সৌদি আরবে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২২ ওমরাহ যাত্রীর মধ্যে কমপক্ষে ১৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকি ৯ টি মরদেহের ৫ টি বিদেশির, চারটির পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জেদ্দায় নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হক আগেই জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাকবলিত বাসে থাকা ৪৭ জন ওমরাহ যাত্রীর মধ্যে ৩৫ জন ছিলেন বাংলাদেশি। বাকি ১২ জন বিভিন্ন দেশের নাগরিক। আহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৮ জন বাংলাদেশি (জীবিত) বলে সন্ধান পাওয়া গেছে। বাকি ১৭ জন নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নিহত বলে ধারণা দিয়েছিল মিশন। সৌদি মিশনের বরাতে মধ্যরাতে নিহত ১৩ জনের নাম-পরিচয় পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সে হিসেবে এখনো ৪ জন নিখোঁজ। হিমঘরে থাকা যে ৪টি লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি তা নিখোঁজ ৪ বাংলাদেশির হতে পারে।
দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ এতোটাই পুড়েছে যে তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্ট লাগতে পারে জানিয়ে মিশনের এক কর্মকর্তা রাতে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বাসে ১২ জন ওমরাহ যাত্রী ছিলেন বিদেশি। এর বাইরে যারা ছিলেন সবই বাংলাদেশি। ভিন দেশী ১২ জনের মধ্যে ৫ জনকে মৃত এবং ৭ জনকে আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে শনাক্ত করা গেছে। ফলে নিহতের তালিকায় আর কোনো বিদেশি থাকার সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে গেছে বাংলাদেশ মিশনের কনস্যুলার টিম। তারা স্থানীয় হাসপাতালে রাখা লাশ শনাক্ত এবং আহতদের চিকিৎসা বিষয়ে ঢাকাকে নিয়মিত ফলোআপ দিচ্ছে।
সৌদিতে নিহত ১৩ জনের পরিচয় (আপডেট)।
সৌদি আরবে থাকা বাংলাদেশ মিশনের বরাতে রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন জানান, সৌদির আরবের আসির প্রদেশের আবহা এলাকায় ২৭ মার্চে ওমরাহ যাত্রী বহনকারী বাস দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জন বাংলাদেশির পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন-
১। শহিদুল ইসলাম পিতাঃ মোঃ শরিয়ত উল্লাহ, সেনবাগ, নোয়াখালী। ২। মামুন মিয়া পিতাঃ আব্দুল আওয়াল, মুরাদনগর, কুমিল্লা।
৩। মোহাম্মদ হেলাল, নোয়াখালী।
৪। সবুজ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর।
৫। রাসেল মোল্লা, মুরাদনগর কুমিল্লা।
৬। মোঃ আসিফ, মহেশখালী কক্সবাজার।
৭। মোঃ ইমাম হোসাইন রনি পিতাঃ আব্দুল লতিফ, টঙ্গী, গাজীপুর।
৮। রুক মিয়া পিতাঃ কালু মিয়া, চাঁদপুর।
৯। সিফাত উল্লাহ, মহেশখালী, কক্সবাজার।
১০। গিয়াস হামিদ, দেবীদ্দার, কুমিল্লা।
১১। মোহাম্মদ নাজমুল পিতাঃ কাওসার মিয়া, কোতোয়ালি যশোর।
১২। রনি, পিতাঃ ইস্কান্দার, যশোর।
১৩। মোহাম্মদ হোসেন, কক্সবাজার।
সৌদির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আসির প্রদেশে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা সকলেই ওমরাহ পালনে মক্কা যাচ্ছিলেন। আসির প্রদেশ ও আভা শহরের সংযোগকারী ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ আকাবাত শার সড়কে সোমবার বিকাল ৪টায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কে থাকা একটি সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে বাসটি উল্টে যায় এবং তাতে আগুন ধরে যায়। হতাহতদের কাছাকাছি হাসপাতালে নেয়া হয়। সিভিল ডিফেন্স ও রেড ক্রিসেন্টের উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ চালায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরবের আসির প্রদেশের আবহা জেলায় বাস দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আহত বাংলাদেশি নাগরিকদের চিকিৎসার সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।