ঢাকারবিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • অন্যান্য

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার হিরো আলমের কাছেও অসহায়

অনলাইন ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩ ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ । ১১৪ জন
বিভাগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশ এখন লুটেরাদের কবলে পড়েছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই গণতন্ত্র হত্যা করেছে। দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সব গণমাধ্যম বন্ধ করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আজও আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে জেলে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দমাতে পারবে না।

গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পূর্বঘোষিত ঢাকা বিভাগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল সবার উদ্দেশে বলেন, আসুন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য আমরা এগিয়ে চলি, আমাদের বিজয় ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার হিরো আলমের কাছেও অসহায়। আজকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমের কাছ থেকে তাদের প্রার্থীকে ৬০০-৭০০ ভোটে জিততে হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন ব্যক্তিকে জেতাতে নিজেদের প্রার্থীকে গুম করা হয়েছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান পরিস্থিতি।

বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানো এবং আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-নিপীড়ন বন্ধ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি, গণতন্ত্রবিরোধী দুর্নীতিবাজ সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারা দেশে একযোগে ১০টি সাংগঠনিক বিভাগীয় সদরে পঞ্চম ধাপের কর্মসূচি পালন করল বিএনপি ও সমমনা দল এবং জোটগুলো। নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজুলল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুজ্জামান রিপন, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, বেনজীর আহম্মেদ টিটো, সাইফুল আলম নিরব, সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা মহানগর বিএনপির তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, অঙ্গসংগঠনের আফরোজা আব্বাস, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এসএম জিলানী, সাদেক আহমেদ খান, শহিদুল ইসলাম বাবুল, মো. আবদুর রহিম, আবুল কালাম আজাদ, জাকির হোসেন রোকন, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বক্তব্য দেন। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ড. মোর্শেদ হাসান খান, নজরুল ইসলাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমানসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

কর্মসূচি উপলক্ষে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্টুরেন্ট মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেয়। তাদের মাথায় ছিল লাল-হলুদ-নীল-সবুজ টুপি ও কারও কারও হাতে ছিল জাতীয় ও বিএনপির পতাকা।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন আমাদের জাতির অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন। সেই লক্ষ্যেই আমরা ১০ দফা ও ২৭ দফা প্রণয়ন করেছি। এর মধ্য দিয়েই দেশের মানুষ প্রমাণ করেছে যে, তারা একটি দাবিতে আন্দোলন করছে। সেটা হলো এই অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারের পদত্যাগ। আমরা বলে আসছি অনির্বাচিত সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। কারণ এটা প্রমাণিত হয়েছে, যেসব উপনির্বাচন হয়ে গেল সেই উপনির্বাচনগুলোতে।

তিনি বলেন, আজকে সরকার টিকে আছে চাপার জোরে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। তারা একদিকে ঋণ করছে, আরেকদিকে জনগণের পকেট কাটছে। তারা জনগণের দিকে তাকায় না। উন্নয়নের জন্য অবশ্যই ঋণ নিতে হয়। কিন্তু সেই ঋণের টাকায় যদি পাচার করে কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি তৈরি করেন, ঋণ এনে ফ্ল্যাট কেনেন, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরি করেন–তাহলে সেই ঋণের টাকা বাংলাদেশের মানুষ পরিশোধ করবে কেন?

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে হাজার হাজার ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক তৈরি করেছে। তারা প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষ্টি-কালচার নষ্ট করছে। সরকার সংসদ থেকে শুরু করে সবকিছু ধ্বংস করে একটি ব্যর্থ জাতি তৈরি করতে চায়। তারা প্রতিনিয়ত জনগণের ঘৃণা কুড়াচ্ছে।

নতুন কর্মসূচি : গ্যাস-বিদ্যুৎ-চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ষষ্ঠ ধাপের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘পদযাত্রা’ হবে। এরপর ধীরে ধীরে উপজেলা, জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি হবে। এভাবে একপর্যায়ে ক্ষমতার মসনদ থেকে ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করব। ঢাকা মহানগরীতেও পদযাত্রা হবে। লংমার্চের মধ্য দিয়ে আমরা এদের পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটা রাষ্ট্র বানাতে চাই।

সরকারের পতন হবেই–ড. মোশাররফ : এদিকে একই ইস্যুতে গতকাল কুমিল্লার টাউনহল মাঠে বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারি সার দেশের ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি হবে। সেই পদযাত্রা কর্মসূচি থেকেই সরকার পতনের আওয়াজ উঠবে। তিনি বলেন, ভোট ডাকাত সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুর রশিদ ইয়াসিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাক মিয়া, সায়েদুল হক সাঈদ, মহানগর বিএনপির উদবাতুল বারী আবুসহ বিভিন্ন জেলার নেতারা।

আওয়ামী লীগ থাকলে দেশ ফকির হবে–মির্জা আব্বাস : গতকাল বিকেলে রাজশাহীতে বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, দেশে যে অবস্থা চলছে, তা অব্যাহত থাকলে অচিরেই দেশ ফকির রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তিনি বলেন, জিয়া পরিবার ব্যতীত অন্য কেউ এদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাতে পারবে না। রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মামুন অর রশিদের পরিচালনায় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান মিনু, শাহীন শওকত, ওবায়দুর রহমান চন্দন, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, শফিকুল হক মিলন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রমুখ।

বরিশালে সমাবেশ : বরিশাল ব্যুরো জানায়, গতকাল নগরীর জিলা স্কুল মাঠে বিএনপির সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে থাকতে রাজি। তবে গণতন্ত্রহীন থাকতে রাজি নয়। আসুন আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনি। বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার শাহাজাহান ওমর, মজিবুর রহমান সারোয়ার, জহির উদ্দিন স্বপন, বিলকিস জাহান শিরিন, আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে গেছে–আমীর খসরু : এদিকে ময়মনসিংহ পলিটেকনিট ইনস্টিটিউট মাঠে বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগের এখন একমাত্র ভরসা হলো রাষ্ট্রযন্ত্র। তারা আবারো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। আসলে আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে গেছে। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ফজলুর রহমান, হারুন অর রশিদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, মো. শরীফুল আলম, নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল হকসহ বিভিন্ন জেলার নেতারা।

আওয়ামী লীগ ফের ভোট ডাকাতি করতে চায়–নজরুল ইসলাম : চট্টগ্রামে বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ আরেকবার ভোট ডাকাতি করতে চায়, ভোট চুরি করতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ সেই সুযোগ দেবে না। নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, সব জিনিসের দাম বাড়লেও সরকারের মাথাব্যথা নেই। দুই সপ্তাহের মধ্যে দুবার জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করে, এ কথা আগে শুনিনি। এই সরকার জনগণের সমর্থনের পরোয়া করলে এটা করতে পারত না। চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবদীন ফারুক, গোলাম আকবর খন্দকার, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদিন, মাহবুবের রহমান শামীম প্রমুখ। বিকেল ৪টার দিকে সমাবেশে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি-মারামারির ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় নেতাদের নাম ধরে স্লোগান দেওয়া নিয়ে এ ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়া সিলেট, রংপুর, খুলনা, ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ করেছে বিএনপি।