যুক্তরাষ্ট্রের মিসিগান অঙ্গরাজ্যের অধিবাসী সারাহ লিলি । বগুড়ায় এসেছিলেন পর্যটক হয়ে ও কিছু দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে । বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও রাজধানীতে কাজের সুবাদে অবস্থান করেছেন সারাহ : বগুড়ায় এবারই প্রথম । বগুড়া জেলা শহরে অবস্থান কালীন সময়ে বগুড়া শহর ঘুরে দেখেছেন , বন্যা কবলিত এলাকা সমূহ পর্যবেক্ষণ করেছেন, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ ও বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানসমূহের অন্যতম মহাস্থানের পুন্ড্রনগর ছিল তার ভ্রমণ তালিকায় ।
বগুড়ার মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ সারাহ লিলি । আমেরিকানদের সম্পর্কে বাংলাদেশীদের ধারণা এবং এখানকার মানুষের জীবনযাপন উপভোগ করেছেন । চরাঞ্চলের মানুষের জন্য এবং বিশেষ করে নিম্নবিত্ত মানুষদের অতিসাধারণ জীবনযাপন তাকে হৃদয়তাড়িত করেছে । তিনি অবাক হয়েছেন এখনও আমাদের দেশে বাল্যবিবাহ হয় , মেয়েরা বাচ্চাপ্রসব করতে মৃত্যুবরণ করে । মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যর হার আরোও কমাতে আরোও কার্যকরী ভূমিকা পালন করা উচিত বলে মনে করেন সারাহ লিলি । যদিও বিগত যে কোন সময়ের চাইতে সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী , দেশে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু উভয়ই কমেছে। ২০১৭ সালে গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৭৬ জন থাকলেও বর্তমানে তা ১৭২ জন। তিনি মনে করেন সরকারী প্রচারণা কার্যক্রম, এনজিও কার্যক্রমের সাথে সাথে সামাজিক বেষ্টনীর সচেতনতা বৃদ্ধি এই ভয়াবহ বিষয়টিকে তামিয়ে দিতে ফলপ্রসু হবে । সারিয়াকান্দির ডাকাতমারি চরে জাহাঙ্গীর-হাসনা দম্পত্তির ছোট্ট টিনের চালার ঘরে বুধবার দুপুরের কাবার খেতে খেতে সারাহেএসব কথা বলছিলেন । চরাঞ্চলের মানুষের অতিসাধারণ আয়োজনে ভালোবাসা মিশ্রিত অপ্যায়ন তাকে অভিভূত করেছে । তিনি বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ এই বিষয়গুলিতে আরোও ভালো করবে এবং সময়ের পরিক্রমায় সফল হবে ।
এনজিও পরিচালিত প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী , শিক্ষক , অভিভাবক ও স্থানীয়দের সাথে বেশকিছু সময় কাটান আমেরিকান এই দাতাবন্ধু । নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য স্থাপিত বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষণকেন্দ্র , ছোট্ট উদ্যোক্তা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান , নিরাপদ খাবার পানির উৎস , স্বাস্থ্যসুরক্ষা ব্যবস্থা , কৃষিপ্রকল্প উপকারভোগীদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদের কর্মঠ জীবন বোঝার চেষ্টা করেছেন । বাংলাদেশের মানুষের জন্য বাড়তি দ্রব্যমূল্যের চাপ কমাতে ও সুশাসন নিশ্চিতে সরকারের আরোও কাজ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি ।
চরাঞ্চলের মতো প্রত্যন্ত জায়গায় সরকারী বিদ্যুৎ দেখে ভূয়সী প্রশংসাও করেন আবার বাড়তি বিদ্যুৎমূল্য ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় মনোকষ্টও বোধ করেন তিনি । তিনি আশা করেন নিরাপদ সহজলভ্য খাদ্যনিরাপত্তা, শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সুধিার মানোন্নয়নে বেসরকারী দাতাসংস্থার কাজ করার পরিবেশ আরোও উন্নত করতে সরকার আরোও সহযোগীতা করবে । স্থানীয়ভাবে পরিচিত শনপচার চর যা কিনা সারিয়কান্দির দলিলদস্তাবেজে ডাকাতমারা চর নামে পরিচিত সেখানে পৌছাতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে করেন সারাহ ।
সম্রাট অশোক, শাহ সুলতান বলখী মাহিসাওয়ার এর মাজার শরীফ, শিলাদেবীর ঘাট, দুধপাথর , জিয়তকুন্ড কিংবা প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের নিদর্শন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন । মহাস্থান যাওয়ার পথে ভ্রমণ করেন বেহুলার গোবিন্দ ভিটা । মনসা দেবী ও চাঁদ সওদাগরের কাহিনী তাকে বিমোহিত করেছে । বেহুলা ও লক্ষীন্দরের বাসর ঘর ও জিয়ত কুন্ডরে পৌরাণিক কাহিনী শুনেছেন মনোযোগ দিয়ে ।
বগুড়া থেকে ফেরার পথে পেরখ করেন বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার দই ও মহাস্থানের কটকটি । বগুড়াবাসীর জন্য দিয়েছেন একরাশ শুভেচ্ছা । সারাহ লিলির আপনভূমি যুক্তরাষ্ট্রে তার পরিবারের জন্য মহাস্থানের কটকটি উপহার পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন – “ ইউর হসপিটালিটি উইল বি ইন মাই গুড বুক । পিপলস অফ বগুড়া আর রিয়েলি ভেরী ওয়েল । ”