ঢাকাবুধবার , ২৯ মার্চ ২০২৩
  • অন্যান্য

আমি গান্ধী। আমি ক্ষমা চাইবো না:রাহুল গান্ধী

অনলাইন ডেস্ক
মার্চ ২৯, ২০২৩ ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ । ৮৭ জন
ছবি: সংগৃহীত

‘অযোগ্য সাংসদ’ তকমা দিয়ে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে রাহুল গান্ধীকে। এই বহিষ্কারের জেরে রাজপথে নেমে কংগ্রেস শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগ্রামের পথে যেতে চলেছে । ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) যে রাহুল গান্ধীকে সংসদে  দেখতে চায় না তা বেশ কিছুদিন ধরেই স্পষ্ট । যদি সুরাট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি মানহানির মামলায় তাকে বহিষ্কার না করতো তাহলে লোকসভার বিশেষ কমিটির হাতে তিনি একই পরিণতির মুখোমুখি হতেন। সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করার জন্য কমিটির মাধ্যমে রাহুলকে বহিষ্কার করতে চেয়েছিল বিজেপি।
সুরাটের আদালত দুই বছরের কারাদণ্ডের সাজা দিয়ে রাহুল গান্ধীকে সংসদ থেকে উচ্ছেদ করার পথ আরও সহজ করে তুলেছে । সাংসদ হিসাবে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করার ক্ষেত্রে যে তৎপরতা দেখানো হয়েছে তা রাহুল গান্ধীকে নিয়ে বিজেপির মাথাব্যথার ইঙ্গিত দেয়। কারণ ভারত জোড়ো যাত্রার  পরে, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব একটি নতুন সম্ভাবনার দরজা উন্মুক্ত করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং গুজরাটি ব্যবসায়ী গৌতম আদানির মধ্যে যোগসূত্রের অভিযোগে সংসদে বরাবরই সরব ছিলেন। মোদির ওপর সরাসরি আক্রমণ বিজেপি’র পক্ষে মেনে নেয়া  কঠিন  হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। একজন গণতান্ত্রিক নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রাহুল গান্ধীর প্রোফাইল বিদেশেও নজর কেড়েছে।

আন্তর্জাতিক মিডিয়া ভারতে গণতন্ত্রের অবক্ষয়ের সমালোচনা করেছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী মোদির ইমেজকে মহান হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলেও , রাহুল গান্ধীর অভিযোগগুলি মোদির ইমেজকে ক্ষুণ্ন করেছে।
অযোগ্যতার অভিযোগ ওঠার পর প্রথম প্রেস কনফারেন্সে রাহুল গান্ধী নিজের লড়াই জারি রেখেছেন। দাবি করেছেন, তার অযোগ্যতা এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগের উদ্দেশ্য ছিল ‘আদানি ইস্যু থেকে লোকদের নজর ঘোরানো।’ আবারো মোদি সরকারকে কটাক্ষ করে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন- ‘আদানির শেল কোম্পানিগুলোতে কে ২০,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে? এটি কার টাকা?’ বিজেপি’র ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে তিনি পাল্টা জবাব দিয়েছেন  ‘আমার নাম সাভারকর নয়। আমি গান্ধী। আমি ক্ষমা চাইবো না।’
এই পরিস্থিতিতে, বিজেপি রাহুল গান্ধীর ক্রমবর্ধমান নেতৃত্বকে অযোগ্য প্রমাণ করতে চাইবে। রাহুল গান্ধীকে  দূরদর্শী নেতা হিসাবে প্রমাণ করার প্রচেষ্টাকে আঘাত করতে চাইবে। যদি বিজেপি সফল হয় তাহলে আদানি ইস্যুতে প্রলেপ লাগাতে অনেকটাই সক্ষম হবে তারা। অন্যদিকে রাহুলের অযোগ্যতা কংগ্রেস এবং বিরোধীদের কাছে বিজেপি’র দেয়া একটি অনিচ্ছাকৃত উপহার হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।

