ঢাকামঙ্গলবার , ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • অন্যান্য

গাড়ি রাখার জায়গায় হকার বসাতে চায় চসিক

অনলাইন ডেস্ক:
এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ১১:১২ পূর্বাহ্ণ । ৮ জন

বুল ডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ফুটপাতে গড়ে ওঠা একটি দোকান। আজ সকাল সাড়ে দশটায়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট এলাকায়সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট ও এর আশপাশের এলাকা থেকে উচ্ছেদ করা হকারদের রেলওয়ের জায়গায় পুনর্বাসন করতে চায় সিটি করপোরেশন। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের পাশে গাড়ি রাখার জায়গায় হকারদের সপ্তাহে দুদিন বসতে দেওয়ার জন্য রেলওয়েকে চিঠি দিয়েছে সিটি করপোরেশন। তবে রেলস্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পাশে গাড়ি রাখার জায়গায় এভাবে হকারদের পুনর্বাসনে আপত্তি রয়েছে রেলওয়ের। এতে যানজটসহ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গত ৮ ফেব্রুয়ারি ফুটপাত ও সড়ক থেকে হকারদের উচ্ছেদে বড় ধরনের অভিযান শুরু করে। ওই দিন নগরের নিউমার্কেট এলাকায় সব ধরনের ভাসমান স্থাপনা ও দোকান অপসারণ করা হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে আবারও সেখানে বসার চেষ্টা করেন হকাররা। তবে দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

তবে পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে থাকে হকার সংগঠনগুলো। তারা সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় ঘেরাওয়ের চেষ্টা করে। এমন পরিস্থিতিতে হকারদের পুনর্বাসনের জন্য হলিডে মার্কেট করার পরিকল্পনা নেয় সিটি করপোরেশন।

হলিডে মার্কেটের জন্য জায়গা দিতে গত ১৪ মার্চ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপককে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, নগরের নিউমার্কেট ও রেলস্টেশন এলাকার যানজট নিরসন এবং মানুষের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য সড়ক ও ফুটপাত থেকে স্থাপনা অপসারণে অভিযান শুরু করে। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক অভিযানে নগরের আলকরণ, কোতোয়ালি, নিউমার্কেট, আমতল, নতুন ও পুরোনো রেলস্টেশন এলাকা থেকে প্রায় চার হাজার হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব স্থানে যাতে পুনরায় হকার বসতে না পারে, সে জন্য তদারকির ব্যবস্থা করা হয়।

তবে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের জীবিকা এবং হকারদের দাবি বিবেচনা করে অস্থায়ী ভিত্তিতে হলিডে মার্কেট স্থাপনে উদ্যোগ নেয় বলে রেলওয়েকে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার এই মার্কেট বসবে। এখন এ জন্য রেলওয়ের স্টেশনের পূর্ব পাশে গাড়ি রাখার খালি জায়গা বিশেষভাবে প্রয়োজন। তাই এই জায়গা বরাদ্দ দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১৯ অনুযায়ী রেলওয়ের জায়গা বরাদ্দ পেতে হলে বেশ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। বিভাগীয় রেলভূমি বরাদ্দ কমিটি, আঞ্চলিক রেলভূমি বরাদ্দ কমিটি এবং কেন্দ্রীয় রেলভূমি বরাদ্দ কমিটির অনুমোদন লাগে। আবার ক্ষেত্রবিশেষ এই তিনটি পর্যায়ের অনুমোদনের পর বরাদ্দের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। সিটি করপোরেশনের আবেদনের বিষয়টি এখনো বিভাগীয় রেলভূমি বরাদ্দ কমিটির কাছে রয়েছে।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন হলিডে মার্কেট করার জন্য যে জায়গাটি চেয়েছে, তা হচ্ছে গাড়ি রাখার জায়গা। এর আয়তন প্রায় ৭০ হাজার বর্গফুট। স্টেশনে আসা যাত্রীদের গাড়ি রাখা হয় এই জায়গায়।

রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ট্রেনে আসা-যাওয়া করার জন্য এখানে আসেন। অনেকেই গাড়ি নিয়ে আসেন। তাঁদের গাড়ি রাখা হয় এই খালি জায়গায়। আর এখন কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এই কারণে স্টেশন এলাকায় মানুষের আসা-যাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। আর স্টেশনও রাত-দিন ব্যস্ত থাকে। এই অবস্থায় যদি গাড়ি রাখার জায়গায় হকারদের বসানোর জন্য দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। কেননা তখন গাড়িগুলো কোথায় রাখা হবে? আবার স্টেশন এলাকায় এভাবে হকারদের বসতে দিলে নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া রেলওয়ের গাড়ি রাখার জায়গা বরাদ্দ নিয়ে আদালতে একটি রিট করা হয়েছে, যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক রেলভূমি বরাদ্দ কমিটির সদস্যসচিব সুজন চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রেলওয়ের জমি বরাদ্দের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। এই নীতিমালা অনুযায়ী জমি বরাদ্দের দেওয়ার সিদ্ধান্তটি তাঁদের হাতে নেই। এটি উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তের বিষয়।

উচ্ছেদ করা হকারদের পুনর্বাসন করতে জায়গা বরাদ্দ দিতে রেলওয়েকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিউমার্কেট ও এর আশপাশ এলাকার যেসব হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে, তাঁদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হকারদের বসার জন্য রেলওয়ের জায়গা ব্যবহারের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় এই জায়গা ছাড়া আর তেমন কোনো জায়গা নেই। তাই জায়গাটি বরাদ্দ দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত রেলওয়ের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। আর মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। মেয়র দেশে এলে এ ব্যাপারে আলোচনা শুরু করবেন তাঁরা।

কিন্তু স্টেশনের পাশে হকার বসালে নিরাপত্তা বিঘ্নিত ও যানজটের আশঙ্কার বিষয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘আসলে নিউমার্কেট এলাকায় তো আর কোনো খালি জায়গা নেই। অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া সমীচীন হবে না। তাই পাশের যে জায়গাটি আছে, সেটি চাওয়া হয়েছে। এখন এ ব্যাপারে কাউকে না কাউকে স্যাক্রিফাইস (ছাড়) করতে হবে।’