ঢাকাসোমবার , ২৭ মার্চ ২০২৩
  • অন্যান্য

বগুড়ায় ট্রাকমালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি

অনলাইন ডেস্ক
মার্চ ২৭, ২০২৩ ১২:৫৪ অপরাহ্ণ । ৭২ জন
ছবি: সংগৃহীত

মহাসড়কে থামানো হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক। এরপর ট্রাক থামিয়ে চালক ও তাঁর সহকারীর কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে টাকা। এই টাকা আদায়ের কাজে রয়েছেন ১২ জন। তাঁরা মহাসড়কের পাশে রঙিন ছাতার নিচে বসা একজনের কাছে চাঁদার টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন।

এভাবেই প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির দৃশ্য দেখা যায় গত বুধবার সকাল আটটার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বগুড়া শহরতলির ভবেরবাজার এলাকায়।

ট্রাকচালকদের অভিযোগ, বগুড়া আন্তজেলা ট্রাক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, জেলা ট্রাক ট্যাংক লরি, কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির নামে মহাসড়কে ট্রাক থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্যে দিনে ট্রাকপ্রতি ৭০ টাকা আর রাতে নেওয়া হয় ১০০ টাকা। তিন সংগঠনের সদস্যদের কল্যাণের নামে এই চাঁদা তোলা হলেও কোনো রসিদ দেওয়া হয় না। ঈদুল ফিতর সামনে রেখে চাঁদা আদায়ের তৎপরতা বেড়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, বগুড়া হয়ে প্রতিদিন বঙ্গবন্ধু সেতু ও লালনশাহ সেতু হয়ে সারা দেশে ১৫ হাজার পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। প্রতিটি ট্রাক থেকে ৭০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। সেই হিসাবে শুধু ট্রাক থেকেই প্রতি মাসে বগুড়ায় ৩ কোটি এবং বছরে ৩৭ কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয় ট্রাক থেকে।

 

মহাসড়কে চলাচলকারী অন্তত ২০ জন ট্রাকমালিক ও চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বগুড়া আন্তজেলা ট্রাক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, জেলা ট্রাক ট্যাংক লরি কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নামে বছরজুড়েই চাঁদা আদায় চলে। এই তিন সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পদে থাকা বেশ কয়েক নেতা এবং জনপ্রতিনিধি।

গত বুধবার সকাল আটটার দিকে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের বগুড়ার প্রথম বাইপাস সড়কের ভবেরবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের এক পাশে রঙিন ছাতার নিচে চেয়ার নিয়ে বসে আছেন একজন। কয়েকজন শ্রমিক ট্রাক থামাচ্ছেন। এরপর ট্রাক থেকে চালক বা সহকারীর কাছে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ট্রাকচালক বা তাঁর সহকারী শ্রমিকদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন চাঁদার টাকা। চাঁদা দিতে দেরি করলে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হচ্ছে ট্রাক। এ সময় মহাসড়কে আটকে রাখা বেশ কয়েকটি ট্রাক দেখা যায়। এই প্রতিবেদক প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থান করে অর্ধশতাধিক ট্রাকচালকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে দেখেন।

 

ট্রাকচালকেরা বলেন, সারা বছরই এখানে মহাসড়কে ট্রাক থামিয়ে টাকা আদায় করা হয়। মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের চাঁদাবাজিতে তাঁরা অতিষ্ঠ। কিন্তু বগুড়ার ওপর দিয়ে চলাচল করা ছাড়া অন্য উপায় না নেই। তাঁরা প্রতিবাদ করার সাহস পান না।

সবজিবাহী ট্রাকের চালক আল আমিন বলেন, ‘মহাসড়কের এই স্থানে ট্রাক থামিয়ে দিনেরাতে চাঁদাবাজি চলছে। অন্য জেলার শ্রমিক আমি। এখানকার সংগঠনে কল্যাণ চাঁদা দিয়ে আমার কী লাভ?’

আলুবাহী ট্রাকের চালক তাইজুল ইসলাম বলেন, ট্রাকমালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামে এই চাঁদা তোলা হয়। কিন্তু এই টাকা কোথায় যায়, কী কাজে ব্যয় করা হয়, সেই হিসাব সাধারণ শ্রমিকের জানা নেই।

আন্তজেলা ট্রাক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি দাবি করা রাসেল মন্ডল মহাসড়কে ট্রাক থামিয়ে চাঁদা তোলার সত্যতা স্বীকার করেন। তাঁর দাবি, আন্তজেলা ট্রাক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, বগুড়া জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি, কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যৌথ সিদ্ধান্তেই সংগঠনের কল্যাণ ব্যয় মেটাতেই চাঁদা তোলা হচ্ছে। তবে রসিদ ছাড়া টাকা আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়।

 

বগুড়া জেলা ট্রাক ট্যাংক লরি, কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি সাগর কুমার রায় বলেন, মহাসড়কে চলাচলকারী ট্রাক থেকে শ্রমিক সংগঠনের নামে টাকা তোলা হয়ে থাকতে পারে। তবে ওই টাকার সঙ্গে তাদের সংগঠনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

 

পশ্চিমাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের বগুড়ার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, মহাসড়কে এ ধরনের চাঁদাবাজি দেখামাত্র হাইওয়ে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তবে বগুড়া শহরতলির প্রথম বাইপাস ও দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়ক দেখভাল করে বগুড়া জেলা পুলিশ। সেখানে চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বও তাদের। বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী ভবের বাজার এলাকায় মহাসড়কে ট্রাক থামিয়ে চাঁদা তোলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগ পেয়ে কয়েক দিন আগে ট্রাফিক পুলিশ পাঠিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আবারও সেখানে চাঁদাবাজি হচ্ছে, সেই তথ্য কেউ বলেননি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।