চীনের প্রযুক্তি শিল্পের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিত ধনকুবের বাও ফ্যান গত মাস থেকে নিখোঁজ আছেন এবং তার এই হারিয়ে যাওয়া চীনের সাম্প্রতিক একটি প্রবণতার প্রতি আগ্রহ তৈরি করেছে। আর তা হলো, বিলিয়নিয়ারদের গায়েব হয়ে যাওয়া। চায়না রেনেসাঁ হোল্ডিংসের প্রতিষ্ঠাতা বাও ফ্যান। এর ক্লায়েন্ট তালিকায় আছে ইন্টারনেট জায়ান্ট, টেনসেন্ট, আলীবাবা ও বাইডু।
তাকে চীনের প্রযুক্তি খাতের একজন টাইটান বা বিশাল ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা হয়। তার গায়েব হওয়ার পদ্ধতিটা অবশ্য দেশটিতে সুপরিচিত। যখন তার কোম্পানি ঘোষণা করলো, তারা চীন কর্তৃপক্ষের একটি তদন্তে সহায়তা করছে ঠিক তার আগে তিনি নিখোঁজ হন।
তবে বাওয়ের গায়েব হয়ে যাওয়া আরও একবার একটি দৃষ্টিভঙ্গির ওপরই স্পট লাইট ফেলছে। আর তা হলো দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এভাবেই চীনের অর্থনীতির ওপর তার নিয়ন্ত্রণ শক্ত করতে চাইছেন। এটা চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনের সময়।
যদিও এটিকে রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সেখানেই পরিকল্পনা করা হয়েছে চীনের আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোতে বড় ধরণের সংস্কার আনার বিষয়ে। একটি নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা হবে বেশিরভাগ আর্থিক খাত দেখভালের জন্য।
এখন অনেকগুলো সংস্থার কারণে কিছু ফাঁকফোকর তৈরি হয়েছে এবং নতুন সংস্থাটি সেগুলো বন্ধ করতে সক্ষম হবে বলে আশা করছে ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশটির কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালেই অন্তত পাঁচজন নির্বাহী ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছিলেন।
এর মধ্যে শিল্পগোষ্ঠী ফসুন ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান জু গুয়াংচ্যাঙও ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ফুটবল ক্লাব উলভারহ্যাম্পটনের মালিক হিসেবে পশ্চিমাদের কাছে পরিচিত। সে বছরের ডিসেম্বরে তার নিখোঁজের পর তার কোম্পানি জানিয়েছিল, তারা কর্তৃপক্ষের একটি তদন্তে সহায়তা করছে।
এর দুই বছর পর চীন-কানাডিয়ান ব্যবসায়ী জিয়াও জিয়ারহুয়াকে হংকংয়ে একটি বিলাসবহুল হোটেল থেকে তুলে নেয়া হয়। তিনি চীনের অন্যতম ধনী ব্যক্তি। গত বছর দুর্নীতির দায়ে তার জেল হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চে প্রেসিডেন্টকে ক্লাউন বলার পর নিখোঁজ হয়েছিলেন রিয়েল এস্টেট টাইকুন রেন ঝিকিয়াং।
পরে এক দিনের বিচারে মিস্টার রেনরে আঠার বছর জেল দেয়া হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগে। তবে সবচেয়ে আলোচিত গায়েব হওয়ার ঘটনা হলো আলীবাবার জ্যাক মা এর ঘটনা। ওই সময়ের চীনের সবচেয়ে ধনী এই ব্যক্তি চীন সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করেছিলেন।
দেশটির কমন প্রসপারিটি ফান্ডে দশ বিলিয়ন ডলার দেয়া ছাড়া প্রায় দুই বছর তাকে দেখা যায়নি। যদিও তার বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। মা এর অবস্থান এখনো পরিষ্কার। যদিও মাঝে মধ্যে তিনি জাপানে, থাইল্যান্ডে বা অস্ট্রেলিয়ায় বলে খবর বেরিয়েছিল।
তবে চীনের কর্তৃপক্ষ এসব ব্যবস্থাকে দেশটির ধনী ব্যক্তিদের নিয়ে কিছু আইনি ব্যবস্থা হিসেবে দেখাতে চেয়েছে যার উদ্দেশ্য দুর্নীতি দূর করা। এটা তাদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে যারা তাদের সম্পদ ও অন্য কারণে যথেষ্ট ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিলেন। এখন এই ক্ষমতাই চীন সরকার ফেরত নিতে চাইছে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন।
এর আগে বেইজিংয়ের মূল দৃষ্টি ছিল মূলত সামরিক, ভারী শিল্প ও স্থানীয় সরকারের ওপর। শি এখন তার ফোকাস বড় করছেন অর্থনীতির আরও খাত তার নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য। তার কমন প্রসপারিটি পলিসিকে দেখা হয়েছে অর্থনীতির ওপর বড় ধরণের অভিযান হিসেবেই।
দ্যা ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নিক মারো বিবিসিকে জানিয়েছেন, মাঝে মধ্যে এসব ঘটনা একটি বড় বার্তা দেয়, বিশেষ সুনির্দিষ্ট শিল্প বা ইন্টারেস্ট গ্রুপকে। তবে দিন শেষ একটি অর্থনীতির একটি অংশের ওপর সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয় বলে মনে করেন তিনি।