রাহুল গান্ধী ইস্যুতে কংগ্রেসের সামনে গা ঝেড়ে ওঠার একটা সুযোগ উপস্থিত। সংসদে রাহুল গান্ধীর অযোগ্যতা প্রমাণ এবং বহিষ্কার রাজপথে নেমে কংগ্রেসের রাজনৈতিক সংগ্রামের পথকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে । গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে কংগ্রেসের রাজনীতি মূলত দিল্লিকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে, এই আশায় যে দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে প্রধান নেতৃত্বের অবস্থান পরিবর্তন  করলে  হয়তো  রাজনৈতিক ভাগ্যের উন্নতি হবে। যাই হোক, ভারত জোড়ো যাত্রার সাফল্য দেখিয়েছে যে পার্টির জন্য একটি বিকল্প রয়েছে- আস্থা ফিরে পেতে জনগণের কাছে ফিরে যাওয়া উচিত কংগ্রেসের। এখন এটি করার জন্য কংগ্রেসের কাছে উপযুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশও রয়েছে। সংসদ থেকে ‘অযোগ্য সাংসদ’ তকমা পাওয়া  একজন রাজনৈতিক নেতার জন্য অসুবিধার কারণ হতে পারে না। কংগ্রেস আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাহুল গান্ধীর বহিষ্কারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে, জনগণকে এটা ভাবতে উৎসাহিত করতে পারে যে এই  কারণগুলো যুক্তিযুক্ত  নাকি অযৌক্তিক।
স্বয়ং রাহুল গান্ধীর কাছে এটা এমন কোনো ব্যাপার না। অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার চেয়ে এমপি হওয়া তার নেতৃত্বকে আরও আলোকিত করে কিনা তা মূল বিষয়।

 

 

কিছু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বিশ্বাস করেন যে, সংসদ মূলত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।  এটি শুধুমাত্র পক্ষপাতমূলক নীতি এবং আইন প্রণয়নের কক্ষ হয়ে উঠেছে। ভারত জোড়ো যাত্রা যদি কিছু করে থাকে তা হলো রাজনৈতিক সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য রাহুল গান্ধীর সংসদে থাকার দরকার নেই। তিনি বাইরে থেকেও সেই কাজ করতে পারেন। দল যদি জনসাধারণকে বোঝাতে পারে যে, রাহুল গান্ধীর অপমান আদপে বিজেপি’র পুঁজিবাদ,   সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ, অর্থনীতি পরিচালনা করতে অক্ষমতা এবং গণতন্ত্রের অবমূল্যায়নের বিরুদ্ধে কথা বলার ফল, তবে দলের সামনে বড় সুযোগ উপস্থিত। সংসদ থেকে রাহুল গান্ধীর প্রস্থান শেষ পর্যন্ত বিজেপি’র সামনে  বিপদের ঘণ্টা বাজাতে পারে। কারণ কংগ্রেসের সোচ্চার সমালোচক- তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) কে চন্দ্রশেখর রাও এবং আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা রাহুলের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিজেপি’র বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করবেন। মমতা ব্যানার্জি টুইট করেছেন, ‘বিরোধী নেতারা বিজেপি’র প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। আজ আমরা আমাদের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের অবক্ষয় প্রত্যক্ষ করছি।’ অখিলেশ যাদব বিজেপি সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, রাহুল গান্ধীকে এমপি পদ থেকে সরিয়ে দিলেই রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ শেষ হবে না। বিআরএস প্রধান চন্দ্রশেখর রাও রাহুলের বহিষ্কারকে ‘ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি কালো দিন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এমনকি কংগ্রেসের কঠোর সমালোচক অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই পদক্ষেপকে ‘কাপুরুষতা’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন- ‘এই লড়াই রাহুল গান্ধীর লড়াই নয়। এই লড়াই কংগ্রেসের লড়াই নয়। এই লড়াইটা একনায়কতন্ত্র থেকে দেশকে বাঁচানোর লড়াই।’

তবে এটি কোনোভাবেই প্রাক-নির্বাচন বিরোধী জোটের দিকে ইঙ্গিত করে না। নির্বাচনের সময়ে এই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কয়েকটি তাদের নিজ নিজ রাজ্যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান নেবে। যে সমস্ত আঞ্চলিক নেতারা ভেবেছিলো সমালোচনা থেকে দূরে থাকবে তারা এখন নিরাপদ কিনা তা নিয়ে দু’বার ভাববে। তারা এখন জনসাধারণের কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করছে। জাতীয় স্তরে বিজেপি’র বিকল্প তৈরি করার কথা ভাবছে। রাহুল গান্ধীর ‘অযোগ্য সাংসদ’ তকমা তাই একটি রাজনৈতিক উপহার যা বিরোধীদের থালায় সাজিয়ে দেয়া হয়েছে।