মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে একসময় যাদের কাছে ফুচকা বা গোলগাপ্পা বিক্রি করে নিজের ভাত-রুটির সংস্থান করতেন যশস্বী জয়সোয়াল, তাঁরাই টিকিট কেটে তার খেলা দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে রোববার রাতে। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে জয়সোয়ালের করা ৬২ বলে ১২৪ রান তার দল রাজস্থান রয়্যালসকে আইপিএল ম্যাচে জেতাতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু জয়সোয়াল জিতে নিয়েছেন অগুনতি ক্রিকেট অনুরাগীর মন তার ব্যাটিং সৌকর্য দিয়ে। প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ এই জয়সোয়ালই। কদিন আগে রিঙ্কু সিং নামে এক ডোমেস্টিক গ্যাস বিতরণকারীর ছেলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। রোববার রাতে উত্তরপ্রদেশের রং মিস্ত্রি ভূপেন্দ্র ও স্কুল শিক্ষিকা কাঞ্চনের পুত্র জয়সোয়াল পৌঁছে গেল ক্রিকেটের রাজপ্রাসাদে. ভি জি, ইফতিকার আলি খান পতৌদি, মনসুর আলি খান পতৌদির নিল রক্তের সীমানা ছাড়িয়ে ভারতীয় ক্রিকেট অনেকদিনই জয়সীমা, কন্ট্রাক্টর, গাভাস্কার, কপিল দেব, টেন্ডুলকারদের মধ্যবিত্তের দুনিয়ায় পৌঁছে গিয়েছিলো, এবার রিঙ্কু সিং-জয়সোয়ালদের হাত ধরে নিম্নবিত্তদের সংসারে ক্রিকেটের প্রবেশ। রূপকথার কাহিনীকেও হার মানায় জয়সোয়ালের জীবন। উত্তরপ্রদেশের বারহি জেলার সুইয়া গ্রাম থেকে শুধুমাত্র ক্রিকেট খেলবে বলে জয়সোয়াল মুম্বাই চলে আসে। রাতে থাকার জায়গা ছিলো না বলে মাঠ কর্মীদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে তাঁদের তাঁবুতে শুতো জয়সোয়াল। সেখানে বিদ্যুৎ ছিলো না, ছিলো না পানির ব্যবস্থা। জয়সোয়ালের প্রতিভা দেখে ক্রিকেট কোচ জ্বালা সিং তাকে তুলে আনেন নিজের একাডেমিতে।
হবু স্ত্রী বন্দনাকে বলেন, একে আমি তৈরি করবো। ২০১৫তে স্কুল ক্রিকেটে জয়সোয়াল তিনশো উনিশ রান এবং দু ইনিংস মিলিয়ে ৯৯ রানে তেরো উইকেট তাকে লিমকা রেকর্ড বুকে জায়গা দেয়। আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অনূর্ধ্ব-১৬, ১৯ জাতীয় দল, ভারতীয় যুবদলে ডাক পায় জয়সোয়াল। এবার রাজস্থান রয়্যালস দলে। শচীন টেন্ডুলকার জয়সোয়ালের খেলা দেখে রোববার বলেছেন- ভারতীয় দলের দরজায় ও কড়া নাড়ছে! এই উত্থানকে রূপকথার গল্প ছাড়া আর কিই বা বলা যায়!