ঢাকামঙ্গলবার , ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • অন্যান্য

চীন-যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ এখন মহাকাশে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩ ১২:০২ অপরাহ্ণ । ৭১ জন

নতুন করে শুরু হচ্ছে এক মহাকাশ যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে। না, প্রকৃত অর্থের যুদ্ধ নয়। মহাকাশ প্রযুক্তি খাতে কে কত উন্নত, সমৃদ্ধ তা নিয়েই এই যুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার প্রধান বিল নেলসন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ফের চাঁদে যাওয়ার জন্য চীনের সঙ্গে মহাকাশ যুদ্ধে লিপ্ত যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে ১৯৬০ এর দশক এবং ১৯৭০-এর দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে মহাকাশ যুদ্ধে নাসা প্রথম সফলভাবে চাঁদের পৃষ্ঠে মানুষ পাঠায়। সে ১৯৬৯ সালের কথা। ওই বছর ২০শে জুলাই প্রথম পৃথিবীর মানুষ নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন চাঁদের বুকে পদার্পণ করেন।

বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিল নেলসন এবার চীনের সঙ্গে পাল্লা লাগার ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে যে আমরাই (চীনের আগে) প্রথম চাঁদে অবতরণ করবো। তার এ কথা সেই সোভিয়েত আমলের কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।এখন প্রায় অর্ধ শতাব্দী পরে এসে এসব বিষয়ে আরও কাজ করার জন্য বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে নিযুক্ত করছে নাসা। বিল নেলসন বলেছেন, বিষয়টি খুব জটিল। কারণ, এক্ষেত্রে প্রচুর অর্থ প্রয়োজন। তাই নাসা বেসরকারি খাতের সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এক্ষেত্রে তিনি ইলন মাস্কের স্পেসএক্স-এর উদাহরণ টেনে আনেন। এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে একটি লুনার ল্যান্ডার নির্মাণ  করতে ২০২১ সালে ৩০০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি করা হয়েছে। তারা এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেটও নির্মাণ করেছে। বেসরকারি খাতের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও মহাকাশ যুদ্ধে সুবিধা পেতে পারে। এ বছরের শুরুর দিকে জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিনের সঙ্গে ৩৪০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে নাসা। সেটাও লুনার ল্যান্ডার নির্মাণ করার জন্য।

সরকারি কয়েক শত কোটি ডলারের সুবিধা নিয়ে এই দুটি কোম্পানি কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এই দুই বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে যখন চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে তখন চীনের আগেই নাসা এসব অর্থ খরচের উদ্যোগ নিয়েছে। গত আগস্টে চন্দ্র অভিযানে চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারতের নাম যোগ হয়েছে। তাদের পাঠানো মহাকাশ যান চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে অবতরণ করেছে। সেখান থেকে পাঠাচ্ছে নানান তথ্য। নিজেদের সফলতা থাকা সত্ত্বেও চীনের মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রম ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে নাসা। কারণ, চীন হলো একমাত্র দেশ, যার নিজের মহাকাশ স্টেশন আছে। তারা এরই মধ্যে চাঁদের মাটির নমুনা নিয়ে এসেছে পৃথিবীতে। চন্দ্রপৃষ্ঠের মেরু অঞ্চলে পৌঁছার পরিকল্পনা আছে তাদের।

বিল নেলসনকে যা উদ্বিগ্ন করে তা তার কথায় ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, আমি এ জন্য উদ্বিগ্ন যে, আমরা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পানির সন্ধান পেয়েছি। চীনও গিয়েছে সেখানে। এখন তারা বলছে, এটা তাদের এলাকা। অন্য কেউ সেখানে যেতে পারবে না। বিল নেলসন যুক্তি দেন যে, দক্ষিণ চীন সাগরে চীন কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ করছে। এর উদ্দেশ্য সেখানে বিশাল একটি অংশের সার্বভৌমত্ব দাবি করা। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন আর্টেমিস একর্ড বা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি চীন। এর উদ্দেশ্য হলো মহাকাশ ও চাঁদে  তাদের বাধাহীন চর্চা করা।

 

 

তবে চীন বলছে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে মহাকাশ গবেষণা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এর আগে। তার জবাবে চীন বলেছে তাদের মহাকাশ গবেষণা স্বাভাবিক ও যৌক্তিক। এ নিয়ে কাউকে ছোট করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এই যে বিরোধিতা এর ফলে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করেছে নাসাকে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তারা বলেছে, ওই বছরে তারা মার্কিন অর্থনীতির মূল্যবান ৭১২০ কোটি ডলার খরচ করেছে মহাকাশ গবেষণায়। এই অর্থ আগের বছরের তুলনায় শতকরা ১০.৭ ভাগ বেশি। এসব অর্থ স্পেসএক্সের মতো প্রতিষ্ঠানেই শুধু যাচ্ছে এমন না। বিল নেলসন বলেন, আমাদের মোট খরচের এক চতুর্থাংশ যাচ্ছে ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে। এই অর্থে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোতে বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। এমন মন্তব্য করেছেন নাসার সাবেক ইঞ্জিনিয়ার সিনিয়াড ও’সুলিভান।

১৯৫৭ সালে কক্ষপথে একটি স্যাটেলাইট প্রতিস্থাপনে সফল প্রথম দেশ হয় রাশিয়া। তখন তারা প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মহাকাশ গবেষণা নিয়ে লড়াই করছিল। আর এখন ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির হিসাবে পৃথিবীর চারপাশের কক্ষপথে কমপক্ষে ১০,৫০০ স্যাটেলাইট ঘুরছে। বিনিয়োগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্পেস ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা চাদ অ্যান্ডারসেন গত এক দশকে এ খাতে প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির জন্য কৃতিত্ব দেন স্পেসএক্সকে।