় ভোল্ট কাটলেও টাকার বাক্স দূরে থাকায় টাকা নিতে পারে না। পরে সাথে নিয়ে যাওয়া যন্ত্রপাতি ওই রুমে রেখে সন্ধ্যায় মূলগেট টপকে বাইরে আসে। তারপর শফিকুল নওগাঁর ভাড়া বাসায় চলে যায়। পরে ঈদের পরের দিন রাত ২টার দিকে বগুড়ার সাতমাথায় পৌছে দেয়াল টপকে পোষ্ট অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্ত ওইদিন কেঁচিগেট লাগানো থাকায় পোস্ট অফিসের বারান্দার গ্রিলের দুইটা পাতি রেঞ্জ দিয়ে ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে কর্তব্যরত গার্ড জেগে থাকায় সে কার্টুন ও বস্তার আড়ালে ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে।
এক সময় সতর্কতার সাথে সিসি টিভি ক্যামেরা ঘুরিয়ে দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে সোজা ভোল্ট রুমে চলে যায়। ভোল্ট রুমের টাকার বাক্স কাছে নিয়ে আসার কিছু না থাকায় সে অন্য ২/৩ টা রুমের তালা কেটে ভেতর থেকে একটি লম্বা রড নিয়ে আসে। রুমের তালা কাটার শব্দে কর্তব্যরত গার্ড জেগে যায় এবং গার্ডের সাথে তার ধস্তাধস্তি হয়। পরবর্তীতে তার কাছে থাকা এসএস পাইপ দিয়ে গার্ডের মাথায় আঘাত করে ও গলা চেপে ধরে থাকে এতে ঘটনাস্থলেই গার্ড মারা যায়।
সে পনুরায় ভোল্ট রুমে গিয়ে ওই রড দিয়ে ভল্ট রুমে থাকা র্যাকটি কাছে নিয়ে আসে। তারপর র্যাকে রক্ষিত একশত টাকার ৭০টি বান্ডিল ও পঞ্চাশ টাকার ২০টি বান্ডিলসহ মোট আট লক্ষ টাকা ব্যাগে নিয়ে সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে বরে হয়। এসময় শফিকুল মৃত গার্ডের পকেটে থাকা কেঁচিগেটের চাবি বের করে ভিতরের গেট এবং মূল গেটের তালা দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে সে সাতমাথা জিরো পয়েন্ট হয়ে নওগাঁ চলে যায়। এরপর নওগাঁ গিয়ে মার্কেটের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে তার একাউন্টে দুই লক্ষ টাকা এবং ডাচ্ বাংলা ব্যাংকে তার অন্য আরেকটি একাউন্টে তিন লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার টাকা জমা রাখে।
পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী আরো বলেন, ধৃত আসামী একজন পেশাদার চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী। সে পূর্বে ২০১৯ সালে ডিএমপি বনানী থানা এলাকায় জনতা ব্যাংকের ভল্ট কেটে টাকা লুন্ঠন করার সময় ধরাপড়েছিলো। তাছাড়া সে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানা এলাকায় দোকানঘরে চুরি, বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি, ছিনতাইসহ পার্শ্ববর্তীদেশ ভারতেও ডাকাতি ও ছিনতাই কার্যক্রম চালিয়ে কারাভোগ করেছে বলে স্বীকার করে। শফিকুল ইসলাম নওগাঁর সাপাহার উপজেলার পশ্চিম করমডাঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে।
বগুড়া জেলার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর সার্বিক দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আখতার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল শরাফত ইসলামের তত্তাবধানে ডিবি বগুড়া’র ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহ আসামীকে গ্রেপ্তার অভিযানের নেতৃত্ব দেন।