ঈদুল ফিতর সামনে রেখে বিশেষ মিশনে নেমেছে বগুড়ার হাইওয়ে পুলিশ। মহাসড়কে বিকল ও দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি অপসারণের জন্য ব্যবহৃত ‘রেকার’ ঢাল বানিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে মহাসড়কের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। এমনকি চলন্ত অটোরিকশা আটকে ‘রেকার’ ব্যবহার দেখিয়ে গায়েবি বিলের নামে টাকা আদায়ের অভিযোগও উঠেছে।
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহাসড়কে চলাচলকারী অবৈধ যান আটকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে মাসিক চুক্তি করা (স্থানীয় ভাষায় মালতি) সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এ অভিযানের বাইরে থাকছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ এপ্রিল শেরপুর শহরের কলেজ রোড এলাকা থেকে একটি অটোরিকশা আটক করেন ‘সাইফ’ নামে হাইওয়ে পুলিশের এক সদস্য। মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ এ যানবাহনের মালিকের কাছে মামলার জরিমানা হিসেবে আড়াই হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে পুলিশকে দেন অটোরিকশার মালিক। পরে তার হাতে রেকার ভাড়া আদায়ের একটি রসিদ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই রসিদে রেকার বিল ২ হাজার ও জ্বালানি তেল বাবদ ৫০০ টাকা লেখা আছে।
অটোরিকশাচালক হাশেম আলী বলেন, ‘আমার অটোরিকশাটি চলন্ত অবস্থায় আটক করা হয়। রেকার ব্যবহারের কোনো প্রয়োজনই হয়নি। এমনকি আশপাশে কোনো রেকারও ছিল না। অথচ আমার কাছ থেকে রেকার ভাড়া নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলো। বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপরও হাইওয়ে পুলিশের দাবি করা টাকা পরিশোধ করেছি। কারণ, টাকা না দিলে তো আর সড়কে গাড়ি চালাতে পারবো না।’
প্রতিদিনের মতো রোববার সকালে তরমুজ বোঝাই করে দশমাইল যাচ্ছিলেন ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক আব্দুর রহমান। মহাসড়কের হাজিপুর এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা তার ভ্যানটি আটক করেন। রেকার ভাড়া বাবদ বিল আড়াই হাজার টাকা দিতে বলেন।
ভ্যানচালক আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে না থাকায় মহাজনের কাছ থেকে বিকাশে টাকা এনে রেকার বিল দিয়ে গাড়িটি ছাড়িয়ে নিয়েছি।’
এদিকে সোলায়মান হোসেন নামে আরেক অটোচালক বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমার গাড়িটি হাইওয়ে পুলিশের লোকজন আটক করেন। ৩ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে হয়েছে। একপর্যায়ে গাড়িটি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু গাড়ি বিক্রি করলে সংসার চলবে না ভেবে মাসিক চুক্তিতে গাড়ি চালাচ্ছি।’
বেশ কয়েকজন অটোরিকশাচালক বলেন, ‘মাসিক ভিত্তিতে চুক্তির পর মহাসড়কসহ পুরো শহরে নির্বিঘ্নে গাড়ি চালাতে পারি। এজন্য আমাদের স্টিকার দেওয়া হয়। এসব স্টিকারের অনেকগুলো আবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের নামে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো স্টিকার দেওয়া হয় না। তবে, যে চালক মাসিক চুক্তিতে যায় তার মোবাইল নম্বর হাইওয়ে পুলিশের কাছে থাকে। তাই যেসব গাড়ি মাসিক চুক্তি করা সেগুলো হাইওয়ে পুলিশের নাকের ডগার ওপর দিয়েই চলে। আর যারা মাসিক টাকা দেয় না তাদেরই জরিমানা করা হয়।’