গ্যাসের অভাবে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে পারেনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দিনে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলেও এখন তা সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াটে নেমে গেছে। দিনে তিন হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ঢাকাতেও আগের দিনের চেয়ে গতকাল লোডশেডিং বেড়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) বলছে, গতকাল দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে দুপুর ১২টায় ৯ হাজার ৯৮৪ মেগাওয়াট। ওই সময় লোডশেডিং হয়েছে ২ হাজার ১১৬ মেগাওয়াট। এর আগে গত শনিবার রাতে বিভিন্ন সময় আড়াই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) দিনে দুই হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ বিভাগের অধিকাংশ গ্রাম এলাকায় গড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। খুলনা, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহে বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি ও স্থানীয় গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে কোথাও কোথাও লোডশেডিং বেড়েছে।
ঢাকায়ও গতকাল গড়ে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং করেছে দুই বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। ডেসকো বলছে, গতকাল বেলা তিনটায় তাদের চাহিদা ছিল ১ হাজার ১২০ মেগাওয়াট। এ সময় সরবরাহ করা হয়েছে ৮১২ মেগাওয়াট। ৯৭টি ফিডার (নির্দিষ্ট এলাকায় একটি ফিডার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়) বন্ধ রেখে ৩০৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির কাউসার আলী বলেন, সরবরাহ কমায় গত রোববারের চেয়ে গতকাল পরিস্থিতি একটু খারাপ হয়েছে।
ডিপিডিসি বলছে, বেলা তিনটার দিকে তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ পেয়েছে ১ হাজার ২৬১ মেগাওয়াট। একই সময়ে তাদের চাহিদা ছিল ১ হাজার ৭১৪ মেগাওয়াট। লোডশেডিং করে বাকি ৪৫৩ মেগাওয়াট ঘাটতি সমন্বয় করা হয়েছে। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ এলাকায় দিনে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও একটু বেশি হতে পারে।
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি বড় অংশ আসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে। সিদ্ধিরগঞ্জ, আশুগঞ্জ, হরিপুর, ঘোড়াশালের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হচ্ছে। গ্যাসের চাপ কম থাকায় এগুলো চালানো যাচ্ছে না। কয়লার অভাবে গত ২৪ এপ্রিল থেকে বন্ধ আছে বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। আগামী তিন দিনে গ্যাস সরবরাহ তেমন বাড়বে বলে মনে হচ্ছে না। তবে আজ মঙ্গলবার রামপাল উৎপাদন শুরু করতে পারে। এতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার মতো গ্যাস সরবরাহ চট্টগ্রামে শুরু হয়নি। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। চাহিদা ও উৎপাদনের ঘাটতি সমন্বয়ে আরও সময় লাগবে।