ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • অন্যান্য

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় এখনও উদ্ধার হয়নি সিসিটিভি ফুটেজ

অনলাইন ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩ ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ । ১৭৫ জন
এখনও উদ্ধার হয়নি সিসিটিভি ফুটেজ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় চলছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বিচার বিভাগীয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল কর্তৃক গঠিত পৃথক ৩টি তদন্ত কমিটি। গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথকভাবে কার্যক্রম শুরু করে তদন্ত কমিটিগুলো। তদন্তের স্বার্থে গতকাল ২২শে ফেব্রুয়ারি চতুর্থ দিনের মতো ক্যাম্পাসে আসে ভুক্তভোগী ফুলপরি। পাবনা জেলার নিভৃত এক গ্রাম থেকে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বারংবার ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে তাকে। নিরাপত্তার স্বার্থে সঙ্গে আসেন তার ভ্যানচালক বাবাও। ভুক্তভোগীর বাবা আতাউর রহমান বলেন, ‘একদিন কাজ না করলে আমাদের পেট চলে না। কাজ রেখে ক্যাম্পাসে আসতে হচ্ছে। বারবার আসা-যাওয়ার ফলে আমার মেয়েটা শারীরিক ও মানসিকবভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। শুধু ক্যাম্পাসে অবস্থানকালীন আমাদের খাবার দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

যাওয়া-আসার খরচ আমাদেরই বহন করতে হচ্ছে। প্রশাসন চাইলে নিরাপত্তা দিয়ে এখানে রাখতে পারতো। এতে আমাদের আর্থিক খরচও হতো না আর ভোগান্তিতেও পড়তে হতো না। তবে আমাদের কষ্ট হলেও নির্যাতনে জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার চাই। সঠিক বিচার না পেলে মামলা করার কথাও বলেন তিনি।’

 

এদিকে তদন্তের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়েছে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা। গতকাল বেলা ১২টার দিকে পাবনার গ্রামের বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে আসেন ভুক্তভোগী ও তার বাবা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজন সহকারী প্রক্টরের তত্ত্বাবধানে তাকে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হল কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি তাকে প্রায় দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে। এদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীরা গোপনে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এমনকি বিষয়টি গোপন রাখে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ ও তদন্ত কমিটি। পরে দুপুর ৩টার দিকে বিশ^বিদ্যালয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. বেবা মণ্ডলের কক্ষে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের ঢোকানো হয়। তদন্ত কমিটি ভুক্তভোগী ও পাঁচজন অভিযুক্তের প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, ড. মুর্শিদ আলম ও আলীবদ্দী খান উপস্থিত ছিলেন। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, হালিমা খাতুন ঊর্মি ও ইশরাত জাহান মীম সেখানে উপস্থিত ছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভুক্তভোগী গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু অভিযুক্তরা কথা বলতে রাজি হয়নি। এমনকি মুখ খোলেনি তদন্ত কমিটির সদস্যরাও। ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন,‘ তদন্ত কমিটির কাছে আমি অভিযুক্তদের চিনিয়ে দিয়েছি। এ সময় তারা আমার হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু আমি যা সত্য তাই বলেছি। তারা কান্না-কান্না ভাব নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু আমি আমার অবস্থানে দৃঢ়। তদন্ত কমিটির কাছে আমি সর্বোচ্চ বিচার দাবি করেছি।’ হল তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. আহসানুল হক বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে ভুক্তভোগীকে আবারো ডাকা হয়। আমরা তার সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছি। অভিযুক্তদের সঙ্গেও কথা বলবো। কতোদূর অগ্রগতি হলো এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ তদন্তের স্বার্থে আর কিছু বলতে চাই না।’
এদিকে ঘটনা তদন্তে গতকাল বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে আসেন হাইকোর্ট গঠিত তদন্ত কমিটি। তারা প্রক্টরের সঙ্গে এক ঘণ্টা কথা বলেন। পরে ঘটনা তদন্তের জন্য তারা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে যান। এদিকে এ ঘটনার বিচার চেয়ে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল।’ জাতীয়তাবাদী কর্মকর্তা ও কর্মচারী ফোরামের সদস্যরাও এতে অংশ নেন। মানববন্ধনে দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান বলেন, আমরা বিশ্বাস করেছিলাম নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেবেন ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবেন। কিন্তু ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও আমরা দৃশ্যমান পদক্ষেপ লক্ষ্য করিনি। এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করি আমরা।

এদিকে ঘটনার ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। মনিটর সচল থাকলেও বায়োসের ব্যাটারি নষ্ট হওয়ায় ফুটেজ আছে কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হল কর্তৃপক্ষের সিসিটিভি ফুটেজ চান। শনিবার ফুটেজ উদ্ধার করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন কর্তৃপক্ষ। পরে তারা বিশ^বিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের দুই টেকনিশিয়ানের শরণাপন্ন্ন হন। তারাও ফুটেজ উদ্ধারে সক্ষম হয়নি। দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম বলেন, হলের প্রধান ফটক, অফিস ও করিডোরসহ মোট ১২টি সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে আমরা এখনো ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারিনি। হার্ডডিস্কে সমস্যা হওয়ায় ফুটেজ দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আশাকরছি দ্রুতই এর সমাধান হবে। এদিকে আইসিটি সেলের প্রধান ড. আহসানুল আম্বিয়া বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের জন্য হল কর্তৃপক্ষ আমাদের শরণাপন্ন হয়। বায়োসের ব্যাটারি নষ্ট থাকায় আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহে তাদের কাছে অপারগতা প্রকাশ করি। প্রশাসন যদি মনে করে প্রফেশনাল রিকভারি টিমকে জানাতে পারে। তবে আমার যতটুকু ধারণা রিকভারি করার আশা খুবই কম।’

প্রসঙ্গত, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি দুই দফায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে রাতভর র‌্যাগিং, শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ ওঠে। ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তার অনুসারীরা নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হল প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।