জীবনের শুরু হয়েছিল এই সমুদ্রে। এখনও মানব সভ্যতা টিকে আছে এই সমুদ্রের ওপর নির্ভর করেই। পৃথিবীর ৭০ ভাগ প্রাণের বসবাস এই সমুদ্রে। এছাড়া ডাঙায় থাকা প্রাণীদের জন্য সরবরাহ করা অক্সিজেনেরও বেশিরভাগ আসে এই সমুদ্র থেকেই। কিন্তু মানুষের দূষণের কারণে সেই সমুদ্রই আজ বিপন্ন হওয়ার পথে। গবেষকরা জানিয়েছেন, বিশ্বজুড়ে সমুদ্রে ১৭১ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিক টুকরা রয়েছে। এর সম্মলিত ওজন হবে ২.৩ মিলিয়ন টন!
১৯৭৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণের পর এই ভয়াবহ তথ্য দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল। আটলান্টিক, প্রশান্ত এবং ভারত মহাসাগরের পানি বিশ্লেষণ করেছেন তারা। অন্তত ১২ হাজারটি স্থান থেকে তারা নমুনা সংগ্রহ করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৫ সালের পর থেকে প্লাস্টিক দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
গাইরেস ইনস্টিটিউটের গবেষণা পরিচালক লিসা এরডল বলেন, এটি আগের অনুমানের চেয়ে অনেক বেশি। যে হারে প্লাস্টিক সমুদ্রে প্রবেশ করছে জরুরী নীতিগত পদক্ষেপ না নিলে ২০৪০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ ২.৬ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। গত কয়েক দশকে প্লাস্টিক উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গতিশীল হয়নি। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের মাত্র ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত হচ্ছে। বাকিগুলো সব পরিবেশে মিশে যাচ্ছে এবং দূষণ ঘটাচ্ছে।
সেই প্লাস্টিক বর্জ্যের বিপুল পরিমাণ সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। বেশিরভাগই ভূমি থেকে আসে। নদী, বৃষ্টি, বাতাস কিংবা ড্রেনের মাধ্যমে এগুলো সমুদ্রে জায়গা করে নেয়। তাছাড়া সমুদ্রেও মাছ ধরার নৌকাগুলো প্রচুর প্লাস্টিক ফেলে। প্লাস্টিক কখনো পচে যায় না। এগুলো বরঞ্চ ছোট ছোট টুকরো হয়ে ভেঙ্গে যায়। এই কণাগুলিকে সমুদ্র থেকে পরিস্কার করাও কঠিন।
সামুদ্রিক জীবনও এই প্লাস্টিকের কারণে বিপন্ন হওয়ার পথে। তারা এই প্লাস্টিকের বর্জ্যে আটকে যায়। আবার খাবার মনে করে গিলে ফেলে। এতে বিলিয়ন বিলিয়ন সামুদ্রিক প্রানির মৃত্যু হয়েছে। প্লাস্টিক শুধু একটি পরিবেশগত বিপর্যয় নয়, প্লাস্টিক একটি বিশাল জলবায়ুগত সমস্যাও। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে প্লাস্টিক।