ঢাকাবুধবার , ২৩ আগস্ট ২০২৩
  • অন্যান্য

মুচমুচে বেসন ও ডালের পেঁয়াজু রেসিপি বানান

স্টাফ রিপোর্টার
আগস্ট ২৩, ২০২৩ ১:৪৫ অপরাহ্ণ । ৬৩ জন
সংগৃহীত ছবি:

আজকে বলবো কিভাবে মুচমুচে পেঁয়াজু রেসিপি তৈরি করবেন,  অর্থাৎ হোটেলের স্টাইলে পেঁয়াজ বানানোর উপকরণ ও প্রণালীর সঠিক পদ্ধতি। আমি যে পিয়াজু  বানানোর ধাপগুলো বলবো,  সেমিস্টারে সাধারণত হাটবাজারে বানানো হয়।

এছাড়াও মসুর ডাল দিয়ে এবং বেসনের মাধ্যমে কিভাবে আপনি পিয়াজু বানাতে পারবেন।  সেই রকম টিপসও থাকবে এই আর্টিকেল এর মধ্যে। তো চলুন বিস্তারিত জানা যাক…।

হোটেলের স্টাইলে পিয়াজু বানানোর উপকরণ

  1. মসুরের ডাল বা বেসন।
  2. মরিচ ।
  3. লবণ।
  4. তেল (সয়াবিন তৈল)।
  5. টমেটো কুচি (প্রয়োজন মাফিক)।
  6. আদা বাটা (সামান্য)।
  7. রসুন বাটা।
  8. পেঁয়াজ কুচি (আপনার পছন্দ মতো)।

মুচমুচে পিয়াজু রেসিপি

কুরমুরে মজা তার মুচমুজে পিয়াজু রেসিপি তৈরি করা খুবই সহজ ব্যাপার।  অর্থাৎ কোন রকমের ডাল বাটাবাটির প্রয়োজন হয় না।

  • আমি গুড়া পিয়াজো বা ছোট পেঁয়াজির জন্য নিয়েছি দেড় কাপ পরিমান পেঁয়াজ কুচি।
  • এরপর দিলাম আধা কাপ পরিমাণ ঝাল কাঁচামরিচের কুচি।
  • অতঃপর লবণ দিলাম পরিমাণ মতো 2 টেবিল চামচ।

এরপর কাঁচা মরিচ লবণ ও পেঁয়াজ কুচিকে একসঙ্গে হাত দিয়ে দলা পাকিয়ে মতিয়ে মিক্স করব।  এতে করে কাঁচা মরিচের যে ফ্লেভারটা আছে তার সম্পূর্ণ পেঁয়াজ কুচির মধ্যে মিলে যাবে,  এবং পেঁয়াজের টুকরোগুলো থেকে পানি বের হয়ে একটা রসালো ভাব সৃষ্টি হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ  পেঁয়াজকুচির দলা পাকানোর পর যে পানি বের হবে,  সেটাতেই আমরা পিয়াজু তৈরি করব।  এছাড়া বাড়তি কোনো পানি নিব না।

এরপর আমি আধা কাপ পরিমাণ বেসন দিয়ে দিলাম।  আপনি চাইলে এখানে খেসারী ডান্স যুক্ত করতে পারেন,  তবে সেটা আপনার পছন্দের উপর নির্ভর করছে।

সাথে আমি ২ টেবিল চামচ পরিমাণ আটা দিয়েছি। (আপনি চাইলে আটার পরিবর্তে ময়দা ব্যবহার করতে পারেন।),  তবে নিশ্চিত হবেন যে এই দুটির যেকোনো একটি উপাদান ব্যবহার করতে হবে। তাহলে পিয়াজু টা আঠালো হওয়ার কাজ করবে।

এরপর এক টেবিল চামচ মরিচের গুঁড়া,  এবং এক চা চামচ পরিমাণ হলুদ গুঁড়া ঢেলে দিলাম। আপনি ঝালের পরিমাণটা আপনার স্বাদ অনুযায়ী বুঝিয়ে দিবেন। এবার সবশেষে দিয়ে দিচ্ছি হাফ চা চামচ পরিমাণ আস্ত জিরা।

