ঢাকামঙ্গলবার , ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • অন্যান্য

বগুড়ায় মৃতপ্রায় করতোয়ার বুকে চলছে চাষাবাদ

অনলাইন ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪ ১২:৫৪ অপরাহ্ণ । ৩৫ জন

উত্তরাঞ্চলের একসময়ের প্রমত্তা নদী করতোয়া এখন যেন মৃতপ্রায়। বেশির ভাগ স্থানেই কোনো পানি নেই। বগুড়া জেলার প্রবেশমুখ শিবগঞ্জ উপজেলার পলাশী পয়েন্ট থেকে মহাস্থান সেতু পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৫ কিলোমিটার নদীর বুকের বেশির ভাগ স্থানেই চলছে চাষাবাদ। কোথাও তৈরি করা হয়েছে বীজতলা, কোথাও রোপণ করা হয়েছে বোরো ধান, আবার কোনো কোনো এলাকায় রয়েছে আলুর ক্ষেত।

মাঝেমধ্যে দু-একটি স্থানে পানির অস্তিত্ব থাকলেও সেটিও ডোবার  মতো, নেই পানির প্রবাহ।করতোয়া এই অঞ্চলের এক ঐতিহাসিক নদী। প্রাচীন পুণ্ডু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল এই নদীকে ঘিরেই। পরবর্তী সময়ে বগুড়া শহর ছাড়াও শেরপুর ও গোবিন্দগঞ্জের মতো প্রাচীন জনপদ গড়ে ওঠে এই নদীতীরে।

এককালের উত্তাল প্রবহমান এই নদীর প্রাচীনত্ব এতটাই যে পুরাণেও এই নদীর উল্লেখ রয়েছে। পৌরাণিক কাহিনি মতে, শিবের করনিঃসৃত জলধারা প্রবাহিত হয়েই করতোয়ার উৎপত্তি। সেই উত্তাল ও বহমান নদী এখন শীর্ণকায় এক খালে পরিণত হয়েছে। কালের সাক্ষী এই নদীর বগুড়া অংশের উৎসমুখ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালী।
পাউবো জানায়, আশির দশকের শুরুতে কাটাখালীর খুলশী পয়েন্টে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়। মূলত এর পর থেকেই গতি হারাতে থাকে করতোয়া। এখন কাটাখালীতে নদীর উৎসমুখের তলদেশ অনেক উঁচু হওয়ায় সেখানে পানিপ্রবাহ বন্ধ। এ কারণেই দক্ষিণাংশের দীর্ঘ এলাকাজুড়ে এই মৌসুমে করতোয়ার বুকে চলছে চাষাবাদ।নদীর বুকে চাষাবাদ করে খুশি এলাকার কৃষকরা।

শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুল্যাপুর এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে অন্যান্য কৃষকের মতো তিনিও বোরো ধান রোপণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত বর্ষা-বাদল না হলে ছয় মাসের খোরাক ঘরে তুলবের পারমো। সব বছর ধান ঘরোত তোলা যায় না। দেখা যায় খুব ঝরি (বৃষ্টির স্থানীয় নাম) হলো তাহলে লদীর পানিত ধান ডুবে সব শ্যাষ। এজন্নি আগেভাগেই ধান লাগান লাগে। য্যেন বোশেখ মাসের মদ্দেই ধান ঘরোত তোলা যায়।’দেবীপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘লদীর মাটিত ধান লাগালে সার-খৈলের দরকার পড়ে না। পলি মাটি তো, এমনি ধান ভালো হয়। যিবার পানি একেবারেই শুকে যায়, সেই বার খালি শ্যালো দিয়ে একটা সেচা দেওয়া লাগে।’ একই গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম ও আলমগীর হোসেন জানান, নদীর তীরে যাদের জমি আছে তারাই সাধারণত নদীর জায়গায় আইল দিয়ে ধান চাষ করে। এ ক্ষেত্রে উভয় তীরের জমির মালিক জায়গা ভাগাভাগি করে নিয়ে চাষাবাদ করে থাকেন।

শিবগঞ্জ উপজেলা অংশের ৩৫ কিলোমিটার এলাকার তথ্য নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে নদীর ১০টি পয়েন্টে কিছুটা পানির অস্তিত্ব রয়েছে। এর মধ্যে গুজিয়া, সাদুল্যাপুর, দেওয়ানতলা, আমতলী, শিবগঞ্জ হাটের পূর্বপাশ, উপজেলা সদরের চিকাদহ, পৌরসভার পেছনের অর্জনপুর, পার আচলাই, মহাস্থানের গোবিন্দভিটা ও শিলাদেবীর ঘাটে পানি আছে। এই ১০ পয়েন্টে পানির অস্তিত্ব থাকলেও তা প্রবহমান নয়। এসব স্থানে নদীর গভীরতা তুলনামূলক বেশি হওয়ায় ডোবার আকৃতি ধারণ করে পানির দেখা মিলছে। এ ছাড়া অন্য এলাকায় পানি একেবারে নেই বললেই চলে।

যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড শিবগঞ্জ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ (পওর) শাখার কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা পর্যন্ত ১২৩ কিলোমিটার করতোয়া নদীর অবস্থাই করুণ। যেহেতু শিবগঞ্জ উপজেলার পাশেই রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়েছে, এ কারণে প্রভাবটা শিবগঞ্জে বেশি। করতোয়ার প্রাণ ফেরাতে দুই হাজার ৯৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘স্মার্ট করতোয়া রিভার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে যে প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে, সেটি পুরো অনুমোদন হলে করতোয়া আবারও আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।

তিনি বলেন, ওই প্রকল্পের মধ্যে বগুড়া শহর অংশের ১৭ কিলোমিটারকে উন্নয়নের আওতায় নিয়ে তা অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। অবশিষ্ট অংশ অনুমোদিত হলে ১২৩ কিলোমিটার নদীর বুকে আর চাষাবাদ করার কোনো সুযোগ থাকবে না।