আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিনটি বস্তু মুক্তিদানকারী ও তিনটি বস্তু ধ্বংসকারী। মুক্তিদানকারী তিনটি বস্তু হলো—১. গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় করা। ২. সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে সত্য কথা বলা ৩. সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। আর ধ্বংসকারী তিনটি বস্তু হলো, ১. প্রবৃত্তি পূজারি হওয়া। ২. লোভের দাস হওয়া। ৩. অহংকারী হওয়া। আর এটিই হলো সবচেয়ে মারাত্মক।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৬৮৬৫)
মুক্তিদানকারী তিনটি মহৎ গুণ
তা ছাড়া আল্লাহভীরুতা মানুষকে প্রবৃত্তির তাড়না থেকে সংযত রাখে। এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রভুর সম্মুখে দণ্ডায়মান হওয়ার ভয় করে এবং নিজেকে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত রাখে জান্নাত তার ঠিকানা হবে। (সুরা নাজিআত, আয়াত : ৪০-৪১)
২. সর্বদা সত্য কথা বলা : সত্যবাদিতা অত্যন্ত মহৎ একটি গুণ, যা মানুষকে কল্যাণের পথ এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের পথ দেখায়। যে সমাজে এ মহৎ গুণের চর্চা যত বেশি হয়, উন্নতি ও সাফল্যে সেই সমাজ তত বেশি অগ্রগণ্য থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থেকো।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১১৯)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দুই রানের মাঝখানের বস্তুর (লজ্জাস্থান) জামানত আমাকে দেবে, আমি তাঁর জান্নাতের জিম্মাদার।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭৪)
কারণ পৃথিবীতে যত ফিতনা-ফাসাদ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয় তার বেশির ভাগই হয়ে থাকে জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের দ্বারা। এ দুটোকে যে সংযত করবে, রাসুল (সা.) তাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
৩. সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করা : যেকোনো পরিস্থিতিতে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা মুমিন বান্দার অনন্য বৈশিষ্ট্য।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(আল্লাহর বিনয়ী বান্দা তারাই) যখন তারা ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না বা কৃপণতা করে না; বরং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করে।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৬৭)
অন্য আয়াতে বলেন, ‘নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৭)
এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতার বিষয়টি নির্ধারিত হয়ে গেছে। অতএব তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করো এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সচেষ্ট হও। কেননা জান্নাতি ব্যক্তি জান্নাতি আমলের ওপরেই মৃত্যুবরণ করবে, চাই সে যে আমলই করুক না কেন। আর জাহান্নামি ব্যক্তি জাহান্নামি আমলের ওপরেই মৃত্যুবরণ করবে, চাই সে যে আমলই করুক না কেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৪১)
অন্য বর্ণনায় বলেন, সফলকাম ওই ব্যক্তি, যে ইসলাম গ্রহণ করল, তাকে প্রয়োজন মাফিক জীবিকা প্রদান করা হলো এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তার ওপর সে সন্তুষ্ট থাকল। (মুসলিম, হাদিস : ১০৫৪)
ধ্বংসকারী তিনটি মন্দ বৈশিষ্ট্য
১. প্রবৃত্তিপূজারি : প্রবৃত্তিপূজারি একটি নিকৃষ্ট স্বভাব। এটি ব্যক্তিকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কাফিরদের বলে দাও যে আল্লাহকে ছেড়ে তোমরা যাদের আহ্বান করো, তাদের ইবাদত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। বলে দাও, আমি তোমাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করব না। তাতে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যাব এবং সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকব না।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৫৬)
আল্লাহ স্বীয় রাসুলকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘তুমি কি তাকে দেখেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে? তুমি কি তার জিম্মাদার হবে? (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৪৩)
২. লোভের দাস হওয়া : লোভ-লালসা মানুষের চরিত্রের দুর্বলতম ও হীনতম বৈশিষ্ট্যের একটি। যার সাহায্যে বিভিন্ন অনৈতিক কাজের রাস্তা প্রশস্ত হয়। সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলার পরিবেশ তৈরি হয়। তাই তো আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি তাদের পাবে পার্থিব জীবনের প্রতি অন্যদের চেয়ে বেশি আসক্ত, এমনকি মুশরিকদের চেয়েও। তাদের প্রত্যেকে কামনা করে যেন সে হাজার বছর বেঁচে থাকে। অথচ এরূপ দীর্ঘ আয়ু তাদের (মৃত্যু বা আখিরাতের) শাস্তি থেকে দূরে রাখতে পারবে না। আসলে তারা যা করে, সবই আল্লাহ দেখেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৯৬)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি আদম সন্তানকে এক ময়দান ভর্তি স্বর্ণ দেওয়া হয়, তাহলে সে দুই ময়দান ভর্তি স্বর্ণের আকাঙ্ক্ষা করবে। আর তার মুখ কখনোই ভরবে না মাটি ব্যতীত (অর্থাৎ কবরে না যাওয়া পর্যন্ত)। বস্তুত, আল্লাহ তাওবাকারীর তাওবা কবুল করে থাকেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৩৯)
৩. আত্মগরিমায় ভোগা : অহংকার ও দাম্ভিকতা গর্হিত অপরাধ। অহংকারী মানুষকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আমাদের আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে ও তা থেকে অহংকার ভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের জন্য আকাশের দরজাগুলো উন্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না সুচের ছিদ্রপথে উষ্ট্র প্রবেশ করে। এভাবেই আমরা অপরাধীদের শাস্তি প্রদান করে থাকি।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৪০)