ঢাকাবুধবার , ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • অন্যান্য

ক্ষুব্ধ নজিবুল বশর !

admin
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩ ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ । ৯৯ জন
সোমবার চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে মাইজভাণ্ডার শাহি ময়দানে সৈয়দ শফিউল বশর মাইজভাণ্ডারীর ১০৪তম খোশরোজ শরিফের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ছবি : সংগৃহীত

হঠাৎ করে সরকারের ওপর ‘ক্ষোভ’ ঝাড়লেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক দল তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। তিনি বলেন, ‘আমি কি কোনো সহযোগিতা করিনি? দেশবাসী জানে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি কী অবস্থা সৃষ্টি করেছিল, আমেরিকা কী করেছিল—এসব কে ঠেকিয়েছে, সরকার ঠেকিয়েছে?’

গত সোমবার রাতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে মাইজভাণ্ডার শাহী ময়দানে সৈয়দ শফিউল বশর মাইজভাণ্ডারীর ১০৪তম খোশরোজ শরিফের আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন। সভায় আরও বক্তব্য দেন সৈয়দ হাবিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, এমপিপুত্র সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভাণ্ডারী, সৈয়দ মাহতাবুল বশর মাইজভাণ্ডারী প্রমুখ।

সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র তুলে ধরে নজিবুল বলেন, ‘আপনাদের সাহস হয়নি নিজামী-মুজাহিদদের বিরুদ্ধে মামলা করতে। আমি মামলা করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হয়েছে। যদি আমি না থাকতাম আপনারা মামলা করতেন না।’ সরকারের ওপর হঠাৎ এমন ক্ষোভ প্রকাশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নজিবুল কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা নির্ভেজাল মানুষ। অথচ আমাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে দুদক। আমরা সরকারের সঙ্গে আছি। আমি সংসদের এমপি। দুদকের এ মামলার দায় সরকার ও আওয়ামী লীগ এড়াতে পারে না। এ ব্যাপারে সরকারের সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’

তিনি বলেন, ‘মাইজভাণ্ডার দরবারের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র মানব না। দরবারের ইজ্জত রক্ষায় যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পিছ পা হব না।’ তাহলে কি সরকারের সঙ্গে তরিকত ফেডারেশনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাব সরাসরি না দিয়ে নজিবুল বশর বলেন, ‘সময়ই বলে দেবে। আমাদের পরবর্তী যাত্রাপথ কোনদিকে?’ আর প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে নজিবুলের বড় ছেলে সৈয়দ তৈয়বুল বশর বলেন, ‘আপনি দেশের কওমিদের হারিয়ে ফেলেছেন। সুন্নিদের হারাচ্ছেন। এবার মনে হয় তরিকতপন্থিদেরও হারাবেন।’

গত ১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের প্রশংসা করে বক্তৃতাও দিয়েছিলেন নজিবুল বশর। এর মাত্র ২০ দিনের মাথায় কী এমন হলো যে, তাকে সরকারের বিরুদ্ধে মাইক ধরতে হলো! প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ‘দোয়ায়’ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি আসনে তিনবার এমপি হয়েছেন নজিবুল বশর। তার আচমকা সরকারবিরোধী কথাবার্তা-সমালোচনায় সরকারের সঙ্গে ‘দূরত্ব’, আসন্ন নির্বাচনে জোটের মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়া কিংবা নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ নাকি অন্যকিছু; এমন নানা ‘কানকথা’ শোনা যাচ্ছে চট্টগ্রামের রাজনীতির মাঠে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তৈয়বুল বশর ও আফতাবুল বশরসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয় দুদক। তাদের বিরুদ্ধে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট থেকে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ পায় দুদক।

যত ‘ক্ষোভ’ : সোমবার রাতের ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে নজিবুল বলেন, ‘৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। প্রায় ৬৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। এতে কি টাকা আত্মসাৎ হয়?’ দুদক ‘নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীকে চেনেনি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরীকে বলেছিলাম মাইজভাণ্ডারী ভক্তদের বললে আপনার বাড়ির ইট একটিও থাকবে না। সব খুলে নিয়ে আসবে। একই কথা দুদক কমিশনারকেও বললাম।’

মাইজভাণ্ডার থেকে ডজন ডজন মন্ত্রী তৈরি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এলোমেলা করলে খবর আছে। এখন ১৯৯১ সাল নয়, এটি ২০২৩ সাল।’ দুদকের মামলার ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমার জন্য, আমার ছেলের জন্য মাইজভাণ্ডার দরবার কলঙ্কিত হলে আমার মরে যাওয়া উচিত।’

 ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী  বলেন, ‘নজিবুল বশরের কথাগুলো আমাদের কানেও এসেছে। সরকার থেকে নানা সুবিধা নিয়ে এখন উল্টো কথা বলছেন তিনি। সরকারের সমালোচনা করছেন। তার অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ভার আওয়ামী লীগ নেবে না।’ উপজেলার নেতাকর্মীরা আসন্ন নির্বাচনে ফটিকছড়িতে নৌকা প্রতীকে দলীয় প্রার্থী চান বলে জানান তিনি। তবে সোমবার রাতে নজিবুল বশরের বক্তব্য ‘সরকারবিরোধী’ বলতে নারাজ ফটিকছড়ি উপজেলা তরিকত ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর আলম। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘তার মনে হয়তো কিছু ক্ষোভ ছিল। তা তিনি ভক্তদের সামনে প্রকাশ করেছেন।’

‘পরামর্শক ও ব্যবসায়ী’ নজিবুল বশর : একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের আগে নজিবুল বশরের পেশা ছিল পরামশর্ক। পরে তিনি ব্যবসায়ও যুক্ত হন। ২০১৪ এর নিবার্চনের আগে তার স্ত্রী ও দুই ছেলের নামে গাড়ি না থাকলেও বতর্মানে গাড়ি আছে একাধিক। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পাঁচ বছরের ব্যবধানে বার্ষিক আয় বেড়ে হয়েছে ৩৬ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। আগে যা ছিল ৭ লাখ ২৬ হাজার টাকা।