ঢাকারবিবার , ৩০ এপ্রিল ২০২৩
  • অন্যান্য

রাতে ঘুমিয়ে পড়লে জানালা দিয়ে নারীদের নগ্ন, ছবি ও ভিডিও ধারণ

অনলাইন ডেস্ক
এপ্রিল ৩০, ২০২৩ ৪:১৯ অপরাহ্ণ । ১০৭ জন
ছবি: সংগৃহীত

রাতে ঘুমিয়ে পড়লে জানালা দিয়ে নারীদের নগ্ন, অর্ধনগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করত এক ব্যক্তি। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকলে গায়ে হাতও দিত সে। ঈদুল ফিতরের দিবাগত রাতে ছবি তোলার সময় তাকে ধরতে গেলে সে মোবাইল ফোন ফেলে পালিয়ে যায়। পরে তার মোবাইল ফোনে গ্রামের বিভিন্ন নারীর নগ্ন, অর্ধনগ্ন ছবি ও ভিডিও পাওয়া যায়।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের সাফখোলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকেই গ্রামটিতে হইচই পড়ে গেছে। এখন গ্রামবাসী ওই ব্যক্তিকে ধরতে রাত জেগে পাহারা দেয়। এখনো সেই যুবক গ্রেপ্তার হয়নি এবং তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে পুলিশ তৎপর হলেও এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর ধরে গ্রামটিতে প্রতি রাতেই গভীর রাতে হাজির হতো এক যুবক। নারীরা ঘুমিয়ে পড়লে তাদের ঘুমন্ত অবস্থার আপত্তিকর ছবি তোলা ও ভিডিও করা হতো। এমনকি জানালা দিয়ে গায়ে হাত এবং পাটকাঠি দিয়ে নারীদের শরীরে খোঁচা দিত।

গত ২২ এপ্রিল সাফখোলা গ্রামে রাত ৩টার দিকে ফেরদৌস নামে এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী ঘরে শুয়ে ছিলেন। এ সময় জানালা দিয়ে মোবাইলের ক্যামেরার লাল আলো দেখতে পেয়ে ফেরদৌস কৌশলে ওই ব্যক্তির হাত ধরতে যান। এ সময় সে মোবাইল ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর ওই মোবাইল ফোনে পূর্ব সাফখোলা থেকে পশ্চিম সাফখোলা ও আশুরহাট গ্রামের কমপক্ষে ১৫০ নারীর ঘুমন্ত অবস্থার বিভিন্ন সময়ে ধারণকৃত আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে।

এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় হইচই পড়ে যাওয়ার পর থেকে এলাকাবাসী নিরাপত্তার জন্য রাত জেগে পাহারা দিতে শুরু করেছে। প্রথম দিকে অতটা কেউ টের না পেলেও মাঝেমধ্যে দু-একটি ঘটনার খবর এলাকাবাসী পেত। তবে অতীতে যেসব রাতে পাহারা দেওয়া হতো, সেসব রাতের কোনো ভিডিও পাওয়া যায়নি।

 

 

উপজেলার সাফখোলা গ্রামের বাসিন্দা ফেরদৌস বলেন, ঈদের দিন রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ৩টার দিকে আমার ঘুম ভেঙে গেলে ঘরের জানালা দিয়ে এক যুবককে মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তুলতে দেখি। আমি তাঁর হাত ধরার চেষ্টা করলে সে মোবাইল ফোন ফেলে যায়। পরে ওই মোবাইল ফোনে ধারণকৃত এলাকার বিভিন্ন নারীর নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি পাওয়া গেছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দোষী যুবককে খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।

রবিউল ইসলাম ঐ গ্রামের আরেক বাসিন্দা জানান, তিনি একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন, থাকতেন কর্মস্থলে। বেশ কিছুদিন আগে তার স্ত্রী তাকে জানান, প্রায়ই গভীর রাতে ঘরের পাশে মানুষের উপস্থিতি টের পাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত এ ঘটনায় স্ত্রীর নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন। এ চক্রটি ধরার জন্য তারা গ্রামে পাহারার ব্যবস্থা করেন। তারা জানতে পেরেছেন উদ্ধার হওয়া মোবাইলটি প্রতিদিন রাত ২টার পরে সচল হয়। এছাড়া ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছে।

সাফখোলা গ্রামের এক গৃহবধূ বলেন, আমরা যদি নিরাপদে রাতে ঘরে শুয়ে না থাকতে পারি, এর থেকে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে! এভাবে রাতের অন্ধকারে মোবাইল ফোনে ছবি তোলা ঠিক না। আমরা এর শাস্তি দাবি করছি।

ইউপি সদস্য আবু তাহের টিটো জানান, অপরাধী চক্রের একটি মোবাইল পেয়ে সামাজিকভাবে বসে জানার চেষ্টা করেন সেটি কার। পরে ফোনটি পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। সেই মোবাইলে গ্রামের বিভিন্ন পরিবারের সদস্য ও নারীদের দেড় শতাধিক ছবি-ভিডিও রয়েছে। এগুলোর সবই ব্যক্তিগত। এসব ভিডিও ধারণের সময়কাল দেড় বছরের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামে পাহারাও বসানো হচ্ছে। কিন্তু তাতেও থামছে না অপরাধীরা।

উদ্ধারকৃত ফোনে থাকা সিমকার্ডের মূল মালিককেও শনাক্ত করেছে গ্রামবাসী। জানা গেছে, একই গ্রামের এক তরুণী এটি ব্যবহার করত। ওই তরুণীর অভিযোগ, দুই বছর আগে তার আত্মীয় আজমুলের ছেলে পার্থ ওরফে তুরাগ তাকে ব্ল্যাকমেইল করে সিমটি নিয়ে যায়। তার ছবি তুলে হুমকি দেয়, সিমের কথা ফাঁস করলে ওই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে তাকে হত্যারও হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে তুরাগ ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে ঝিনাইদহের ডিবি পুলিশ ওই কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে সে পলাতক রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে ওই কলেজপড়ুয়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তার পরিবারের সদস্যরাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, নারীদের ব্যক্তিগত ভিডিওসহ নানা ভিডিও ধারণ হয়েছে। তবে এমন ঘটনায় থানায় এখনও মামলা হয়নি। তারা ঘটনা জানতে পেরে গ্রামবাসী যে মোবাইল পেয়েছিল, সেটি জব্দ করেছে। গ্রামের পার্থ ওরফে তুরাগ নামের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। সাইবার ক্রাইমের টিমও পৃথকভাবে কাজ শুরু করেছে।