বগুড়ার শেরপুরে ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়েছে। শনিবার (১৮মার্চ) সকাল ১১ টায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের শেরপুর শহরের ধুনটমোড় থেকে হাজীপুর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবিতে উপজেলা স্বার্থ রক্ষা পরিষদের ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে ব্যবসায়ী, পেশাজীবিসহ অন্তত ত্রিশটি সংগঠন একাত্মতা জানিয়ে ওই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
উপজেলা স্বার্থরক্ষা পরিষদের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কেএম মাহবুবার রহমান হারেজের সভাপতিত্বে শহরের স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে মহাসড়কের পূর্বপাশে ঘন্টাব্যাপি চলা ওই মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শেরপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব জানে আলম খোকা, শেরপুর উপজেলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম শিরু, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হিরু, জেলা বাস-মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আরিফুর রহমান মিলন, সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, পৌর কাউন্সিলর ফিরোজ আহম্মেদ জুয়েল, ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম আরফান, বিএইচএম কামরুজ্জামান রাফু, নুরুল ইসলাম নুরু, মোস্তাফিজুর রহমান নিলু, আব্দুল ওয়াহাব জোয়ার্দ্দার, আফছার আলী প্রমূখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্বার্থ রক্ষা পরিষদের নেতা মুকুল হোসেন।
সমাবেশে বক্তারা নির্মাণাধীণ ছয়লেন মহাসড়কের শেরপুর শহর ছাড়াও বনানী ও মাটিডালি এলাকায় ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণের দাবি জানিয়ে বলেন, এটি করা না হলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মন্দাভাব নেমে আসবে। এতে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। সেইসঙ্গে মহাসড়ক পারাপারে সীমাহীন ভোগান্তি তৈরী হবে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এছাড়া মহাসড়কের পূর্ব ও পশ্চিশ পাশের মানুষের মাঝে বিভাজন তৈরী হবে। তাই ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণ অতিব জরুরি। দ্রুত এই দাবি বাস্তবায়নের আহবান জানিয়ে বক্তারা আরো বলেন, অন্যথায় এই এলাকার মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। এমনকি জনগুরুত্বপূর্ণ ওই দাবি আদায়ে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারী দেন বক্তারা।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বার্থরক্ষা পরিষদের সভাপতি কেএম মাহবুবার রহমান হারেজ বলেন, এলেঙ্গা হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক ছয়লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সাসেক-২। বিগত সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শেরপুরে ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও সেটি বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। এতে করে জনমনে নানা প্রশ্ন ও ধোয়াশা তৈরী হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা না হলে আঠারটি মার্কেট, অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিপর্যয় নেমে আসবে। বিশেষ করে দেশের অন্যতম চালের মোকাম ও দই-মিষ্টির ব্যবসায় ধ্বস দেখা দিবে। ফলে এসব পেশার সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে যাবেন। তাদের পরিবারে দুর্বিসহ অবস্থা তৈরী হবে বলে জানান তিনি।
শেরপুর বাসস্ট্যান্ড ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম শিরু এ প্রসঙ্গে বলেন, বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে এই উপজেলার বুকচিরে উত্তরবঙ্গে গ্যাস চলে গেছে। কিন্তু আমরা এই গ্যাস ব্যবহারের সুবিধা পাইনি। তাই এবার ফ্লাইওভার নির্মাণের জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিটি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শেরপুরবাসী ঘরে ফিরবে না।
শেরপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব জানে আলম খোকা বলেন, ইতিপূর্বে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদে যৌথসভা করা হয়েছে। সেখানে ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণের কথা জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তারা। কিন্তু অদ্যবধি সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি নেই। বরং রাতের আঁধারে সবার চোখে ধুলা দিয়ে ছয়লেন সড়ক নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। যা অত্যন্ত দুঃখজন। কারণ শেরপুর শহরটি রক্ষার জন্য ফ্লাইওভার ও জনবহুল বাজার এলাকায় আন্ডারপাস নির্মাণ অতিব জরুরি। সেটি করা না হলে এই অঞ্চলের মানুষ চরম বিপদে পড়বেন। এই দাবিটি শেরপুরবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে শেরপুর শহরে ফ্লাইওভার নির্মাণ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিকট জোর দাবি জানান পৌর মেয়র জানে আলম খোকা।