ঢাকাবুধবার , ১৯ জুলাই ২০২৩
  • অন্যান্য

বগুড়ায় পুলিশের ছোঁড়া টিয়ারশেলে অসুস্থ স্কুল শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার
জুলাই ১৯, ২০২৩ ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ । ৯৪ জন
পুলিশের ছোঁড়া টিয়ারশেলের ধোয়ায় অসুস্থ হয়েছেন প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী

বগুড়ায় বিএনপির পদযাত্রার চলাকালে শহরের ইয়াকুবিয়া গার্লস স্কুল মোড়ে সংঘর্ষের সময় পুলিশের ছোঁড়া টিয়ারশেলের ধোয়ায় অসুস্থ হয়েছেন প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের অনেকেই বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। বাকিরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

আইসিইউ বেডে শুয়ে থাকা ইয়াকুবিয়া গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্নেহা আক্তার জানায়, মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ক্লাশ করছিলাম। হঠাৎ অনেক জোরে জোরে শব্দ হতে থাকে। এরপর ক্লাশের ভেতর ধোঁয়ায় ভরে যায়। তখন চোখ জ্বালা করছিল, নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। পরে ম্যাডাম এসে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়ার মা খাদিজা বেগম জানান, বিদ্যালয় থেকে খবর পেয়ে হাসপাতালে আসি। মেয়ে টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে স্যালাইন দিয়ে রেখেছেন চিকিৎসকরা।

ইয়াকুবিয়া গার্লস স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস কবির বলেন, ‘টিয়ারশেলের ধোয়ার কারণে প্রথমে আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাশরুমের বাইরে নিয়ে আসি। পরে অবস্থা বেশি খারাপ মনে হলে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের অন্তত একশ’র বেশি শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বাবা-মারা অনেককে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেছেন।’

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. শফিক আমিন কাজল বলেন, স্কুলের পাশের রাস্তায় টিয়ারশেল নিক্ষেপের কারণে শিক্ষার্থীরা ধোঁয়ায় বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অনেকের সাময়িকভাবে শ্বাসকষ্ট হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনেকে ধোঁয়ার কারণে ভয় পেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে এটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে। আর হাসপাতালে অনেক লোকজন ভিড় করছেন, এতেও তারা নার্ভাস থাকছে।  অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছে।

 

খবর পেয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে যান জেলা বিএনপি সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাসহ অন্য নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু পরিদর্শন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে পুলিশ-বিএনপি নেতাকর্মীদের  সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।  এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এর আগে বিএনপির মিছিল ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে এসে সোজা রাস্তা দিয়ে সাতমাথায় প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মিছিলের পেছন থেকে তারা ইট ছুড়ে মারতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ তীব্র হলে টিয়ারশেল এবং পরে রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। সংঘর্ষে পুলিশের অন্তত ছয় সদস্য আহত হন। প্রায় আধাঘণ্টার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পরে পুলিশ বিএনপির মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে এর কিছুক্ষণ পরে শহরের নবাববাড়ী রোডে বিএনপির দলীয় কার্যালয় এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। সেখানেও পরিস্থিতি শান্ত করতে দুই রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে হয় পুলিশকে।

জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দীকী রিগ্যান দাবি করেছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, আমরা নিরাপত্তার জন্য মোড়ে অবস্থান নিয়েছিলাম। বিএনপির মিছিলের সঙ্গে আমাদের কোনো কিছুই হয়নি। তারা অতর্কীতে হামলা করে পুলিশের ওপর। এতে আমাদের অন্তত ৬ জন সদস্য আহত হয়েছেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটা টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে হয়।