পেঁয়াজুল নিনজা ট্রিকসঃ পিয়াজু বানানোর সময় যদি আপনি জিরা ব্যবহার করেন,  তাহলে একটা অন্যরকম ফ্লেভার বা সুঘ্রাণ ছড়াবে।

এরপর হাতের সাহায্যে উপরের সবগুলো উপকরণকে একসঙ্গে ভালোমতো মাখিয়ে নিতে হবে। এভাবে আপনি হাতের দোলা পাকিয়ে যতবার মাখবেন,  ততই পেঁয়াজের মামলেট টা তৈরি হয়ে যাবে।

যখন হাত দিয়ে মাখাতে মাখাতে একসময় আঠালের মতো হাতে লেগে যাওয়ার প্রবল অবস্থা হবে। তখন বুঝে নিতে হবে যে উপকরণ গুলোই একসঙ্গে ভালোমতো মিক্স করা হয়ে গেছে। যদি ভাল মত মাখানোর পরও আপনাদের মনে হয় যে উপকরণগুলোতে হালকা পরিমাণ পানি রয়েছে,  তাহলে প্রয়োজন অনুসারে হালকা বেসন বা আটা ময়দা মিক্স করে নিতে পারেন।

যখন আপনি হাত দিয়ে ডালের গড়ার মতো করে গোল আকৃতি দিবেন এবং নিচে ছেড়ে দিবেন,  তখন যদি দলা পাকিয়ে পিঁয়াজের উপকরণ গুলি বাটিতে পড়ে। তাহলে বুঝে নিবেন যে পিয়াজুল প্রকৃত রূপ ধারণ করছে।

 

পিয়াজু রেসিপি

এবার হোটেলের স্টাইলে দারুন মচমচে পেঁয়াজু বানানোর জন্য, ডুবু তেলের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য একটি কড়াইতে অর্ধেক করাই পরিমান তেল নিবেন।  তারপর ভালোমতো জাল দিয়ে ফুটন্ত করতে হবে।

যখন তেল গুলো অনেক গরম হয়ে যাবে, তারপর পেঁয়াজের মিশ্রণগুলো বড়া আকারে ঢালতে হবে। তবে প্রথমে চেক করে নিবেন যে তেলগুলো ভালোমতো গরম হয়েছে কিনা;  এজন্য হালকা পেঁয়াজের মিশ্রণ ছোট দোলা হিসেবে দিবেন,  যদি তেলগুলো বুদবুদিয়ে উঠে।  তাহলেই বুঝতে হবে যে আপনার তেল পর্যাপ্ত গরম হয়ে গিয়েছে,  এবং আপনি ভাজার কাজ শুরু করতে পারেন।

তো আমি ক্যারের মধ্যে যখন ছোট একটি দোলা পেঁয়াজের মিশ্রণ দিয়ে দিলাম;  তখন তা ভেজে তেল বুদবুদ করছে এবং পেয়াজ দলাটি উপরে উঠে যাচ্ছিল। তারমানে বুঝতে পারলাম যে তার পর্যাপ্ত গরম হয়েছে বা উত্তপ্ত হইছে।

বেসন দিয়ে পিয়াজু রেসিপি

এবার পেঁয়াজ কুচিকে তেরে দেওয়ার জন্য আমি হাতে সামান্য পরিমাণ তেল দিয়ে দিচ্ছি। এতে করে পেঁয়াজের মিশ্রণটা হাতে লেগে যাবে না,  এমনকি সহজেই হাত থেকে তা ছুটানো যাবে। এই মিশ্রণটা বাড়ানোর জন্য কিন্তু হাতে একটু বেশি পরিমাণেই দলা নিতে হবে।

এরপর একটি আঙ্গুলের সাহায্যে পুরো আস্ত দল থেকে ছোট ছোট করে দলা পাকিয়ে তেলে ছেড়ে দিচ্ছে। কারণ হোটেল রেস্টুরেন্ট কিংবা হাট-বাজারের পেঁয়াজু গুলো সাধারণত এরকমই ছোট ছোট করে থাকে।  তাই আমিও সেই শেপ টাই ফলো করছি।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ  সাধারণত খুবই মসৃণ বা গোলগাল হবেন,  কারণ মুচমুচে পেঁয়াজু সাধারণত এরকম অগোছালো দলা পাকানো অবস্থায় থাকে।

