ঢাকামঙ্গলবার , ১৭ অক্টোবর ২০২৩
  • অন্যান্য

বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি: সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দুদকের

অনলাইন ডেস্ক
অক্টোবর ১৭, ২০২৩ ১১:১০ পূর্বাহ্ণ । ৪৮ জন

আলোচিত বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির হোতা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার স্ত্রী-সন্তানদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারি করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশন সভায় তাদের সম্পদের হিসাব দাখিলের জন্য নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩ অক্টোবর দুদক প্রথমবারের মতো বাচ্চু ও তার স্ত্রী শিরিন আক্তার, ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না, ছেলে শেখ রাফা হাই ও শেখ ছাবিদ হাই অনিককে আসামি করে সরাসরি মামলা করে। মামলায় জায়গা কিনে অবৈধ অর্থ বৈধ করার অপচেষ্টা ও সরকারের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়।

জানতে চাইলে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, ‘আব্দুল হাই বাচ্চুর সহায় সম্পত্তি কী আছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং সম্পদ বিবরণী চাওয়া হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির যখন বৈধ সম্পদের চেয়ে অবৈধ সম্পদ বেশি থাকে বা এ ধরনের সন্দেহ করা হয় তখন তার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করা হয়। বাচ্চুর বিরুদ্ধেও সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারির সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

জানা গেছে, বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় মামলা দায়েরের ৮ বছর পর সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘাটিয়ে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে চার্জশিটে আসামি করার বিষয়টি অনুমোদন দেন দুদক। অনুমোদন পাওয়ার পরই পর্যায়ক্রমে ৫৯ মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। এরপর থেকেই বাচ্চুর বিরুদ্ধে বেশ কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছে সংস্থাটি। ৩ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপ-পরিচালক নূরুল হুদা বাদী হয়ে বাচ্চু ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা করেন। মামলায় রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজারসংলগ্ন ৩০ দশমিক ২৫ কাঠা জায়গা ক্রয় দেখিয়ে প্রায় শতকোটি টাকা গোপন ও সরকারের আট কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়।

এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ২০১২ সালের ৮ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার ৬ নম্বর প্লটের ৩০ দশমিক ২৫ কাঠা জায়গা ১১০ কোটি টাকায় কেনার চুক্তি করেন অপর আসামি আমিন আহমেদের সঙ্গে। চুক্তিপত্র অনুযায়ী দুটি দলিলে ওই জায়গা রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। যার মধ্যে ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর প্রথম দলিলে ১৮ কাঠা জমির দাম ৯ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। দলিলে গ্রহীতা হিসাবে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, শেখ শাহরিয়ার পান্না ও মিসেস শিরিন আক্তারের নাম রয়েছে। একই বছর আরেকটি দলিলে ১২ দশমিক ২৫ কাঠার দাম ছয় কোটি ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এই দলিলে গ্রহীতা শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও শেখ রাফা হাই।

দুদক কর্মকর্তারা বলেছেন, বেসিক ব্যাংক থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অনুমোদন করিয়ে দিয়ে কমিশন হিসাবে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বাচ্চু। অবৈধভাবে উপার্জিত এই অর্থ জমি কেনায় বিনিয়োগ করে গোপন করার চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে ফাঁকি দিয়েছেন রাজস্ব। তাদের ধারণা, সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারির পর বাচ্চু ও তার পরিবারের সদস্যদের আরও অনেক অবৈধ সম্পদের হদিস মিলবে।

জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তা অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দীর্ঘ পাঁচ বছর অনুসন্ধান শেষে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। এরপর ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়।

 

রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় দায়ের করা এসব মামলায় মোট ১২০ জনকে আসামি করা হয়। আসামি তালিকায় ৮২ ঋণগ্রহীতা, ২৭ ব্যাংকার ও ১১ জন ভূমি জরিপকারীর নাম থাকলেও ছিল না ঋণ কেলেঙ্কারির মূল হোতা আব্দুল হাই বাচ্চুর নাম। কিন্তু মামলার তদন্ত কালে দুদক জানতে পারে আলোচিত এই ঋণ কেলেঙ্কারির পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু। এ কারণে বাচ্চুসহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।