বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের মধ্যে বৈঠকটি গতকাল বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেই বৈঠকে দেশে এই বছরের শেষ কিংবা আগামী ২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু দেখতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এ ক্ষেত্রে একটি ‘মডেল’ নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছে দেশটি। জানা যায়, এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বাংলাদেশ সময় গতকাল মধ্যরাতে বৈঠকে শেষে ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় সোমবার (১০ এপ্রিল) সেখানকার একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশের পরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।
জানা যায়, বৈঠকে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) চান অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। একটা মডেল নির্বাচন করতে হবে। আমি বলেছি, অবশ্যই; এটা আমাদেরও উদ্দেশ্য। আমরাও মডেল নির্বাচন চাই।
সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এ ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা স্বচ্ছ গণতন্ত্রে সবসময়ই বিশ্বাস করি। তবে এ ব্যাপারে আপনাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সাহায্য চাই। আপনারও (যুক্তরাষ্ট্র) আমাদের সাহায্য করেন, যেন একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারি।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আশ্বস্ত করেছে বলেও ড. মোমেন সাংবাদিকদের জানান।
বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে বলেও মন্ত্রী জানান। এছাড়া ব্লু ইকোনমি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর খুনিকে (রাশেদ চৌধুরী) ফেরত চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
রোববার (৯ এপ্রিল) ওয়াশিংটন ডিসিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের আমন্ত্রণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি সফর করছেন। স্থানীয় সময় সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুর নাগাদ ওয়াশিংটনে দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক হয়
বৈঠকের বিষয়ে রোববার ওয়াশিংটন ডিসিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আমেরিকার সঙ্গে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক। আমেরিকা আমাদের সবচেয়ে বন্ধু দেশ, সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ, বড় ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে তাদের সঙ্গে। এগুলো আগামী ৫০ বছরে আরও শক্তিশালী কীভাবে করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে মোমেন বলেন, বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরতের বিষয়টি তুলে ধরা হবে।
তিনি বলেন আমেরিকার মতো একটি দেশ, এ দেশ আইনের দেশ, এদেশে কেন খুনিকে আশ্রয় দেওয়া হবে? এই খুনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে এখানে দিব্যি আরামে আছে। অবশ্যই আমরা বিষয়টি বার বার তুলে ধরব।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বৈঠক হয়। অন্যদিকে মানবাধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো বৈঠকে আলোচনা হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কার অবস্থান জানিয়েছে।
জানা গেছে আগামী ১৩ এপ্রিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেশে ফেরার পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে, গত বছরের ৪ এপ্রিল ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।