বগুড়ার লাল মরিচ দেশজুড়ে প্রসিদ্ধ । প্রতিবারের ন্যায় এবারেও উৎপাদনের পাশাপাশি ফলনও হয়েছে ভালো। মরিচ চাষের জন্য অনূকুল আবহাওয়া থাকায় গাছে পোকামাকড় তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। বাজার দর ভালো থাকার কারণে খুশি চরাঞ্চলের চাষিরা। বগুড়ার লাল মরিচ দেশ জুড়ে খ্যাতি থাকায় চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন মরিচ শুকানোর কাজে।
দিন-রাত মরিচ নিয়ে কাজ করার কারণে চরে চরে দেখা দিয়েছে লাল শুকনো মরিচের ঝাঁঝ। রোদ ভালো থাকার কারণে নারী পুরুষ সকলেই কাজ করছেন। ক্ষেত থেকে মরিচ তোলা বাছাই করা ও শুকানোর জন্য নদী তীর রক্ষা বাঁধের দু পাশে মরিচের ঝাঁঝ শুরু হয়েছে। কাঁচা অবস্থায় প্রতি হেক্টরে প্রায় ৩০০ মণ হলেও শুকানোর পর হয় প্রায় ৭৫ মণ। সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা, কর্নিবাড়ি, বোহাইল ও চালুয়াবাড়িসহ যমুনার নদীর বিভিন্ন চরে মরিচ চাষ করা হয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের একটি অন্যতম ফসল হলো মরিচ।
যমুনা বেষ্টিত বগুড়ার চরাঞ্চলের সারিয়াকান্দি, গাবতলী,ধুনটের মরিচের গাছ থেকে পাকা লাল মরিচ উঠাচ্ছে কৃষি শ্রমিকরা। তারা মরিচ শুকানো ও বাছাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। ঝড় ঝঞ্ঝার আগে মরিচ শুকিয়ে ঘরে তুলতে বিশাল কর্মযঞ্জ চলছে যমুনার চরাঞ্চলে । মশলা প্রস্তুত কারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা মরিচে শুকানের কাজে ব্যস্ত শ্রমিকদের ঘাড়ের উপর নি:শ্বাস ফেলছে। ঝড় বৃষ্টিতে যেন শুকনা মরিচের ক্ষতি না হয়।
জেলার যমুনার চরাঞ্চল সারিয়াকান্দি,সেনাতলা, গাবতলী, ধুনট উপজেলায় রবি মৌসুমে ৪১০ কোটি টাকার শুকনা মরিচ উৎপাদনের আশা করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক এনামুল হক। এবার কৃষক মরিচে ভালো দাম পেয়ে খুশি।বগুড়ার সারিাকন্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ি চরের মোতালেব সরকার জানান ,গত বছর মরিচ চাষিরা শুকনা মারিচ বিক্রি করেছে পাইকারি ২০০ টাকা কেজি । শহরে সেই মরিচ বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা কেজি। এবার শুকনা মরিচ তাদের ভাগ্য ফিরিয়ে দিয়েছে।
এবার রবি মৌসুমে বগুড়ায় ৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষি বিভাগ জানায় , উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল শুকনা ওজনে ১৯ হাজার ৯৩৮ মেট্রিকটন। তবে এবার মরিচ চাষে হয়েছে ৬২২৯ হেক্টর জামিতে। মরিচের চাষ কম হলেও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে গেছে। এবার কাঁচা ও শুকনা মরিচের দাম বেশি হওয়ায় দামও বেড়েছে। তাই গত বছর কাঁচা ও শুকনা মরিচ হয়েছিল ৩৫০ কোটি টাকার। এবার মরিচের দাম বেড়ে যাওযায় বগুড়ায় এবার ৪১০ কোটি টাকার শুধু শুকনা মরিচ বেচা কেনা হবে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান ,গত বছর রবি মৌসুমে জেলায় মরিচে ভালো দাম না পাওয়ায় এবার কৃষকরা এবার ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছে। ভুূট্টায় স্বল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ বছর মরিচের প্রধান উৎপাদন অঞ্চল সারিয়াকান্দিতে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে মরিচের বদলে ভুূট্টা চাষ হয়েছে। জেলা অন্যান্য অঞ্চলেও মরিচের চাষ কমেছে। তবুও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে মরিচের উৎপাদন সন্তোষ জনক। এবার কাঁচা ও শুকনা মিলিয়ে মরিচের উৎপাদন হয়েছে ৬৮৭ মেট্রিকটন। কৃষি কর্মকর্তারা জানান এবার রবি মৌসুমে কাঁচা মরিচ উৎপাদন হয়েছে ২৭৭ কোটি টাকার আর শুকনা মরিচ হয়েছে ৪১০ কোট টাকার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি অফিসার ফরিদ উদ্দিন জানান, এবার ২৭৭ কোটি টাকার কাঁচা ও ৪১০ মোট টাকার শুকনা মরিচ উৎপাদন হয়েছে। চাষের লক্ষ্যমাত্রা কম হলেও কোন প্রকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছর রবি মৌসুমে ৩৫০ কোটি টাকার কাঁচা ও শুকনা মরিচ উৎপাদন হয়েছিল । গত বছর কাঁচা মরিচ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি । এবার সেই মরিচ ৭০ টাকা। আর গত বছর শুকনা মরিচ বিক্রি হয়েছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি । এ বছর শুকনা মরিচ পাইকারি ৫০০ টাকা। এবার মরিচের দাম বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক করণে গত বছরে ৩৫০ কোটি টাকার স্থলে সেই শুকনা মরিচ বিক্রি হবে ৪১০ কোটি টাকা।
তথ্যসূত্র ও ছবি: বাসস