দেশটির রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতি আইজ্যাক হারজোগ একটি সমঝোতা প্রস্তাব উপস্থাপিত করেছিলেন। কিন্তু শাসক জোট সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। বুধবার রাতে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে হারজোগ জানান, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ১০-সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েলের নতুন কট্টরপন্থী সরকার এবং পরিকল্পনার বিরোধিতাকারী প্রতিবাদ আন্দোলনের জেরে তৈরি হওয়া অচলাবস্থার অবসান ঘটানো।
বিক্ষোভকারীদের দাবি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে রাজনীতিবিদরা বিচার বিভাগের ওপর অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাবেন। প্রস্তাবগুলি গণতান্ত্রিক রীতিনীতি এবং আইনের শাসনকে ক্ষুণ্ন করছে বলেও সমালোচনা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এটি গণ বিক্ষোভকে প্ররোচনা দেবে বলেও মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে প্ল্যাকার্ড ধরে বলে যে সংস্কারগুলি গণতন্ত্রকে সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাবে। রাষ্ট্রপতি বলেন ‘’কয়েক সপ্তাহ ধরে সময়টা ভালো যাচ্ছে না। ইসরায়েল একটি গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেটি হলে আমরা অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবো।” হারজোগ বৃহস্পতিবার সকালে একটি মিডিয়া সম্মেলনে সরকারের সমালোচনার জবাব দিয়েছিলেন।
তার প্রস্তাবগুলিকে নির্ভুল হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তাঁর মতে এই আলোচনার শেষ হবে না। রাষ্ট্রপতির ভূমিকা এখানে মূলত আনুষ্ঠানিক। তিনি বারবার প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছে বিরোধী দলগুলির সাথে সংলাপ চালানোর জন্য নেসেটের মাধ্যমে আইন প্রণয়নের আবেদন করেছেন। কিন্তু সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। নেতানিয়াহু, আপাতদৃষ্টিতে সরকারের আরও কট্টরপন্থী জোট প্রতিনিধিদের চাপে অবিলম্বে এটি প্রত্যাখ্যান করেন। বুধবার রাতে জার্মানির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী বলেন-” দুর্ভাগ্যবশত, রাষ্ট্রপতি যে বিষয়গুলি উপস্থাপন করেছেন তা জোটের প্রতিনিধিদের দ্বারা সম্মত হয়নি এবং তিনি যে প্রস্তাবটি দিয়েছেন তার কেন্দ্রীয় উপাদানগুলি সরকারের শাখাগুলির মধ্যে প্রয়োজনীয় ভারসাম্য আনতে অক্ষম। এটাই দুর্ভাগ্যজনক সত্য।” নেতানিয়াহু বার্লিন সফরে বিতর্কিত আইনি সংস্কারের বিষয়টি উত্থাপন করেন যেখানে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ তাকে এটি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
হারজোগের সমঝোতার প্রস্তাবে স্কোলজ বলেছিলেন যে তিনি দেখতে পাচ্ছেন ইসরায়েলের সামনে বড় উদ্বেগের দিন আসছে। নেতানিয়াহু যুক্তি দিয়েছিলেন যে তার পরিকল্পনাগুলি ইসরায়েলের গণতন্ত্রকে প্রায় প্রতিটি পশ্চিমা গণতন্ত্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে তোলার চেষ্টা করে গড়ে তোলা হয়েছিলো। তিনি জোটের উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তোলেন। নেতানিয়াহুর ক্ষমতাসীন জোটের অতি-ডান সদস্যদের দ্বারা আনা প্রস্তাবগুলির মধ্যে রয়েছে এমন বিল যা রাজনীতিবিদদের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের অনুমতি দেবে। যার অর্থ একটি সাধারণ সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে আদালতের রায় বাতিল হতে পারে। পরিবর্তনগুলি সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীকে তার দুর্নীতির বিচার এড়াতে সাহায্য করতে পারে। হারজোগের সমঝোতা প্রস্তাব অনুযায়ী- হাইকোর্টের জন্য বাছাই কমিটিতে তিনজন মন্ত্রী, আদালতের সভাপতি, দুজন বিচারক এবং দুইজন সরকারি কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যা আদালতের সভাপতি এবং আইন মন্ত্রী দ্বারা অনুমোদিত হবে। যদিও কিছু পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে অতি-রক্ষণশীল দল এবং নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির সদস্যদের কথা মাথায় রেখে তৈরী করা হয়েছে। যা মেনে নিতে চায়নি নতুন উগ্র-ডান জোটের অংশীদাররা। বিরোধী দলগুলি অনেকেই আগে বলেছে যে তারা প্রস্তাবগুলির উপর আলোচনা করতে চায় না।
ইসরায়েলি মিডিয়ার মতে, সরকারের পতন আটকাতে নেতানিয়াহু বুধবার বার্লিনে তার ফ্লাইট বিলম্বিত করেছিলেন কারণ তিনি পরিকল্পিত বিচারিক পরিবর্তনের সম্ভাব্য সংশোধনী নিয়ে জোটের সদস্যদের সাথে আলোচনা করছিলেন। প্রধানমন্ত্রী, যিনি অতীতে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে নিজেকে বের করে আনতে পেরেছেন, তিনি তার চরমপন্থি অংশীদারদের ত্যাগ করে একটি কেন্দ্রবাদী দলের সাথে জোট গঠন করতে চাইছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান