ঢাকারবিবার , ১২ মার্চ ২০২৩
  • অন্যান্য

মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
মার্চ ১২, ২০২৩ ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ । ১০৯ জন
বন্ধ হয়ে যাওয়া সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের প্রবেশ দ্বার। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় সিলিকন ভ্যালি পরিচিত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আঁতুড় ঘর হিসেবে। এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন সহজ করতে ১৯৮৩ সালে এখানে টেক স্টার্টআপগুলোতে অর্থায়ন করার লক্ষ্যে বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থাপিত হয় সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি)। সম্প্রতি মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ব্যাংকটি দেউলিয়া হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশনের তথ্যানুসারে, গত শুক্রবার (১০ মার্চ) দেউলিয়া হওয়ার আগে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের মোট সম্পদ ছিল ২০৯ বিলিয়ন ডলার। অথচ বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) দিন শেষে ব্যাংকটি ৯৫ কোটি ডলার ঋণে পড়ে। কিন্তু কেন হঠাৎ এ অধঃপতন।

বিপদের শুরু যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বাড়ানোর পর থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে সুদহার বাড়ালে তা বিপজ্জনক হয়ে দেখা দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য। তাদের পক্ষে বেশি সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কম সুদে বিনিয়োগ করার ফলে মুনাফা কমে আসছিল। কমছিল বিনিয়োগও।

মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দেয় প্রযুক্তি খাতে মন্দা। সবমিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক থেকে তাদের মূলধন ‍তুলে নিচ্ছিলেন এবং নতুন বিনিয়োগও হচ্ছিল না। পুরনো যেসব ঋণ ছিল সেগুলোও পুনরুদ্ধার চলছিল ধীর গতিতে। ফলে ব্যবসায় দেখা দেয় মন্দা।

এরই মধ্যে খবর রটে, মূলধন সংকটে ভুগছে এসভিবি। ব্যাংকটি তারল্য (নগদ মুদ্রা) সংকট কাটাতে ২২৫ কোটি ডলার মূলধন জোগাড়ে নেমেছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। পরে বুধবার ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, তারা ২২৫ কোটি ডলার জোগাড় করতে শেয়ার বিক্রি করছে। এ ঘোষণাই এসভিবির কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়। কারণ, এর পর থেকে গ্রাহকরা ব্যাংকটি থেকে এক দিনের মধ্যে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার তুলে নেয় এবং বৃহস্পতিবার দিন শেষে ব্যাংকটি ৯৫ কোটি ডলার ঋণে পড়ে যায়।

বৃহস্পতিবার সকালে শেয়ারবাজারে এসভিবির স্টকের দাম কমতে শুরু করে এবং বিকেলের মধ্যে এটি অন্যান্য ব্যাংকের শেয়ারের মূল্যকেও নিম্নগামী করে ফেলে। ফলে বিনিয়োগকারীরা আবারও ২০০৭-২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করতে শুরু করেন। তবে তেমনটা ঘটেনি। কিন্তু তাতে এসভিবির ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুক্রবার সকালের মধ্যে এসভিবির শেয়ার লেনদেন বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত মূলধন বাড়ানোর প্রচেষ্টাও ত্যাগ করে। ফলাফল হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের আর্থিক নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকটিকে দেউলিয়া ঘোষণা করে বন্ধ করে দেয়।

তবে এসভিবির মতো ব্যাংকের দেউলিয়া হয়ে যাওয়া কি আবারও যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক সংকটের সৃষ্টি করবে কি-না এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তবে অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন, এসভিবির দেউলিয়া হওয়ার ঘটনা কোনো ডমিনো ইফেক্ট তৈরি করবে না, যার ফলে অন্যান্য ব্যাংকও প্রভাবিত হতে পারে। এ বিষয়ে বাজার বিশ্লেষক এড মোয়া বলছেন, ‘এ ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়ার প্রভাব বড় আকারে পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে যেসব ছোট ছোট ব্যাংক প্রযুক্তি এবং ক্রিপ্টোর মতো শিল্পের সঙ্গে কাজ করছে, তারা একটি খারাপ সময় পার করতে পারে।’

এসভিবি ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়ার প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য ব্যাংককে প্রভাবিত করার পাশাপাশি বিপদে ফেলেছে প্রায় ১৩ হাজার কিলোমিটার দূরের আরেকটি ব্যাংককেও। এর সঙ্গে যদিও এসভিবির কোনো সম্পর্ক নেই। তা সত্ত্বেও এসভিবির দেউলিয়া হওয়ার ঘটনা আস্থার সংকট তৈরি করেছে ভারতে মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে ১১৬ বছরের পুরনো এসভিসি কো-অপরাটিভ ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে।

মুম্বাইয়ের এসভিসি কো-অপারেটিভ ব্যাংক টুইটারে এসভিবি থেকে নিজেদের কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে একটি সতর্কবার্তা প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘এসভিসি ব্যাংকের সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা আমাদের সদস্য, গ্রাহক এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের ভিত্তিহীন গুজবে কান না দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’

ব্যাংকটি বিবৃতিতে আরও বলেছে, যারা ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার এসভিসি ব্যাংকের রয়েছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন ও সিএনবিসি