ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • অন্যান্য

নওয়াজই হতে পারেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪ ৫:০০ অপরাহ্ণ । ৫৬ জন

কঠোর নিরাপত্তা, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন সার্ভিস বন্ধ করে দিয়ে পাকিস্তানে যখন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে, তখন আন্তর্জাতিক মিডিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে বিজয়ী হওয়ার বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে। তারা বলেছে, এই নির্বাচনে তিনি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারপ্রধান হতে পারেন। এমন পূর্বাভাষ দিয়েছে বিবিসি, গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট, বার্তা সংস্থা এএফপি, এপি প্রভৃতি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ।

   উল্লেখ্য, এর আগে তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজ শরীফ। তিনবারই তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছে। সর্বশেষ ক্ষমতা হারানোর পর স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান লন্ডনে। সেখান থেকে গত বছর অক্টোবরে দেশে ফেরেন। এবারের নির্বাচনে তার সর্বশেষ ২০১৭ সালে হারানো প্রধানমন্ত্রিত্ব ফিরে পাওয়ার সুস্পষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যদি তিনি চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন তাহলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ক্ষুব্ধ সমর্থকদের মোকাবিলা করতে হবে। ইমরান খান কূটনৈতিক বার্তার মামলায় ১০ বছর, তোষাখানা মামলায় ১৪ বছর এবং অবৈধ বিয়ের মামলায় ৭ বছরের জেল নিয়ে অবস্থান করছেন আদিয়ালা জেলে।

ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, যদি বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) প্রধান (নওয়াজ শরীফ) বিজয়ী হতে না পারেন, তাহলে তা হবে বিস্ময়কর।

ব্লুমবার্গ বলেছে, গত সপ্তাহে করাচিতে পাকিস্তানি অভিজাত ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে অনেক মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। তারা একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন। বলেছেন, তারপর যে জোট সরকার গঠিত হবে তা হবে দুর্বল। বেশির ভাগ মানুষ আশা করছেন এই সরকারের নেতৃত্ব দেবেন নওয়াজ শরীফ অথবা তার ভাই, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের পররাষ্ট্র বিষয়ক ফেলো মাদিহা আফজালকে উদ্ধৃত করে ব্লুমবার্গ তার রিপোর্টে বলেছে- যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নওয়াজের প্রত্যাবর্তন ঘটে, তাহলে তাকে দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তার একটি হলো- পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যার ব্যবস্থাপনা করা। বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতির কারণে এই অর্থনীতির হযবরল অবস্থা। অন্য চ্যালেঞ্জটি হলো- শক্তিধর সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্ক স্থাপন।

সিএনএন রিপোর্টে বলেছে, প্রচারণায় পরিষ্কার ফ্রন্টরানার ছিলেন ইমরান খানের দীর্ঘদিনের শত্রু নওয়াজ শরীফ। ৭৪ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ঐতিহাসিক চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরতে চাইছেন। তা হলে স্বেচ্ছা নির্বাসনের পর সেটা হবে তার রাজনীতিতে ফিরে আসার এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কিন্তু শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন বর্ষীয়ান নওয়াজ। প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হচ্ছেন প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর ছেলে ৩৫ বছর বয়সী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। এই চ্যালেঞ্জটি আসছে তার পক্ষ থেকে। কিংস কলেজ লন্ডনের প্রফেসর ও বৃটিশ সাবেক সিনিয়র কূটনীতিক টিম উইলাসে-উইলসে বলেন, নওয়াজ শরীফ বর্ষীয়ান। যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে খুব ভালভাবে সবসময় ভারসাম্য বজায় রেখেছেন তিনি। তিনি ভারতের সঙ্গেও সুসম্পর্ক চাইবেন।

এপির রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত অক্টোবরে দেশে ফেরার পর আদালত অভিযোগ ও জেলের শাস্তি উল্টে দেয়ার পর চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পথ স্পষ্ট হয়েছে নওয়াজ শরীফের। তার কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বী ও শত্রু ইমরান খান এখন জেলে। এটা যেন ২০১৮ সালের নির্বাচনের ঘটনার প্রতিচ্ছবি। তখন মামলায় লড়াই করছিলেন নওয়াজ। তার মধ্য দিয়ে ইমরান খান হয়ে যান প্রধানমন্ত্রী। তিনি এখন জেলে বন্দি। ফলে বিশ্লেষকরা নওয়াজ শরীফের আরেকটি বিজয়ের পূর্বাভাস দিচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট উল্লেখ করেছে- পূর্বাভাস হলো নওয়াজ শরীফ এবং তার দল পিএমএলএনই ক্ষমতায় যেতে পারে। তবে পিটিআই যদি স্বতন্ত্র হিসেবে জয় আনতে পারে তা হবে অলৌকিক ও বিস্ময়কর। পিটিআই নিজেরা সবচেয়ে বড় দল হয়ে ওঠে এবং তারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়। দলটি ইমরান খানের পক্ষের এবং নওয়াজের বিপক্ষের হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক থিংকট্যাংক কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশন্স বলেছে, নওয়াজ শরীফের পথ পরিষ্কার। পাকিস্তানের রাজনীতিতে টিকে থাকা রাজনীতিক। সেনাবাহিনী তাকে সমর্থন দেয়ায় তিনি হতে পারে প্রধানমন্ত্রী। তার দল পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ পেতে পারে। নওয়াজ শরীফ এমন একজন ব্যক্তি, যিনি সেনাবাহিনীপন্থি নীতি গ্রহণ করেন এবং এ বিষয়ে শিথিলতা দেখান।

স্পুটনিক লিখেছে, নির্বাচনের পর দেশটির নতুন নেতাকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী সমস্যা নিয়ে কাজ করতে হবে। এসব আভ্যন্তরীণ ইস্যু পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে তা প্রতিবেশী এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অংশীদারদের সঙ্গের সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে। টেলিগ্রাফ লিখেছে, প্রধান বিরোধী শক্তি ইমরান খানকে ফৌজদারি অপরাধে ঢেকে দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিজয়ী হতে পারেন।