ঢাকাসোমবার , ২৯ মে ২০২৩
  • অন্যান্য

দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হলেন এরদোগান

অনলাইন ডেস্ক
মে ২৯, ২০২৩ ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ । ২৯ জন
রিসেপ তাইয়েফ এরদোগান

তুরস্কের ঐতিহাসিক দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন রিসেপ তাইয়েফ এরদোগান। ৯৯.৮৫ শতাংশ ভোট গণনা হয়ে গেছে। এতে এরদোগান পেয়েছেন ৫২.১৬ শতাংশ ভোট। অপরদিকে তার হেরে যাওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারোগ্লু পেয়েছেন ৪৭.৮৪ শতাংশ ভোট। নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন প্রায় ৮৬ ভাগ ভোটার। এ খবর দিয়েছে টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

জয়ের পর এরদোগান টুইটারে বলেন, আমরা জনগণের ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ সম্মান করি। তাদের ইচ্ছাকে সুরক্ষা করার সময় এসেছে এখন। ভোটের ফল আসার পর নিজের শহর ইস্তাম্বুলে এক ভাষণে এরদোগান বলেন, আমরা আগামি পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা করব। সৃষ্টিকর্তা চাইলে আমরা আপনাদের আস্থার প্রতিদান দেব। বিজয়ের আনন্দে এরদোগানের সমর্থকরা তার ইস্তাম্বুলের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিচ্ছে।

সুপ্রিম ইলেকশন বোর্ডের (ওয়াইএসকে) চেয়ারম্যান আহমেত ইয়েনার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভোটে কোনো রকম অনিয়ম কিংবা জালিয়াতি হয় নি। নির্বাচন প্রক্রিয়া ছিল পুরোপুরি প্রভাবমুক্ত।

রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়ে বিকেল ৫টায় শেষ হয়েছে। এর আগে গত ১৪ই মে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট এরদোগান শতকরা ৪৯.৫ ভাগ ভোট পেয়েছিলেন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারোগ্লু পেয়েছিলেন ৪৪.৯% ভোট। নির্বাচনের তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিনান ওগান রান অফ নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে সমর্থন দিয়েছিলেন। প্রথম দফার নির্বাচনে ওগান ৫.২ ভাগ ভোট পান। প্রথম দফার নির্বাচনে কোনো প্রার্থী শতকরা ৫০ ভাগের বেশি ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় গড়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।

এরপরেও রান-অফে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ভাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত একে পার্টির এরদোগানেরই জয় হলো। এর ফলে গত দুই দশক ধরে তুরস্কের ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা এরদোগানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত হলো।

এরদোগানের বিজয়ের পর তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। এরদোগানকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি লিখেছেন, এরদোগানের জয় অবশ্যম্ভাবী ছিল। কারণ, তুরস্ককে এতদিন ধরে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি রাশিয়ার বন্ধু হিসেবেও এরদোগানের তুরস্ককে চিহ্নিত করেন পুতিন। ভবিষ্যতে রাশিয়া-তুরস্ক সম্পর্ক আরো গাঢ় হবে, এমন আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এরদোগানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলতসও। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, একসঙ্গে আরো অনেক কাজ করতে হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরো মজবুত করতে হবে। তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। বাইডেন টুইটে লিখেছেন, ন্যাটোর পার্টনার হিসেবে এরদোগানকে তিনি অভিনন্দন জানাচ্ছেন। বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্য এরদোগানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কিও টুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছেন এরদোগানকে। তিনি বলেন, তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করার লক্ষেই এগোবে ইউক্রেন। এরদোগানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা হবে। উল্লেখ্য যে, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে খাদ্যশস্যের চুক্তি তুরস্কের মধ্যস্থতাতেই হয়েছে। এর ফলে কৃষ্ণসাগর দিয়ে খাদ্যসামগ্রী বিশ্বের অন্যত্র পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া এবং ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা তুরস্কে বৈঠক করেছিলেন শান্তির লক্ষ্যে। যদিও তা সফল হয়নি।

এরদোগানকে অভিনন্দন জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সামরিক জোট ন্যাটোও। দুই সংগঠনই জানিয়েছে, তুরস্কের কাছে তারা আরো বড় ভূমিকা আশা করে। তারা চায়, এরদোগান আরো বেশি সহায়ক শক্তি হয়ে উঠুন।
ইসলামপন্থি তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট থেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন এরদোগান। তার রাজনৈতিক জীবনে যেমন বহু বিতর্ক রয়েছে তেমনি তিনি জনপ্রিয়তারও শীর্ষে ছিলেন দীর্ঘ সময় ধরে। তুরস্কে ও বিদেশে তাকে নিয়ে নানা ধরণের অবস্থান রয়েছে। তাকে নব্য-অটোমান ‘সুলতান’ হিসেবেও বিবেচনা করেন অনেকে। আবার পশ্চিমারা প্রায়ই এরদোগানের শাসনের সঙ্গে স্বৈরাচারের সম্পর্ক খুঁজে পায়।

রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই ইসলামপন্থিদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সচেতন ছিলেন তিনি। পাশাপাশি ন্যাটোতে তার নেতৃত্বে বড় ধরনের অবদান রাখছে তুরস্ক। ১৯৯৪ সালে ইস্তানবুলের মেয়র নির্বাচিত হন এরদোগান। জনসমক্ষে বিতর্কিত কবিতা আবৃত্তির দায়ে জেলেও যেতে হয় এরদোগানকে। চার মাস জেল খাটেন তিনি। জেল থেকে বেরিয়ে আস্তে আস্তে নিজের নতুন দল গঠন শুরু করেন এরদোগান। ২০০২ সালে তার দল একেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। আর ২০০৩ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছরগুলোতে এরদোগান দেশবাসীকে সামাজিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান, অর্থনীতির উন্নয়ন এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংস্কারের দিকে মনোযোগী হন। তবে কেউ কেউ এটাও মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজনীতিতে ধর্মের মিশ্রণ ঘটানোয় ভূমিকা রেখেছেন।

যদিও তুরস্কের সংবিধান দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে সমর্থন করে, তারপরও এরদোগান কট্টর ইসলামপন্থিদের মন জয়ের নানা চেষ্টা করেছেন। তুরস্কের এই শীর্ষনেতা একসময় বলেছিলেন যে, তার লক্ষ্যগুলোর একটি হচ্ছে এক ‘ধার্মিক প্রজন্ম’ গড়ে তোলা। এরদোগানের সমর্থকরা এই লক্ষ্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, ধর্মচর্চা করা মুসলমানরা তুরস্কে নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছিল।

২০১৬ সালের জুলাইয়ে এরদোগানের বিরুদ্ধে সে দেশের সেনাবাহিনীর এক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়। তবে সেই ঘটনায় দুই শতাধিক বেশি বেসামরিক নাগরিক এবং সেনা সদস্য নিহত হন। সেই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর এরদোগান আরো ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেন। ব্যর্থ সেই সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে অভিযান পরিচালনা করে তুর্কি কর্তৃপক্ষ। এতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা, স্কুল এবং গণমাধ্যম থেকে পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরদোগান সেই সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা এবং তার প্রাক্তন সঙ্গী ফেতুল্লাহ গুলেনের হাত রয়েছে বলে দাবি করেন।