ঢাকাসোমবার , ৩ জুলাই ২০২৩
  • অন্যান্য

কাঁচা মরিচের দামের রেকর্ড এখন দেশজুড়ে

অনলাইন ডেস্ক
জুলাই ৩, ২০২৩ ১২:০৬ অপরাহ্ণ । ৬০ জন
সংগৃহীত:ছবি

রেকর্ড দামের কারণে দেশজুড়ে আলোচনায় এখন কাঁচা মরিচ। কোরবানির ঈদের দুই সপ্তাহ আগেও রাজধানীতে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। ঈদের কয়েক দিন আগে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। এর পর থেকে দাম আর কমেনি।
বরং লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় উঠে যায়। তবে গতকাল রবিবার আমদানির প্রভাবে কাঁচা মরিচের তেজ কমতে শুরু করেছে।সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল সকালে কাঁচা মরিচ ভর্তি ছয়টি ভারতীয় ট্রাক দেশে আসে। আমদানি করা এই কাঁচা মরিচের প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৪৯ থেকে ৫০ টাকা।
খুচরা বিক্রি হওয়ার কথা ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। প্রতি ট্রাকে ১০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ রয়েছে। সেই হিসাবে ঈদের ছুটির পর প্রথম দিনেই দেশে এসেছে ৬০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ। আজ সোমবার সকালে আরো ১৫ ট্রাক কাঁচা মরিচ দেশে প্রবেশ করবে।
হিলি স্থলবন্দরের ছয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি পেয়েছে। আজ থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়েও কাঁচা মরিচ আসবে। পাইপলাইনের এসব মরিচ দেশে এলে বাজারে এবার কাঁচা মরিচের দাম আরো কমবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।বাজার পরিস্থিতি
এক দিন আগেও গত শনিবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে খুচরায় কাঁচামরিচ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। এক দিনের ব্যবধানে গতকাল তা ১০০ থেকে ১২০ টাকা কমে ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

কারওয়ান বাজারে গতকাল পাইকারিতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকায়। গত শনিবারে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছিল ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকায়।ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষ কম কিনছে। এ ছাড়া দু-এক দিনের মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচা মরিচ বাজারে ব্যাপকভাবে ঢুকতে পারে। এসব কারণে কাঁচা মরিচের দাম কমেছে।

গতকাল রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা ও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো এখনো জমে ওঠেনি। বিক্রেতা ও ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগ সবজি বিক্রেতা এখনো দোকানই খোলেননি।

উত্তর বাড্ডা বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. মেহেদী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে আজ (রবিবার) কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমছে। তাই আমরাও কমিয়ে বিক্রি করছি। এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকায়। শনিবারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয় প্রায় ৬০০ টাকা কেজি দরে।’

বেশ কিছুদিন ধরেই সরবরাহ কমে গিয়ে দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। দাম নিয়ন্ত্রণে ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গত ২৫ জুন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ঈদের ছুটির পর গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমদানি করা ৫৫ টন কাঁচা মরিচ দেশে এসেছে। রাতে আরো আসার কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৮৩০ টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দেশে এসেছে মোট ৯৩ টন।

এদিকে মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ ক্রেতারা কাঁচা মরিচ কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম করে কিনছে অনেকে। ক্রেতাদের অভিযোগ, ৫০ গ্রাম ও ১০০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনতে গেলে তাদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা বাড়তি দাম রাখছেন।

রামপুরা কাঁচাবাজারের ক্রেতা মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘১০০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনলাম, আমার কাছ থেকে ৬০ টাকা রাখা হলো। এই হিসাবে এক কেজির দাম পড়ল ৬০০ টাকা। আরেকজন ৫০০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনল, তার কাছ থেকে রাখল ২৫০ টাকা।’

যে দামে আমদানি হচ্ছে
গতকাল ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে যে ছয় ট্রাক কাঁচা মরিচ দেশে এসেছে, তার প্রতি টনের এলসি মূল্য ৪৫০ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৪৯ থেকে ৫০ টাকা। ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান জানান, আগামীকাল সকালে আরো ১৫ ট্রাক কাঁচা মরিচ দেশে আসবে। আশা করা যায়, দেশের বাজারে এবার মরিচের দাম কমবে।

কাঁচা মরিচ আমদানিকারক আশরাফুল রহমান জানান, দায়সারাভাবে চলছে ভোমরা স্থলবন্দরের কাজ। ঈদের ছুটি শেষ হলেও কাস্টমস কর্মকর্তা যোগদান না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কাঁচা মরিচ একটি পচনশীল পণ্য। এটি যথাসময়ে লোড-আনলোড করতে না পারলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

এদিকে ভোমরা বন্দরের একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, ঈদের ছুটি শেষে রবিবার আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হলেও সার্ভার জটিলতার কারণে পণ্য খালাসের অনুমতি পাওয়া যায়নি। গতকাল সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত মাত্র দুটি এলসি অনুমোদন পায়।

সার্ভার জটিলতায় ভোমরা বন্দরে কাঁচা মরিচ আটকে যাওয়া নিয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা এর পেছনে সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন।

আমদানির খবরে হিলিতে দাম কমেছে
আমদানির খবরে এক দিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে দেশি কাঁচা মরিচ কেজিতে কমেছে ৩০০ টাকা। গতকাল হিলি বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম থাকলেও দেশি কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, যা এক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়।

হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী মো. ইউসুফ আলী জানান, হিলি স্থলবন্দরের ছয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি পেয়েছে।

বন্দরের ইজারাদার হিলি পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাব মল্লিক জানান, গত বছরের ২৪ আগস্ট থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ ছিল। গত ২৫ জুন সরকার আবারও কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়। এর ফলে ২৬ জুন থেকেই হিলি বন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হয়। গত ২৬ জুন ২৭ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে এই বন্দর দিয়ে।

সবজির দাম বেড়েছে
ঈদের ছুটির পর বাজার খুললেও বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কম থাকায় বিভিন্ন সবজির দাম বেড়েছে। গতকাল রাজধানীর বাজারে প্রায় সব সবজি কেজিতে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। গতকাল প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা পেঁপে ৬০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, কচুর মুখী ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা দাম হাঁকা হয়।

মাছের দামও বাড়তি
ঈদের ছুটির পর মাছবাজারেও রয়েছে অস্বস্তি। প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তবে তাজা রুই কিনতে আরো ৫০ টাকা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। বাগদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ ও গলদা ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে আইড়, চিতল, বেলে মাছ আকারভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকা কেজি। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকায়। আর ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।