বসন্তকালীন ব্যস্ত কূটনৈতিক শিডিউলের মধ্যেই আরেক পুরনো বন্ধুকে স্বাগত জানাতে যাচ্ছে চীন। ব্রাজিলের বামপন্থী নেতা ও প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার চীন সফর শুরু হচ্ছে বুধবার। আগামী শনিবার পর্যন্ত তিনি চীনে থাকবেন। এই সফর থেকে চীন ও ব্রাজিল দুই দেশেরই চাওয়ার শেষ নেই। দুটোই উন্নয়নশীল দেশ এবং ক্রমশ অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বে প্রভাবশালী অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদারের মধ্য দিয়ে এই উন্নয়নের গতি আরও বৃদ্ধি পাবে দেশ দুটির। সেই লক্ষ্যেই গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসেই বন্ধু দেশ চীন সফরের মনোস্থিত করেন লুলা। পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করেন, তার এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন যুগের সূচনা হবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিশাল প্রতিনিধি দল নিয়ে লুলার সফরের কথা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, চীন ব্রাজিলের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে প্রস্তুত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে এই সফর বড় ভূমিকা রাখবে।
তাছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়াতে ইতিবাচক শক্তি ছড়িয়ে দেবে এই সফর।
অনেক আগে থেকেই লুলার চীন সফরের কথা ঠিক হয়ে ছিল। তবে দিন তারিখ নির্ধারণে কিছুটা সময় লেগেছে। প্রথমে মঙ্গলবার এই সফর শুরুর কথা ছিল। পরিকল্পনা ছিল, তিনি প্রথমে সাংহাই আসবেন এবং সেখান থেকে বুধবার বেইজিং যাবেন। তবে সম্প্রতি ফ্লু ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। এরপরই সফর একদিন পিছানোর সিদ্ধান্ত হয়। এটি হতে যাচ্ছে লুলা দা সিলভার ৫ম চীন সফর। তবে এবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম তিনি কোনো পূর্বাঞ্চলীয় দেশ সফর করছেন।
একজন বামপন্থী নেতা হিসেবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন লুলা দা সিলভা। এর আগে তিনি যখন ব্রাজিলের ক্ষমতায় ছিলেন তখনই তিনি চীনকে বন্ধু হিসেবে আপন করে নিয়েছিলেন। ফলে তার এই সফর নিয়ে দুই পক্ষই অত্যন্ত আশাবাদী। তার সর্বশেষ ক্ষমতার সময় চীন তখনও অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ার হয়ে ওঠেনি। তবে এখন বিশ্বের সবথেকে বড় অর্থনীতি নিয়ে এশিয়া মহাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এই দেশ। ফলে চীনের কাছ থেকে ব্রাজিলের আশাও আছে ব্যাপক।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু সেখানে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণে হতাশ হতে হয়েছে তাকে। জো বাইডেন প্রশাসন ব্রাজিলের আমাজন বনকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে যথেষ্ট সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বের দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভুগছে। লুলার আশা ছিল তিনি এই সংঘাত নিরসনে মধ্যস্ততা করবেন। কিন্তু এমন প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।