মুসলিম জাহানের সব থেকে পবিত্র মাস ‘মাহে রমজান’ এখন দ্বারপ্রান্তে। এ মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনে ইবাদত বন্দিগিতে নিজেদের সমর্পণ করে থাকে। দিন-রাত নামাজ, রোজায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ সময় রোজা থাকার পর তাদের শরীরের ঘাটতি মেটাতে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্য। পুষ্টির এই চাহিদা মেটাতে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যে নানারকম মূল্য ছাড় দিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট একদমই আলাদা। পবিত্র এই মাসটি আসলেই দেখা দেয় নানা ধরনের খাদ্য সংকট। বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এটি যে এক প্রকার কৃত্রিম সৃষ্টি তা কারো অজানা নয়। কারণ দীর্ঘকাল থেকে বাংলাদেশিরা এর সঙ্গে পরিচিত। তাই মাহে রমজান একদিকে যেমন খুশির বন্যা বয়ে আনে অন্যদিকে নিয়ে আসে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের প্রেক্ষাপট একটু বেশিই শোচনীয়। করোনা পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পুরো বিশ্বের অর্থনীতির চাকা থামিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীজুড়েই সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ অর্থ সংকট ও খাদ্য সংকটের। যার ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশেও, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বাজার আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে। প্রতিটি পণ্যের দাম রেকর্ড পরিমাণ। যা ক্রয় করা সাধারণ মানুষের জন্য স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসছে রমজানে এই মূল্যবৃদ্ধি যে আকাশটাকেও অতিক্রম করবে তা কারো অজানা নয়। কারণ এদেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত ধরে। যাদের ধারণা এই মাসটি ব্যবসায়ের মাস, মুনাফা কামানোর মাস। যারা রমজানের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সব ধরনের নিত্যপণ্য ও খাদ্যসামগ্রী মজুত করে ফেলে। যার ফলে দেখা দেয় ভয়াবহ খাদ্য সংকট। মানবসৃষ্ট এই কৃত্রিম খাদ্য সংকটের কারণে বাজারে চাহিদার চেয়ে জোগান কমে যায়। অর্থনীতির ভাষায়, ‘জোগানের চেয়ে চাহিদা বেশি হইলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়।’ আর এটাকেই পুঁজি করে খুচরা ব্যবসায়ীরা অধিক মূল্য নিয়ে থাকে।
ইতোমধ্যে দেশের বাজারে যে উত্তাপ লক্ষণীয় তা আর বাড়তে দেয়া যাবে না। যদি এই উত্তাপ বেড়ে যায় তবে সাধারণ মানুষগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। বিত্তশালীদের বাদ দিলে দেখা যায় অধিকাংশ মানুষ এখনই আমিষ ও সুষম খাদ্য থেকে বঞ্চিত। রমজানে এমন পরিস্থিতি থাকলে মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগবে। তাই স্বল্প আয়ের মানুষগুলোকে বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
রমজানে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিশেষ করে মাছ, মাংস, ডিম, চাল, ডাল, সবজি, তেল ইত্যাদির দাম কমিয়ে আনতে হবে। সরকার কর্তৃক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ফিক্সড করে দিতে হবে। এবং অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন কিছুতেই মজুত করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। আর এখন থেকেই প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি করতে হবে যদিও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা বিষয়টির দিকে নজর রাখছে কিন্তু এটি অনেকটাই সীমিত। যদি এই সংখ্যাটি বাড়ানো হয় অথবা প্রয়োজনে বিশেষ কয়েকটি ইউনিট গঠন করে মাঠ পর্যায়ে অভিযান চালানো যায় তাহলে হয়তো আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি লাভ করা সম্ভব। তাই ভোক্তা অধিদপ্তর ও প্রশাসনকে বলতে চাই রমজানের আগেই কয়েকটি বিশেষ ইউনিট গঠন করে বাজার তদারকি বাড়ান যেন কিছুতেই অসাধু ব্যবসায়ীরা সফল হতে না পারে। পরিশেষে বলতে চাই, মানুষ মানুষের জন্য। আসুন পবিত্র এই মাসে অন্যদের অসুবিধা উৎকণ্ঠা না বাড়িয়ে তাদের পাশে দাঁড়াই এবং উৎকণ্ঠাহীন একটি রমজান উপহার দিই।