পিয়াজু মচমচে করার উপায়

এবার চুলার তাপমাত্রা মিডিয়াম লো ধাচে রেখে অনেকক্ষণ ধরে ভাবতে হবে। কারণ আপনি যদি সময় নিয়ে এই পিয়াজুটা ভাবতে থাকেন,  তাহলে ভেজে রাখার পরেও দীর্ঘক্ষণ সময় পর্যন্ত এই পিয়াজু মুচমুচে থাকবে। সাধারণত হাটবাজারে কিংবা হোটেল অথবা রেস্টুরেন্টের পিয়াজুগুলো কিন্তু দীর্ঘক্ষন ধরে মুচমুচে অবস্থায় কিনতে পাওয়া যায়।

সুতরাং আপনিও যদি ঘরে বানানো পিঁয়াজু রেসিপি মুচমুচে রাখতে চান,  তাহলে অবশ্যই দীর্ঘ সময় ধরে মিডিয়াম লোধাচার তাপমাত্রায় জাল দিতে থাকবেন এবং ভাজবেন।

বিশেষ সর্তকতাঃ  যদি আপনি মিডিয়াম লোধাচের তাপমাত্রায় না ভাজান,  অর্থাৎ একদম বেশি উত্তপ্ত তেলের মধ্যে পেঁয়াজ কুচি গুলো ঢেলে দেয়। অর্থাৎ যদি আপনি একদম গরম তেলের মধ্যে ভাজেন; তাহলে হয়তোবা দেখতে পাবেন যে পেঁয়াজর কালারটা উপর থেকে ঠিকই দেখা যাচ্ছে,  এবং সুন্দর দৃষ্টিনন্দিত হচ্ছে।  তবে তেল থেকে পেয়াজু গুলো উঠিয়ে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর দেখতে পাবেন মুচমুচে ভাবটা খুব দ্রুতই চলে যাচ্ছে।

তাই চুলোর তাপমাত্রা বা আচ কমিয়ে আস্তে আস্তে ভাজবেন। তাহলে দীর্ঘ সময় ধরে পেঁয়াজগুলো মুচমুচে থাকবে।

আমি ক্রমশ পিয়াজু গুলো হালকা জাল দেওয়ার পর উল্টে নিয়েছি। এমনিভাবে কিছুক্ষণ পরপর পেঁয়াজুগুলো হালকা ভাবে ভেজে নেওয়ার পর উল্টে পাল্টিয়ে নিয়ে,  একটি ছাকনি চামচের মাধ্যমে তেলগুলো ছড়িয়ে অন্য আরেকটি পাত্রে পেঁয়াজুগুলো রেখেছি।

আসলে বলতে গেলে পেঁয়াজ তৈরি করা যেমন খুবই সহজ;  তেমনি খেতেও অনেক মুচমুচে মজাদার ভাব লাগে।  এক কথায় বিকালের নাস্তা হিসেবে পিয়াজু বা বুট মুড়ির সঙ্গে পেঁয়াজ-টুকরা মেলালে অসাধারণ একটি স্বাদ দিবে আপনার বৈকালিক নাস্তার টেবিলে।

এই পিয়াজুটা সাধারণত বাইরে মুচমুচে থাকে,  কিন্তু ভিতরে হালকা নরম ভাব থাকে। অর্থাৎ বলতে পারেন পেঁয়াজের সম্পূর্ণ আকৃতিটাই কুড়মুড়ে থাকে না। তাহলে খেতে তেমন একটা স্বাদ লাগবে না।  তবে যদি এরকম আধা নরম ও আধা কুড়মুড়ে থাকে;  তাহলে খেতে অসাধারণ অনুভূতি দিবে আপনাকে।

