ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১২ অক্টোবর ২০২৩
  • অন্যান্য

ফিলিস্তিনের পতাকা উড়ালেই মামলা , নিষিদ্ধ মিছিল-মিটিং

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
অক্টোবর ১২, ২০২৩ ১০:৩৭ অপরাহ্ণ । ৪০ জন

গাজা উপত্যকায় এখনো হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। অঞ্চলটিতে পানি, জ্বালানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ বন্ধ। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো নিন্দা না জানিয়ে উলটো ফিলিস্তিনপন্থিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণে মরিয়া হয়ে উঠেছে পশ্চিমা দেশগুলো। খবর গার্ডিয়ান, বিবিসি, সিএনএনের।

একটু দেরি করে হলেও এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে গেল ব্রিটেন। দেশটির মাটিতে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়ালেই ফৌজদারি মামলার ভয় দেখাল প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সরকার।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলো ব্রাভারম্যান ব্রিটেনের রাস্তায় ফিলিস্তিনি পতাকা প্রদর্শনের বিষয়ে পুলিশ প্রধানদের একটি সতর্কতা জারি করেছেন। মঙ্গলবার ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের প্রধান কনস্টেবলদের উদ্দেশ করে একটি চিঠি দেন তিনি।

চিঠিতে ‘ফিলিস্তিনের পতাকা বৈধ নাও হতে পারে’ বলে উলে­খ করেন। ব্রাভারম্যান বলেন, ফিলিস্তিনি পতাকা উড়ানো অথবা এই অঞ্চলে আরবদের স্বাধীনতার পক্ষে কোনো স্লোগান দেওয়া একটি ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য হতে পারে। আর এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে ‘সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন প্রদর্শন’ হিসাবে দেখা হয় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

ব্র্যাভারম্যান আইন প্রয়োগকারীদের হামাসের পক্ষে যে কোনো বিক্ষোভ অথবা সমর্থন প্রদর্শনের বিরুদ্ধে ‘আইনের পূর্ণ শক্তি’ নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইহুদি সম্প্রদায়কে ভয় দেখানোর যে কোনো প্রচেষ্টাও অন্তর্ভুক্ত আছে।
লন্ডনের কেনসিংটনে ইসরাইলি দূতাবাসের বাইরে সোমবার ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভে একটি স্লোগান ছিল ‘নদী থেকে সমুদ্র পর্যন্ত, ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে।’

ব্রাভারম্যান তার চিঠিতে জানিয়েছেন যে, এ শব্দগুচ্ছটিকে একটি ইঙ্গিত হিসাবে ব্যাখ্যা করা উচিত। এতে নিহিত আছে ইসরাইল নির্মূল করার একটি সহিংস ইচ্ছা।

ব্রাভারম্যান বলেন, ইসরাইলকে বিশ্ব থেকে মুছে ফেলার সহিংস আকাক্সক্ষা আর কিছু নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে এর ব্যবহার ধারা-৫ অনুযায়ী পাবলিক অর্ডার অপরাধের সমান হতে পারে। এই স্লোগানটি সাধারণত জর্ডান নদী থেকে ভ‚মধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আকাক্সক্ষা বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

ব্রিটেনের দেখাদেখি আরও কঠিন শাস্তির ঘোষণা দিল ‘ইউরোপের রাজা’ জার্মানি। ইসরাইলের পতাকা পোড়ালেই সোজা ‘চৌদ্দশিকে’ যেতে হবে।

বৃহস্পতিবার সকালে দেশটির পার্লামেন্টে দেওয়া এক বক্তব্যে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি হামাসকে মহিমান্বিত করা, হত্যাকে ক্ষমা করার স্লোগান অথবা ইসরাইলের পতাকা পোড়ালে তাকে ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’

এ সময় তিনি সামিদাউন নামে একটি ফিলিস্তিনপন্থি দলকে নিষিদ্ধ করা হবে বলেও ঘোষণা দেন। শনিবার বার্লিনের নিউকোলন এলাকার রাস্তায় ইসরাইলের বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা উদ্যাপনের জন্য পথচারীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করায় ফিলিস্তিনপন্থিদের অভিযুক্ত করেছেন তিনি।

জার্মানিতে হামাসের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার ঘোষণাও দেন শলৎজ। এছাড়া ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে জার্মান সব সহায়তা স্থগিত করবে বলেও পার্লামেন্টে উল্লেখ করেন তিনি।

বলেন, ‘আমাদের মাপকাঠি হবে এ প্রকল্পগুলো কিভাবে এই অঞ্চলে শান্তি ও ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে। এ পর্যালোচনা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো নতুন উন্নয়ন সহযোগিতা করব না।’

ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশে প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করেছে ফ্রান্সের পুলিশ। প্যারিসে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অ্যাসোসিয়েশন ফ্রান্স প্যালেস্টাইন সলিডারিট ও কালেকটিফ ন্যাশনাল পাইক্স জাস্ট ডিউরেবল প্যালেস্টাইন নামের দুটি দলের বিক্ষোভ সংগঠিত হওয়ার কথা ছিল। ‘জনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটার ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে’ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বুধবার সন্ধ্যায় ফ্রান্সের শহর লিয়নের একটি বিক্ষোভ স্থানীয় পুলিশ নিষিদ্ধ করেছে। সোমবারও একই অঞ্চলের একটি বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বিক্ষোভ দমনে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ করেছিল পুলিশ ।

কানাডার মন্ট্রিল ও টরেন্টোতে ফিলিস্তিনি জনগণের সমর্থনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে ফিলিস্তিনি পতাকা প্রদর্শন করে ইসরাইলকে বয়কট করার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও দেশের অন্যান্য কর্তৃপক্ষ কানাডাজুড়ে এমন বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে ট্র–ডো বলেন, ‘ইসরাইলের ওপর হামাসের হামলার সমর্থনে সারা দেশে যে বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে আমি তার তীব্র নিন্দা জানাই।’

সোমবার গভীর রাতে ইসরাইলের জন্য সংহতি সমাবেশে যোগ দিয়েছেন ট্রুডো। কানাডার অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারাও ইসরাইলের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে রোববারের ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভকে অঞ্চলটির গভর্নর ক্যাথি হচুল ‘ঘৃণ্য ও নৈতিকভাবে বিদ্বেষপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছেন।