কোন আইনে জামায়াত নিষিদ্ধ হচ্ছে—জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস দমন (বিরোধী) আইনের ১৮ ধারায় এমন সুযোগ আছে। যেকোনো সময় ঘোষণা হবে। তিনি বলেন, জামায়াত আগেই নিষিদ্ধ ছিল। জিয়াউর রহমান এসে তাদের আবার রাজনীতির অধিকারটা দিয়েছেন। এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলো এবং এ দেশের সুধীসমাজ উভয়ই জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য অবিরাম বলে আসছিল। এটি জনগণের একটি দাবি ছিল।
গত সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের বিষয়ে ‘সর্বসম্মত’ সিদ্ধান্ত হয়। গত মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার জামায়াত নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। নিয়ম অনুযায়ী জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয় আইনগত মতামত দেওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
নিষিদ্ধ করার পর জামায়াত-শিবির প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা যদি কোনো কর্মকাণ্ড বা কিছু করতে চায়, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা তো স্বাভাবিক।
জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পর দেশে আবার অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হবে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির তো এই অবস্থা তৈরি করেই ফেলেছে। এর পেছনে তাদের যথেষ্ট যোগসাজশ রয়েছে। কোটা আন্দোলনের সব কিছু মেনে নেওয়ার পরও এই আন্দোলন থামছে না, বরং একটি সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। ছাত্ররা কোনো দিন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতো না—যদি তারা এ ধরনের পরামর্শ না দিত।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে এই যে এতগুলো মানুষ হতাহত হলো—এটা কি শুধু পুলিশের গুলিতে হয়েছে? কার গুলিতে কতজন নিহত, কতজন আহত হয়েছে, আমরা সবই প্রকাশ করব। ছাত্রদের সামনে রেখে পেছন থেকে বিএনপি, জামায়াত, শিবির—জঙ্গি সংগঠনগুলো সম্পৃক্ত হয়েছিল। জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা অনেক দিনের চাহিদা ছিল। সেটির প্রক্রিয়া আজ চলছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জড়িত থাকার অভিযোগ করে আসছিলেন সরকারের মন্ত্রীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ বলে ঘোষণা করেছিলেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকলে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলও খারিজ হয়ে যায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন না থাকলেও রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা নিষিদ্ধ ছিল না। সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলির কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর ১০ বছর পার হলেও সে বিচার এখনো শুরু হয়নি।
২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হবে কি না—সেটি জানতে আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তখন তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন, রায় শিগগির হবে। ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার জন্য উপযুক্ত আইন থাকতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ সংশোধন করা হচ্ছে। এটা মন্ত্রিপরিষদের অ্যাপ্রুভালের জন্য অপেক্ষমাণ।
২০২৩ সালের ১১ জুন আনিসুল হক ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে আবারও একই উত্তর দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী হিসেবে জামায়াতের বিচার করার জন্য যে আইন সংশোধন করার কথা আমি আগে বলেছি, সে প্রক্রিয়া কিন্তু চলমান এবং সংশোধনের জন্য আইনটি ক্যাবিনেটে কিছুদিনের মধ্যে যাবে।’