মসুর ডালের পিয়াজু রেসিপি

যদি আপনি কোন রকমের চালের আটা বা ময়দা অথবা বেসনের সাহায্যে পেঁয়াজু তৈরি করতে না চান।  তাহলে কিছু মশারির ডাল নিয়েও আপনি সহজেই পেঁয়াজু রেসিপি তৈরি করতে পারেন।  তাও আবার খুব কম সময়।

সে যাই হোক,  মসুর ডালের পেঁয়াজু রেসিপি তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ মশুরির ডাল নিতে হবে। এরপর ব্লেন্ডারের মাধ্যমে তা বেটে নিলাম।  আপনি চাইলে শিল্পাটার মধ্যে পিষিয়ে বাড়তে পারেন।

বিশেষ টিপসঃ মসুর ডালের পিয়াজুর তৈরি করার জন্য ডাল গুলোকে আমি একদম পিছে রাখবো না।  আবার একেবারে দানা দানাও রাখবো না।  বরং হালকা দানা টাইপের থাকবে এবং এভাবেই বেটে নিব।

এরপর দুই কাপ পরিমাণ পেঁয়াজ করি খুব ছোট ছোট করে কেটে নিলাম।  নিয়েছি আধা কাপ পরিমাণ মরিচ বা কাঁচা মরিচের টুকরো,  অবশ্যই কুচিকুচি করে নিবেন।  সেই সাথে পরিমাণ মতো কিছু লবণ যোগ করলাম।

এরপর পেঁয়াজুর সাপকে এক অনন্য করতে হালকা বা এক চামচ পরিমাণ সরিষার তেল মিশিয়ে নিলাম।  এবং সবগুলো উপাদানকে একসঙ্গে হাতের মাধ্যমে মাখিয়ে ধরা পাকিয়ে নিচ্ছি।

এক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখবেন,  যদি আপনি দারুণভাবে পেঁয়াজুর স্বাদ উপভোগ করতে চান।  তাহলে অবশ্যই ডালের চাইতে পেঁয়াজ কুচি পরিমাণ ডাবল বা দ্বিগুণ করে দিবেন। তবে যদি কোনো কারণে ডালের পানিটা একটু তরল হয়ে যায় বা বেশি জল পড়ে যায়।  সেক্ষেত্রে পেঁয়াজকুচির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করতে হবে।

এবার একটি করার মধ্যে প্রচন্ডভাবে তেল গরম করবেন।  এবং সেখানে পেঁয়াজকুচির দলাগুলো ছোট ছোট আকারে শেপ দিয়ে ছেড়ে দিবেন। অবশ্যই মিডিয়াম ভালো আচার তাপমাত্রায় জাল দিবেন;  এবং ছাকনি দিয়ে একটু পর পর পেঁয়াজগুলো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দিবেন।  যাতে করে পেয়াজের প্রত্যেকটি পিঠ ভালোমতো ভাজা হয়।

এরপর একটি ছাকনি টাইপের চামচ দিয়ে পেঁয়াজুগুলো থেকে তেল ছাড়িয়ে অন্য আরেকটি পাত্রে রাখবেন।  তবে চেষ্টা করবেন বাঁশের কোন আরি পাত্র অথবা কোন কাগজের উপর পেঁয়াজগুলো রাখার।  এত করে যখন পেঁয়াজু গুলো ঠান্ডা হয়ে যাবে,  তারপরও কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে তা মুচমুচে ও কুড় মরে থাকবে।

তাহলেই দেখবেন হয়ে যাবে মসুর ডালের পেঁয়াজু রেসিপি;  যা খেতে অনেক কুড় মরে সাধ দিবে।  এবং এই ডালের রেসিপি দিয়ে আপনি মুড়ি ভর্তা বানিয়ে খেতে পারেন। এবং এর স্বাদ কিরকম হয়েছে, তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

পরিশেষে,

যারা আমার এই দেখানো মুচমুচে পিঁয়াজু রেসিপি তৈরি করে খেয়ে দেখেন নাই।  অনুরোধ রইল অন্তত একবার হলেও এই রেসিপিটা খেয়ে দেখবেন,  আশা করি অনেক মজা পাবেন। হ্যাপি ভোজন!