ঢাকাসোমবার , ১২ জুন ২০২৩
  • অন্যান্য

কুরবানির জন্য ঝালকাঠিতে ১৯ হাজার পশু প্রস্তুত

অনলাইন ডেস্ক
জুন ১২, ২০২৩ ১২:৩১ অপরাহ্ণ । ৫৭ জন
সংগৃহীত:ছবি

পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে ঝালকাঠি জেলায় এবার কুরবানির জন্য প্রায় ১৯ হাজার পশু প্রস্তুত রয়েছে বলে জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। তবে ঝালকাঠিতে কুরবানি উপলক্ষ্যে বাণিজ্যিকভাবে খামার না থাকলেও পারিবারিকভাবে এসব পশু প্রস্তুত করা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে ওই সূত্রটি। এসব পশুর মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া প্রাকৃতিক উপায়ে কাঁচা ঘাস, খড়, বিভিন্ন প্রকারের ভুষি, ডালের গুঁড়া, ভাত, ভাতের মাড়, খৈল ও কিছু ভিটামিন খাইয়ে মোটাতাজা করণে ব্যস্ত সময় পার করছে পারিবারিক খামারিরা। বাড়তি লাভের আশায় বাড়িতে বাড়িতে পশুর বাড়তি যত্ন আর লালন পালনে নারী পুরুষ মিলে ব্যস্ত সময় পার করছেন পারিবারিক খামারি পরিবারগুলো।

জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঝালকাঠি জেলা কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে আঠারো হাজার একশ একুশটি। কুরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে আঠারো হাজার আটশ বাষট্টিটি। এসব গবাদি পশুর মধ্যে ষাঁড় আট হাজার একশ এগারোটি, বলদ তিন হাজার দুইশত একত্রিশটি, গাভী দুই হাজার একশ আটাশিটি, মহিষ ৩৭টি, ছাগল পাঁচ হাজার দুইশত ছিয়ানব্বইটি, সতেরোটি ভেড়া কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে পারিবারিক খামারি রয়েছে তিন হাজারেরও বেশি। কুরবানির জন্য আঠারো হাজার একশ একুশটি পশুর চাহিদা থাকলেও প্রস্তুত রয়েছে আঠারো হাজার আটশ বাষট্টিটি। উদ্বৃত্ত সাতশ একচল্লিশটি স্থানীয় বিভিন্ন হাটের চাহিদা পুরণ করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন ঝালকাঠি প্রাণিসম্পদ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বেড়েই চলছে গো-খাদ্যের দাম। পারিবারিক খামারিদের এখন প্রতিদিন গো-খাদ্যে খরচ বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। মৌসূমী ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে গরু আমদানি করলে ন্যায্য মূল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে খামারিদের লোকসান গুনতে হবে অনেক।

কৃষক ও খামারিরা জানিয়েছেন, কেউ বাড়ির গোয়ালে আবার কেউ পারিবারিক খামারে এসব পশু মোটাতাজা করছেন। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সবুজ ঘাস খাইয়ে পশু মোটাতাজা করছেন তারা। খড়ের পাশাপাশি খৈল, গমের ভুষি, ভুট্টার গুড়া, ধানের কুঁড়া, মুগের ভুষি, খড় ও বুটের খোসা খাওয়ান অনেকে। জেলার ছোট-বড় পারিবারিক পশুর খামারে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আসছে কোরবানির ঈদে এসব পশু বিক্রি করে বাড়তি আয়ের আশা করছেন তারা।

সদর উপজেলার দারাখান গ্রামের ওয়ালিউর রহমান বলেন, তার পারিবারিক খামারে দেশি-বিদেশি মিলে ১০টি ষাঁড় মোটাতাজা করা হচ্ছে। এ খামারে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দামের পশু আছে।

সদর উপজেলার ডুমুরিয়া এলাকার কঙ্কন ব্যাপারী জানান, ১২টি গরু নিয়ে তিনি পারিবারিক খামার গড়ে তুলেছেন। এরমধ্যে ৪টি দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভী এবং কুরবানিতে বিক্রির জন্য ৫টি বলদ রয়েছে। বাকিগুলো বিক্রির অনুপযোগী। তবে যে পরিমাণে গো খাদ্যের দাম তাতে খরচ পুশিয়ে লাভ করাটা খুবই কষ্টসাধ্য।

পারিবারিক খামার পরিচালনাকারী সুজন সরকার বলেন, গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে ৩৭কেজি ওজনের এক বস্ত গমের ভুষির বর্তমান বাজার মূল্য ২ হাজার ২০০ টাকা, পুর্বে ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। ৭৪ কেজির এক বস্তা খৈল এখন ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা, গত বছর ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। ৫০ কেজি ধানের কুঁড়ার দাম ৯০০ টাকা, গত বছর ছিল ৭০০ টাকা। প্রতি কেজি খড় এখন ১৫ টাকা, আগে ছিল ১০ টাকা। এছাড়া খেসারি ও ছোলার ভুষির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। গত কয়েক বছরে ৭ থেকে ৮ দফা গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে।

অন্যান্য পশু চাষীরা বলেন, শ্রমিকদের দুই বছর আগে বেতন ছিল প্রতিদিন ৫শ টাকা। এখন প্রতিদিন সাতশ পঞ্চাশ টাকা কাজ করাতে হচ্ছে। পশু পালনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে কেউ খামার করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। পাশাপাশি ব্যাংক ও এনজিওর ঋণের অতিরিক্ত সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে খামারিরা খুব একটা লাভের মুখ দেখছেন না।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ডা. মো. ছাহেব আলী জানান, ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা জেলার বিভিন্ন ব্যাংকের সাথে কথা বলেছি। প্রতিটি হাটে ব্যাংকের লোক থাকবে। গবাদি পশু ক্রেতা এবং বিক্রেতারা যে কোন ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং কিউআর কোড ব্যবহার করে ই-ব্যাংকিং লেনদেন সেবা গ্রহণ করতে পারবে। জেলায় প্রায় ১৯ হাজার পশু ক্রয় বিক্রয় হবে বলে আমরা আশা করছি। জেলার ৪উপজেলার প্রতিটি উপজেলার খামার পরির্দশন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ ঔষধপত্র দিচ্ছি।