ঢাকামঙ্গলবার , ৩ অক্টোবর ২০২৩
  • অন্যান্য

বিনা চিকিৎসায় সরকার খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায়

অনলাইন ডেস্ক
অক্টোবর ৩, ২০২৩ ১২:৩১ অপরাহ্ণ । ৬০ জন

আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিনা চিকিৎসায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার হত্যা করতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী ও গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়াকে এই অনির্বাচিত ও অবৈধ সরকার হত্যা করতে চায়।

সোমবার বিকালে রাজধানী নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত ‘কৃষক সমাবেশে’ তিনি এসব কথা বলেন। সরকারের পদত্যাগ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির একদফা দাবিতে এ সমাবেশ হয়। দুপুর ১২টা থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষক দলের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন।

বেলা ২টার মধ্যেই নয়াপল্টনের সড়কসহ আশপাশের এলাকায় হাজারও নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। অনেক নেতাকর্মীকে কৃষকের সাজে দেখা যায়। তারা মাথায় টুপি, হাতে কাস্তে ও ধান নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন।

কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, বরকতউল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী,

মীর সরাফত আলী সপু, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের নাসির হায়দার, জামাল উদ্দিন খান মিলন, মামুনুর রশীদ খান, এসএম ফয়সাল, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, আনম খলিলুর রহমান, আসলাম মিয়া, সৈয়দ অলিউল্লাহ সিদ্দিকী, মোশাররফ হোসেন, মিজানুর রহমান লিটু, ওবায়দুল রহমান টিপু প্রমুখ। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, শহীদ জিয়া দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার পর দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে দুটি শিশু সন্তানসহ পাক বাহিনী আটকে রাখে। বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন খালেদা জিয়া।

এই কথা বললে তাদের (আওয়ামী লীগ) গায়ের মধ্যে আগুন জ্বলে। কারণ তারা তো মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তারা তো সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভাতা খেয়েছিল। বাস্তব কথা বলছি। অনেকের কষ্ট হতে পারে, কিন্তু কথাটা সত্য।

তিনি বলেন, আজকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন আইন দেখানো হচ্ছে। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) কানের চিকিৎসার জন্য বন্দি থাকা অবস্থায় বিদেশ যাননি? আসলে তারা খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। এরা জোর করে তাকে (খালেদা জিয়া) বন্দি করে রেখেছে। আজকে মনে হচ্ছে শাসকরা রাজা আর আমরা প্রজা। এর জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। আমরা রাজতন্ত্রের জন্য নয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্যই মুক্তিযুদ্ধ করেছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে সরকারি লোকজন এখন পরিকল্পিতভাবে লেগেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে সব কূটনৈতিক রীতিনীতিকে উপেক্ষা করে যা-তা কথাবার্তা বলছে। আর তাদের বশংবদ যে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আছে তারা মিথ্যাচার করছে। এরা এত দায়িত্বজ্ঞানহীন। দায়িত্বশীলতার অভাব। যে দেশটাতে আমাদের সবচেয়ে বেশি গার্মেন্ট যায়, সেই দেশটার সঙ্গে আজকে তারা (সরকার) সমস্যা তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রী। তিনি ক্ষমতায় এসেই কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনা মওকুফ করেছেন। ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মওকুফ করেছেন। আর এখন ঋণের কারণে কৃষকের কোমরে দড়ি ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরা লুটেরা সরকার। এরা দেশের টাকা লুট করে বিদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করছেন। অথচ আজকে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। সারের দাম তিনগুণ বেড়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সব জায়গায় সিন্ডিকেট। আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেট করে টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি ব্যবস্থা কায়েম করছে যে, সব টাকা আজ ওদের পকেটে। আজ কৃষক ভাইদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার কৃষকদের যে ধান কিনে সেখানেও কমিশন। বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার ওপরও ওরা (কমিশন) বসায়। সত্যিকারের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছে না। আওয়ামী ব্যবসায়ীরা আজ ব্যবসা করছে। সাধারণ মানুষ চাকরি পায় না। বিশ লাখ টাকা ঘুস দিয়ে চাকরি পেতে হয়।

তিনি বলেন, আজকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর এলাকায় তার লোকরা নাকি ৬ হাজার কোটি টাকার বালু বিক্রি করে খেয়ে ফেলেছে। প্রতিটি সেক্টরে এই অবস্থা। দুর্নীতি করে টানেল, টার্মিনাল, উড়াল সেতু বানোনো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, নির্বাচন হবেই। তারা যেভাবে চাইবে সেভাবেই নির্বাচন হবে। তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন করতে চায়। খুব মজা পেয়েছে। ২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করে তারা মহা-আনন্দে আছে।

২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতা দখল করেছে। তারা ভেবেছেন এবারও বিএনপিকে দূরে রেখে তারা একতরফা নির্বাচন করবে। আজকে শুধু বিএনপি নয়; সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সবাই বলছে, একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।