কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে কোথায়, কে আগুন লাগিয়েছে তার প্রমাণ না পেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিরুনি অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ ১০টি সুপারিশ করেছে তারা। প্রথমত আগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা দায়েরের জন্যও সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের নিকট জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান ও জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আগুন লাগায়। দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় লাগে। বালুখালীর ১১নং ক্যাম্পের ১৭নং ব্লক থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ঘটনায় ২ হাজার ২০০ এর মতো শেল্টার পুড়েছে। ১৫ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, প্রায় ২ হাজার স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের এফসিএন কার্ড পুড়ে যায়। তবে নিহতের খবর পাওয়া যায় নি।
জেলা প্রশাসনের গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি ৬ মার্চ থেকে কাজ শুরু করে।
৩ দিনে মোট ৭৫ জনের সাক্ষাৎকার নেয় তদন্ত কমিটি। সেখানে সরকারি -বিসরকারি এনজিও প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, হোস্ট কমিউনিটি, লার্নিং সেন্টারের ইন্সট্রাক্টরদের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। পত্রিকার রিপোর্ট ও জনশ্রুতিও বিবেচনায় আনা হয়। ৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে নানা প্রমাণপত্র হিসেবে ৭৪ পৃষ্ঠা সংযুক্ত করা হয়েছে।প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রাস্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচল করতে পারে এমন প্রশস্ত করা যেতে পারে। ব্লকের রাস্তার পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরি, শেল্টারে ত্রিপলের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু যা অপেক্ষাকৃত কম দাহ্য পদার্থের তৈরি এমন কিছুর ব্যবহার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যত্রতত্র মার্কেট করা থেকে বিরত থাকা এবং বড় রাস্তার ধার ব্যতীত অন্যস্থানে দাহ্য পদার্থ আউটলেট করা থেকে বিরত থাকা, ঘনবসতিপূর্ণ ও অনেক স্থানে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অগম্য বিবেচনায় ক্যাম্পের প্রবেশ মুখে লেআউট স্থাপন, আগুন লাগলে নেভানোর কাজে রোহিঙ্গাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি। ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে ওয়ারলেস টাওয়ার স্থাপন ও ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পের পালানো রোধে নিরাপত্তা বেষ্টনি স্থাপন করা।উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১ জনের মৃত্যু হয়। রোহিঙ্গা ক্যম্পসমূহে বারবার কেন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে। এসব ঘটনায় বাহিরের কোন শক্তি কাজ করছে কিনা? খতিয়ে দেখার দাবি স্থানীয়দের।